সিপিএম ব্যর্থতা দেখছে বুথস্তরে, ভরসার ‘মুখ’ কই বাংলায় প্রাসঙ্গিকতা ফেরাতে
২০১৯-এর পর থেকে নেমেই চলেছে সিপিএম। ২০২১-এ একেবারে বিধানসভা থেকে আউট বাংলার লাল পার্টি। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বিধানসভায় কোনও প্রতিনিধি নেই সিপিএমের।
২০১৯-এর পর থেকে নেমেই চলেছে সিপিএম। ২০২১-এ একেবারে বিধানসভা থেকে আউট বাংলার লাল পার্টি। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বিধানসভায় কোনও প্রতিনিধি নেই সিপিএমের। তারপর উপনির্বাচন হোক বা পুরসভা নির্বাচন, সেখানে একা লড়াই করে ভোটব্যাঙ্ক ফিরে পাওয়ার লড়াই চালাচ্ছে তারা। কিন্তু এখন হালে পানি পায়নি সিপিএম।
কিন্তু দুর্বলতা কোথায়, কার দোষে এই পতন বাংলার ৩৪ বছরের প্রধান শাসক দলের? একের পর এক পর্যালোচনা করেও রোগ ধরা পড়েনি। এবারও পুরসভা ভোটের পর পর্যালোচনা বসেছিল। কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই রোগ ধরতে ব্যর্থ সিপিএম। তারা পুরভোটের খারাপ ফলের জন্য সেই নিচুতলার ঘাড়ে দোষ চাপিয়েই ক্ষান্ত।
সম্প্রতি রাজ্যে চার পুরসভার ভোট হয়ে গেল। কলকাতা পুরসভা ভোটের পর চার পুরসভার ভোটেও সিপিএম দাঁত ফোটাতে পারেনি। তবে তারা ২০২১-এর বিধানসভার শোচনীয় অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। অন্তত দূরবর্তী দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে। ফের সিপিএমের দিকে ঝুঁকেছে সামান্য হলেও গেরুয়ায় চলে যাওয়া ভোটাররা।
রিপোর্টে সেই পরিসংখ্যানও উল্লেখ করা হয়েছে। সিপিএমের ভোট ৬-৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৭ শতাংশ হয়েছে। আর বিজেপি থেকেই সেই ভোট ফিরেছে বলে দাবি সিপিএমে নেতৃত্বের। তবে সবটা ফেরেনি সিপিএমের দিকে। গেরুয়া শিবিরে চলে যাওয়া বাম-ভোট আবার বেশ কিছু অংশ তৃণমূলের দিকে ভিড়েছে।
তবে নির্বাচনও সুষ্ঠু ও অবাধ হয়নি। বহু ক্ষেত্রেই ভোট সন্ত্রাস হয়েছে। তা না হলে তাঁদের প্রাপ্ত ভোট শতাংশ আরও একটু উন্নত হত বলে দাবি সিপিএমের। সেইসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব স্বীকার করে নিয়েছে, তাঁদের দুর্বলতাও রয়েছে। বুথস্তরে তাঁরা লড়াই দিতে পারেনি। কোনও বুখ কমিটি নেই। তার খেসারত দিতে হয়েছে বহু ক্ষেত্রে।
শুধু বুথ কমিটির দোহাই দিয়ে অবশ্য সব দায় ঝেড়ে ফেলতে পারেন না আলিমুদ্দিনের ভোট ম্যানেজাররা। শুধু নিচতুলার উপর দোষ চাপিয়েই ক্ষান্ত হতে পারেন না তাঁরা। দায় তাঁদেরও রয়েছে। তাঁরা বুথ কমিটি গড়ে তোলার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেননি। লড়াই দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করাটাও দলীয় নেতৃত্বের উপর বর্তায়। শীর্ষ নেতৃত্ব নিচুতলার নেতাদের ভরসা জোগাতে ব্যর্থ হয়েছে, সেই সমালোচনাও অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে শুনতে হয়েছে।
এখন সামনে ১০৮ পুরসভা নির্বাচন। রাজ্যে পুরভোটের এই বাজারে সিপিএম কতখানি বৃহত্তর শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। কলকাতাসহ পাঁচ পুরনিগমে এককভাবে লড়ে ফিরে আসার যে আভাস দিয়েছে, জেলায় জেলায় তা জারি রাখতে পারে কি না সিপিএম, তা দেখার। পাশাপাশি দেখার আলিমুদ্দিনের কর্তারা অক্সিজেন পেয়ে কতখানি ভরসা জোগাতে পারে নিচতুলার নেতৃত্বকে। আবারও তারা বিজেপিকে বিট করে বাংলায় প্রাসঙ্গিক হতে পারে কি না, সেটাই দেখার।