শুভেন্দুর ‘ক্যারিশ্মা’ ম্নান করে নন্দীগ্রাম থেকেই 'সূর্যোদয়ে'র পরিকল্পনা সিপিএমের
বাংলার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একটি ছোট্ট জনপদ নন্দীগ্রাম থেকেই বিজয়যাত্রা শুরু হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের। সালটা ছিল ২০০৭।
বাংলার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একটি ছোট্ট জনপদ নন্দীগ্রাম থেকেই বিজয়যাত্রা শুরু হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের। সালটা ছিল ২০০৭। তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমি আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল নন্দীগ্রাম থেকেই দিদি বাংলায় ক্ষমতা দখলের যাত্রা শুরু করেছিলেন। সেই নন্দীগ্রামে এখন ফের শোনা যাচ্ছে ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
নন্দীগ্রামে ফের ‘লাল সালাম আর ইনকিলাব জিন্দাবাদ'
২০০৭ থেকে ২০১৯। মাঝের ১২ বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। তারপর ২০১৯-এর ৭ এপ্রিল যে নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী সিপিএমের সূর্যাস্ত ঘটিয়েছিলেন, সেখানেই ফের নীরবতা ভেঙে দিল ‘লাল সালাম আর ইনকিলাব জিন্দাবাদ' ধ্বনি। নন্দীগ্রামে আবার জেগে উঠল বাম-স্লোগান, জেগে উঠল লাল-উদ্দীপনা।
১২ বছর পরে দলীয় কার্যালয় চালু, তারপরই ফের উত্তরণ
কলকাতা থেকে প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার দূরে ওইদিন নন্দীগ্রামের গ্রামবাসীরা সিপিএম পতাকা হাতে নিয়ে মানবশৃঙ্খল গড়ে তুলেছিল। সুকুমার সেনগুপ্ত ভবনের আশেপাশের অঞ্চলগুলিকে হয়ে উঠেছিল লালে লাল। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের ১২ বছর পরে দলীয় কার্যালয়টি আবার চালু করতে সক্ষম হয়েছিল সিপিএম।
নন্দীগ্রাম থেকেই নতুন করে শুরুর সিদ্ধান্ত সিপিএমের
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের পর সিপিএম অফিস পুনরায় চালু করা অর্থাৎ সুকুমার সেনগুপ্ত ভবন পুনরায় খোলা ছিল সিপিএমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কারণ তৃণমূলের নন্দীগ্রাম আন্দোলন বাংলায় বামফ্রন্ট সরকারকে পতনের দিকে পরিচালিত করেছিল। তারপর থেকেই অপ্রাসঙ্গিক হতে শুরু করেছিল বামেরা। এরপর নন্দীগ্রাম থেকেই সিপিএম নতুন করে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তৃণমূল যখন গেরুয়া ব্রিগেডের মোকাবিলায় ব্যস্ত
অন্যদিকে, বিজেপির উত্থান তৃণমূলের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তৃণমূল যখন গেরুয়া ব্রিগেডের মোকাবিলায় ব্যস্ত ছিল, বামফ্রন্ট তখন জনগণের সঙ্গে ব্লক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাঁরা তখন স্লোগান তোলে আমরা ক্ষমতায় নেই, তবে আমরা সংকটে জনগণের সাথে আছি।
বাংলায় বামফ্রন্ট আবার জেগে উঠতে চাইছে
এইভাবেই গত কয়েক মাস ধরে, বাংলায় বামফ্রন্ট আবার জেগে উঠতে চাইছে। দলীয় ক্যাডাররা বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকছে। কমিউনিটি রান্নাঘর, নিখরচায় রেশন এবং সবজির বাজারের আয়োজনে, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এবং জামাকাপড়ের জন্য কিট বিতরণের মাধ্যমে দরিদ্র ও অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলনে
একইসঙ্গে তারা কেন্দ্রের এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতি যেমন জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, কয়লা ব্লকের বেসরকারিকরণ, রেলপথ, চাকরি হারানো, কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়া, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার কথায় রাজ্যজুড়ে সক্রিয়ভাবে সমাবেশ করছে। বামফ্রন্টের অনেক নিবেদিত কর্মী বাংলায় দলের পুনর্গঠনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন।
সরকারে না থেকেও মানুষের পাশে সিপিএম
সিপিএম তথা বামফ্রন্টের কথায়, "বিশ্বাস করুন, মানুষ তৃণমূল এবং বিজেপি-র প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়েছে। তারা বাংলার প্রতিটি কোণে দুর্নীতির বাসা বেঁধেছে। আম্ফান এবং করোনা লকডাউন চলাকালীন কেউ মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। রেশন লুঠ হয়েছে। মানুষের হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা পৌঁছয়নি।
রাজ্যের তৃণমূল এবং কেন্দ্রের বিজেপির ব্যর্থতা তুলে ধরতে
সিপিএমের দাবি, ভবিষ্যতে জনগণ কাকে সমর্থন করবে জানি না, তবে একটি বিষয় খুব স্পষ্ট যে মানুষ তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়ের প্রতিই ক্ষুব্ধ। গত কয়েকমাসে বামফ্রন্টের কর্মীরা, প্রধানত যুবকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। জনগণের সামনে রাজ্যের তৃণমূল এবং কেন্দ্রের বিজেপির ব্যর্থতা তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছে।