বিমান-সূর্যদের কেউ চাইছে না, 'মানে মানে কেটে পড়ুন', সরব জেলার সিপিএম নেতা-কর্মীরা
এবারের লোকসভা ভোটে এক লজ্জার নজির সৃষ্টি করেছে বামেরা।
এবারের লোকসভা ভোটে এক লজ্জার নজির সৃষ্টি করেছে বামেরা। পশ্চিমবঙ্গে এক সময় যে বামেরা সাড়ে তিন দশক শাসন করেছে, সেই জোট এবার রাজ্য থেকে একটি আসনও পায়নি। এই লজ্জা লুকোনোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না দলের নেতা-কর্মীরা। ২০১৪ লোকসভা ভোটে রাজ্যে মাত্র দুটি আসন পেয়েছিল বামেরা। এবার এই দুটি আসনও ধরে রাখতে না পেরে শূন্যতে নেমে গিয়েছে বামফ্রন্ট।
ভোট কমেছে হু-হু করে
রাজ্যজুড়ে বামেদের ভোট শতাংশ নেমে এসেছে মাত্র ৭-এ। কোনও জেলাতে, কোনও এলাকায় বামেরা দাপট দেখাতে পারেনি। যার ফলে শুধু তৃণমূল কংগ্রেস নয়, বিজেপি ও কংগ্রেসের কাছেও হারতে হয়েছে বামেদের। এই অবস্থায় সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে নেতারা রোষের মুখে পড়লেন।
রোষানলে শীর্ষ নেতৃত্ব
বিভিন্ন জেলার সিপিএম নেতৃত্ব রাজ্যের সিপিএম নেতাদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। এই ব্যর্থতার দায় তাঁদের ঘাড়ে চাপিয়েছেন। জেলার নেতাদের মূল বক্তব্য, রাজ্যের শীর্ষ সিপিএম নেতারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন। তাদের আর কেউ চাইছেন না। ফলে এবার মানে মানে তারা কেটে পড়ুন। এই নেতারা যতদিন দলের শীর্ষ পদে থাকবেন, দলের অবস্থা আরও বেশি খারাপ হবে। এভাবেই নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জেলার সিপিএম নেতারা।
দায় চাপল বিমান-সূর্যর ঘাড়ে
রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর দিকেই যে অভিযোগের তির তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সূর্যকান্ত চাপের মুখে পড়ে নিজে স্বীকার করে নিয়েছেন যে সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে এবার তাদের এত বড় হারের সম্মুখীন হতে হয়েছে। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোট থেকে দলের ভাঙ্গন শুরু হয়। সেবার এতটা খারাপ পরিস্থিতি ছিল না। ক্রমান্বয়ে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে এসে সংগঠনের কঙ্কালসার অবস্থাটা সকলের সামনে চলে এসেছে। একেবারে শূন্যতে নেমে গিয়েছে।
সকলেই আশঙ্কিত
এই অবস্থায় রাজ্যে দলের ভবিষ্যৎ কি হবে তাই নিয়ে বাম নেতারা সকলেই আশঙ্কিত। সিপিএমের নেতারা সকলেই হেরে গিয়েছেন। যে নেতারা এককালে বছরের পর বছর ভোটে জিতে গিয়েছেন বা বিধানসভার কাজ করেছেন, আজ তাঁরা জনবিচ্ছিন্ন। এই অবস্থা যেন জেলার নেতাকর্মীরা মানতে পারছেন না। যার ফলে তাঁদের দিকেই অভিযোগের তির উঠছে।
কংগ্রেসের সঙ্গে জোট কেন নয়
উত্তর ২৪ পরগনা, মেদিনীপুরের বাম নেতারা এর পাশাপাশি আরও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্বের দিকে। বিমান বসু সূর্যকান্ত মিশ্ররা কেন এবারের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস সঙ্গে জোট করলেন না? এই প্রশ্ন তাঁরা করেছেন। তাঁদের দাবি জোট বাঁধলে এতটা খারাপ ফল হতো না। পাশাপাশি সিপিএম যে দুটি কেন্দ্রে প্রার্থী দেয়নি সেখানেই কংগ্রেস জয় পেয়েছে। যা দেখে রাজ্য নেতৃত্বের নীতির সমালোচনা করেছেন জেলার নেতারা।
ভবিষ্যৎ দোলাচলে
এই অবস্থায় রাজ্য নেতৃত্বের শীর্ষে যাঁরা বছরের পর বছর ধরে গদি আঁকড়ে বসে আছেন তাঁরা এবার সরে যান। নবীন প্রজন্মকে জায়গা করে দিন। এই আওয়াজ উঠেছে। তবে এক্ষেত্রে নবীন প্রজন্মের মধ্যে থেকে ভালো কোন নেতৃত্ব উঠে এসে দলের হাল ধরবে সেটাও এখন সিপিএমের কাছে অন্যতম বড় প্রশ্ন। এই অবস্থায় কোন সমাধান সূত্র বের করতে পারে দলের নেতারা এখন সেদিকেই সকলের নজর।