কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া ছিন্ন করে কি একলা চলো নীতি! পুরভোটেই পরীক্ষার পথে সিপিএম
জাতীয় স্তরে সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে চলতেই স্বাচ্ছন্দ্য, কিন্তু বাংলায় তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে চলবে কি না, তা নিয়ে এখনও সংশয়ে।
সিপিএম এখনও ভাবছে তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের রাস্তায় যাবে নাকি একলা চলো নীতি নিয়েই এগোবে রাজ্যে। জাতীয় স্তরে সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে চলতেই স্বাচ্ছন্দ্য, কিন্তু বাংলায় তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে চলবে কি না, তা নিয়ে এখনও সংশয়ে। সিপিএমের একটা বড় অংশ একলা চলার পক্ষেই। কেন তাঁরা একলা চলার পক্ষে, তার যুক্তিও দিয়েছেন।
কোন পথে হাঁটবে সিপিএম
সিপিএম ২০১৬ সাল থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতা করে চলছে। কিন্তু আদতে দলের কোনও লাভ হয়নি তাতে। ধীরে ধীরে অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে ৩৪ বছরের শাসক দল। তাই এখনও তাঁরা ধন্দে পথ বাছতে গিয়ে। কোন পথে হাঁটবে সিপিএম। এই অবস্থায় কি এক সময়ের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের হাত ধরেই হাঁটবে, নাকি তাঁরা একলা চলবে।
আসন্ন পুরভোট থেকেই পরীক্ষা শুরু সিপিএমের
সিপিএমের যুক্তি, সাড়ে পাঁচ বছর ধরে কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেও কোনও লাভ হয়নি। তাই এবার বামেরা ফের এককভাবে লড়াইয়ের পরীক্ষায় যেতে পারে। আসন্ন পুরভোট থেকেই এই পরীক্ষা শুরু করতে পারে বামেরা। বাম-শরিকরা অনেকেই চাইছে এককভাবে লড়তে। সিপিএম তাই সেই পথে ফিরতে পারে। সম্প্রতি উপনির্বাচনে এককভাবে লড়ে একটু আশার আলো দেখতে পেয়েছেন রাজ্যের কমিউনিস্টরা।
ফের একলা চলোর পথে সিপিএম সাফল্যের খোঁজে
সিপিএম বা বামেদের মূল লড়াই তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে। এই মুহূর্তে সেই লড়াইয়ে কংগ্রেস নেই রাজ্যে। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস রয়েছে। সেই ইতিহাস বারবার অন্তরায় হয়েছে কংগ্রেস-সিপিএম জোটে। তাই এবার ফের একলা চলোর পথে সাফল্যের দেখা মেলে কি না পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথে হাঁটতে পারে সিপিএম।
সম্মেলনকে পাখির চোখ করেছে সিপিএম
মঙ্গলবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব পুরভোটে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিতে চাইছে জেলা নেতৃত্বের মতকে। দলের সম্মেলন প্রক্রিয়া থেকেই এই মতামত তুলে আনতে বদ্ধপরিকর সিপিএম। শাখা ও এরিয়া কমিটির সম্মেলনকে তাই পাখির চোখ করেছে সিপিএম।
কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধিতায় জেলা
সূত্রের খবর, জেলার নেতারাই সবথেকে বেশি সরব কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধিতায়। তাঁদের যুক্তি, ২০১৬ সালে বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতায় সবথেকে বেশি লাভবান হয়েছিল কংগ্রেস। বামেদের ভোটে কংগ্রেসে গেলেও, কংগ্রেসের ভোট সব বামেদের দিকে আসেনি। তার ফলে বামেরা অনেক কম আসন পায়। কংগ্রেস বেশি আসন পেয়ে বিরোধী দলের মর্যাদা পায়।
পার্টি কংগ্রেসের আগে লাইন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নয়
আর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছেড়ে একলা চলার পক্ষে জেলার নেতারা শান্তিপুর উপনির্বাচনের প্রসঙ্গে তুলে ধরেছে। এই কেন্দ্রে ৬ মাস আগে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে যে ভোট পেয়েছিল, তার থেকে একলা লড়ে অনেক বেটার রেজাল্ট করেছে সিপিএম। তাই এই পথেই অক্সিজেন পাওয়ার চেষ্টা করা ভালো বলে মনে করছে নেতৃত্ব। তবে সূর্যকান্ত মিশ্র সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পার্টি কংগ্রেসের আগে লাইন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
জেলার মতকে গুরুত্ব রাজ্যে নেতৃত্বের, কিন্তু...
তবে রাজ্য নেতৃত্ব জেলার মতকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে। বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব ধরনের শক্তিকে একজোট করার রাজনৈতিক লক্ষ্য থেকে দলের সরে আসার প্রশ্ন নেই। তবে পুরভোটে স্থানীয় পরিস্থিতির উপর অনের সমীকরণ নির্ভর করে। দলের মূল রাজনৈতিক লক্ষ্য অক্ষুণ্ণ রেখেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। জেলা নেতৃত্বকে সেই বার্তাও দিয়ে রেখেছেন সিপএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেছেন, তাঁর এই প্রস্তাবও ভেবে দেখুক জেলা নেতৃত্ব।
রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠকে নয়া প্রস্তাব সিপিএমের
সিপিএম বলতে চাইছে, বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে যেখানে কংগ্রেস বা অন্য কোনও দল ভালো লড়াই দিতে পারবে, সেখানে জোর করে আমরা প্রার্থী দিয়ে সেই লড়াইকে লঘু করে দেব না। বরং তাদের সাহায্য করে তৃণমূল ও বিজেপিকে হারানোর চেষ্টা করব। জেলায় জেলায় বামফ্রন্ট আলোচনা করে ঠিক করবে তারা কোথায় লড়তে চায়। সেই সব ওয়ার্ডকে চিহ্নিত করে তাঁরা ভোট কৌশল স্থির করবে। রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠকে ১৫ নভেম্বর তা নিয়ে আলোচনা করতে চাইছে বড় শরিক সিপিএম। ১৯ ডিসেম্বর হাওড়া ও কলকাতায় পুরভোট ধরে নিয়েই আলোচনা করবে সিপিএম নেতৃত্ব।