ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ সেক্ষেত্রে বিরল! ৪০ বছরে একবারই এই ঘটনা ঘটেছিল বাংলার ইতিহাসে
ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এখন শীতকাল পড়েনি বাংলায়। কিন্তু হেমন্তের পারদ পুজোর পর থেকেই নামতে শুরু করায় বেশ অনুভূত হচ্ছে শীত। কেনই বা অনুভূত হবে না, ডিসেম্বর তো পড়ে গিয়েছে। আর এ সময়ে দু-একদিন দু-এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে।
ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এখন শীতকাল পড়েনি বাংলায়। কিন্তু হেমন্তের পারদ পুজোর পর থেকেই নামতে শুরু করায় বেশ অনুভূত হচ্ছে শীত। কেনই বা অনুভূত হবে না, ডিসেম্বর তো পড়ে গিয়েছে। আর এ সময়ে দু-একদিন দু-এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তা বলে ঘূর্ণিঝড়ের দেখা তেমন মেলেনি। এবার সেই বিরল অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকতে চলেছে বাংলা।
ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বাংলার ইতিহাসে বিরল
ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বাংলার ঝড়ের ইতিহাসে সত্যিই বিরল। অক্টোবর কেটে গেল আর সে বছর ঝড়ের সম্মুখীন হতে হয় না বাংলা বা ওড়িশাকে। কোনও কোনও বার নভেম্বরেও ঘূর্ণিঝড় হানা দিলেও, ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় সেভাবে হয়নি। একবিংশ শতাব্দীতে এর আগে দেখা যায়নি ডিসেম্বরে কোনও ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। তবে বিংশ শতাবাদীর আটের দশকে একবার হয়েছিল ঘূর্ণিঝড়, এমনই পাওয়া যায় বাংলার ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাসে।
৪০ বছর পর ডিসেম্বরে ফের ঘূর্ণিঝড়
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল ৪০ বছর আগে একবার। ১৯৮১ সালে ডিসেম্বরে সেই বিরল ঘটনা ঘটেছিল। তারপর ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ হানা দিতে চলছে ডিসেম্বরে। সেবার প্রথম বাংলার উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড়। আর এবারও আবহবিদরা মনে করছেন বাংলার উপকূলেই হানা দেবে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ। ৪০ বছর পর ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড়ের বিরল ঘটনা ঘটবে এবার।
১২৯ বছরে মাত্র একবারই এমন ঘটনা
ইতিহাসে আরও পাওয়া যায়, ১২৯ বছরে মাত্র একবারই এমন ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৮১ সালের ওই ঘূর্ণিঝড় ছাড়া এর আগে ডিসেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের কোনও দৃষ্টান্ত নেই। কোনও ঘূর্ণিঝড় আসেনি বাংলার উপকূলে। ১৯৮১-র পর ২০২১-এ ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ধেয়ে আসছে বঙ্গোপসাগর ধরে। অভিমুখ উত্তর-পশ্চিমে ওড়িশা উপকূলের দিকে। তবে তা গতিপথ বদল করে উত্তর-পূর্বে ধেয়ে আসবে বলে আবহবিদরা জানিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের ল্যান্ডফল সংশয়ে
এবার ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আলিপুর আবহাওয়া দফতরও ধন্দে। অধিকর্তারা বলতে পারেননি। কোন উপকূলে আছড়ে পড়বে এই ঝড়। জাওয়াদের অভিমুখ বদল হবে নিশ্চিত। কিন্তু তা কোন জায়গায় ল্যান্ডফল করবে, তা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। অধিকাংশেরই মতে, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ল্যান্ডফল নাও করতে পারে। উপকূল ধরে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে যেতে পারে ঘূর্ণিঝড়। এই যাওয়ার পথে জাওয়াদের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি হবে বাংলার উপকূলে। ঝোড়ো বাতাস পরিণত হবে ঝড়েও।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ সিভিয়ার সাইক্লোনে পরিণত
জাওয়াদ শক্তি বাড়াচ্ছে সমুদ্রে। ঘূর্ণিঝড় থেকে সিভিয়ার সাইক্লোনে পরিণত হচ্ছে। তা আছড়ে পড়লে ক্ষতির সম্ভাবনাও প্রবল। কিন্তু আছড়ে না পড়লে শুধু বৃষ্টি আর ৪০-৫০ কিলোমিটার ঝড় হতে পারে। তবে যদি বাংলার উপকূলে আছড়ে পড়ে তবে ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
থ্রি-বি ঘূর্ণিঝড়ের দাপট ১৯৮১-তে
কিন্তু ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল, তা ছিল মারাত্মক। ওই ঘূর্ণিঝড় 'থ্রি-বি' শ্রেণির ছিল বলে জানা গিয়েছে। ওই থ্রি-বি ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে এপার ও ওপার বাংলা মিলিয়ে মোট ২০০ জনের বেশি মৃত্যু হয়েছিল সেবার। বাংলা ও বাংলাদেশের উপকূল লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল ঝড়ের প্রকোপে।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ব্যতিক্রমী বাংলার ইতিহাসে
ডিসেম্বর মাসে ওই একটিবার ছাড়া কোনও ঘূর্ণিঝড়ের ঝক্কি পোহাতে হয়নি বাংলা বা ওড়িশাকে। জাওয়াদ যদি ওড়িশায় ল্যান্ডফল করে, তবে ওড়িশায় প্রথমবার এই ধরনের ঘটনা ঘটবে যে ডিসেম্বরে কোনও ঘূর্ণিঝড় হানা দিল। সাধারণত ডিসেম্বরে যদি কোনও ঘূর্ণিঝড় বাসা বাঁধে বঙ্গোপসাগরের বুকে, তা দক্ষিণ-পশ্চিম অভিমুকে ধেয়ে যায়। সাধারণত অন্ধ্রপ্রদেশ-তামিলনাড়ুর উপকূলেই হানা দেয় ঘূর্ণিঝড়। এবার ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ব্যতিক্রমী হতে চলেছে।