কংগ্রেসকে নিয়ে বিভাজন সিপিএমে, পলিটব্যুরোর বৈঠকে ‘পার্টি-লাইন’ নির্ধারণে তুলকালাম
কংগ্রেসকে নিয়ে দলের লাইন ঠিক করতেই বেশি তৎপরতা দেখা যাচ্ছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে। আর তা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে পলিটব্যুরো নেতাদের।
কংগ্রেস নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত সিপিএম। এখন দলের নীতি নির্ধারণের থেকে কংগ্রেসকে নিয়ে দলের লাইন ঠিক করতেই বেশি তৎপরতা দেখা যাচ্ছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে। আর তা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে পলিটব্যুরো নেতাদের। কংগ্রেস প্রশ্নে যেমন বিভক্ত কারাত ও ইয়েচুরি শিবির, তেমনই বিভাজন প্রকট বঙ্গ সিপিএমেও।
তাহলে আসন্ন নির্বাচনগুলিতে কী হবে সিপিএমের চলার পথ? বিশেষ করে লোকসভায় কোন পথে চলবে সিপিএম? তা নির্ধারণ করতে গিয়ে দিল্লি পলিটব্যুরোর বৈঠক তুলকালাম পর্যায়ে পৌঁছে গেল। কিন্তু নির্ধারিত হল না কোন লাইনে চলবে সিপিএম। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে পরিষ্কার ঐক্যমত্য দূর অস্ত। পলিটব্যুরো তাই বাধ্য হয়ে পুরো বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কোর্টে ঠেলে দিচ্ছে।
সিপিএমের পলিটব্যুরো বৈঠক, আর সেখানে প্রধান আলোচ্য বিষয় হল কংগ্রেস। বিজেপির বিরোধিতায় তাঁরা কংগ্রেসের হাত ধরে চলবে কি না, তা নিয়েই প্রকাশ্যে অন্তর্কলহ। অবশ্য শুধু বিজেপিই নয়, রাজ্যে তৃণমূলের বিরোধিতায় তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে সখ্যতা বজায় রাখবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। দু-টি প্রশ্নরই উত্তর অমিল থাকার সম্ভাবনা পলিটব্যুরোর বৈঠকে।
এদিন সীতারাম ইয়েচুরির বঙ্গ ব্রিগেডের অনুগামীরা বলেন, 'বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সিপিএমের উচিত বিজেপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে সমদূরত্ব বজায় রেখে চলার পার্টি লাইন থেকে সরে আসা। বরং শুধু বিজেপিকেই টার্গেট করা বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হবে বলে অভিমত। বিজেপিকে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মনে করে চলাই উচিত সিপিএমের।'
কিন্তু কারাত শিবির তা সমূলে নাকচ করে বার্তা দেন বঙ্গ ব্রিগেডের সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু, মহম্মদ সেলিমদের। কারাটপন্থীরা বলেন, 'সিপিএম বরাবর ভোট রাজনীতির থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছে দলের নীতিকেই। সেই কারণেই কংগ্রেসকে সমর্থন করা সম্ভব নয়। সেই কারণেই সীতারাম ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় যেতে দেওয়া হয়নি। আজও সেই পথ থেকে সরে আসার কোনও যুক্তি নেই। দল বিজেপি ও কংগ্রেস থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখেই চলবে। কোনও মতেই পার্টি লাইন লঙ্ঘন বরদাস্ত করা হবে না।'
কারাট শিবিরের এহেন যুক্তি মেনে নিতে পারেনি বঙ্গ ব্রিগেড। তারা প্রকাশ্যেই প্রকাশ কারাটের বিরোধিতা করে। তখন প্রকাশ কারাট নিজে বলেন, 'কংগ্রেসের নাম না করে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে হাত মেলানোও যাবে না। কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী সমাঝোতাও গড়া যাবে না। বৃহত্তর মঞ্চ গড়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে লড়াই করাই শ্রেয় তাঁদের পক্ষে।'
এরপরই বঙ্গ ব্রিগেড জানিয়ে দেয় নির্বাচনী সমাঝোতা রাজ্যের ব্যাপার। সেই বিষয়কে সবার আগে মান্যতা দিতে হবে। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে নির্বাচনী জোটের রাস্তা খোলা রাখতে হবে। তা না হলে দল অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়তে বাধ্য। দলের অস্তিত্বই যদি প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়, তখন নীতি থাকবে কোথায়, সেই প্রশ্নও ওঠে পলিটব্যুরোর বৈঠকে। তা নিয়েই উত্তাল হয়ে ওঠে পলিটব্যুরো।