For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

নেতা থেকে এখন সাধারণ কর্মী! দলকে 'পথে' আনতে বিস্ফোরক সুশান্ত ঘোষ

স্তাবকতা ভেদ করে সঠিক আপনজনকে চিহ্নিত করে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কলম ধরেছেন সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ। সেখানে তিনি বলছেন, তিনি এখন দলের একজন সাধারণ কর্মী মাত্র।

  • |
Google Oneindia Bengali News

স্তাবকতা ভেদ করে সঠিক আপনজনকে চিহ্নিত করে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কলম ধরেছেন সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ। সেখানে তিনি বলছেন, তিনি এখন দলের একজন সাধারণ কর্মী মাত্র।

নেতা থেকে এখন সাধারণ কর্মী! দলকে পথে আনতে বিস্ফোরক সুশান্ত ঘোষ

সুশান্ত ঘোষ লিখেছেন, পালাবদলের পর ২০১১ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আজ পর্যন্ত তিনি জেলার (পশ্চিম মেদিনীপুর) বাইরে। নিজের পরিবার, পরিজন থেকে দূরে, নিজের এলাকা এমনকী জেলারও বাইরে। এর মূল কারণ, তার বিরুদ্ধে মামলা এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা। ২০১১ সালে পালা বদলের পর তার মতো অনেক বামপন্থী কর্মী-সমর্থক এলাকা ছাড়া হয়েছেন, লাঞ্ছিত-নির্যাতিত হয়েছেন। ছ'মাস, এক বছর পর তাঁরা আবার নিজের এলাকায় ফিরতে পেরেছেন। কিন্তু তার আর ফেরা হয়নি। তার জেলার বাইরে থাকার মেয়াদের প্রায় সাত বছর অতিক্রান্ত।

যদিও তাকে নানাভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যাঁরা তাকে ভালোবাসেন তাঁদের বিভ্রান্ত করার প্রয়াস হয়েছে। কে বা কারা তা করেছেন, তা তিনি বলতে পারবেন না বলেই জানিয়েছেন। বিরুদ্ধ-পক্ষ মানসিকভাবে আমাকে দুর্বল করার জন্য একাজ করে থাকতে পারে। আবার তিনি যে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তার অভ্যন্তরেই যাঁরা তাকে পছন্দ করেন না, তাঁরাও এই প্রয়াসে যুক্ত থাকতে পারেন।

সংগঠনের একজন কর্মী হয়ে ২০১১ সালে কারাবাসে চলে যাওয়ার পরে, ২০১২ সালে ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পান তিনি। দীর্ঘ ১৮১ দিনের জেল জীবনের পর, ২০১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি (দিনটি আজও তাঁর মনে আছে,মঙ্গলবার ) আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার দিনটি, তাঁর জীবনের স্মরণীয় দিনগুলির অন্যতম। সেদিন আলিপুর জেলের বাইরে সকাল থেকে ছিলেন বহু মানুষ, বিশেষ করে ছাত্র-যুবদের উপস্থিতি এবং তাঁদের উচ্ছ্বাস তিনি জেলের ভিতরে বসেই উপলব্ধি করতে পারছিলেন বলে জানিয়েছেন সুশান্ত ঘোষ। তিনি বলেছেন, বাইরের উচ্ছ্বাসের সেই ঢেউ পাড়ি দিচ্ছিল জেলখানার ভিতরেও।

সুশান্ত ঘোষ জানিয়েছেন, ২০১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৬ র মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত তাঁর ঠিকানা ছিল এমএলএ হস্টেলের রুম নং ৫১। সেখান থেকেই এলাকার মানুষ, পার্টির সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষা ও বিধায়ক হিসাবে কাজকর্ম চলতে থাকে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেদিন বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হয়, তারপরই বিধায়ক আবাস ছেড়ে বর্তমান ঠিকানায় চলে যান তিনি। যদিও জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আইনানুগ কারণে নিজের জেলায় প্রবেশাধিকার না থাকলেও, রাজ্যের বেশির ভাগ জেলাতেই ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪, এই তিন বছর গণসংঠন ও পার্টির প্রকাশ্য কর্মসূচিতে যোগদান করেছেন বলে জানিয়েছেন। সেখানেও মানুষের ভালবাসা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বলে জানিয়েছেন সুশান্ত ঘোষ। তখন মনে হয়েছে, বিরোধীরা কুৎসা, অপপ্রচার, সমালোচনা যতই করুক, মানুষ তাঁকে ভুল বোঝেননি। যা করেছিলেন সব রাজনীতি ও সংগঠনের জন্য। ব্যক্তির জন্য বা ব্যক্তির ইচ্ছায় নয়।

২০১৫ সালের প্রথম দিকে, আদালতের বিশেষ অনুমতিতে সুশান্ত ঘোষ পার্টির জেলা (পশ্চিম মেদিনীপুর) সম্মেলনে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন।
পরবর্তীতে রাজ্য সম্মেলন ও পার্টি কংগ্রেসেও অংশ নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু পরে জেলা ও রাজ্য সংগঠনে রদবদলের পর দেখেন, জেলায় যাওয়ার সুযোগ তো নেইই, অন্যত্রও পার্টি কর্মসূচিতে যাওয়াও রাস্তাও সম্পূর্ণ বন্ধ। কোনও এক অদৃশ্য কারণে সংগঠনে তখন থেকে এখনও পর্যন্ত তিনি ব্রাত্য। কেবলমাত্র কলকাতায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি, মিছিল-সভা এগুলোতেই কর্মী হিসাবে উপস্থিত থাকেন। কিন্তু সেখানে গিয়েও অজস্র কর্মীর প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে তিনি অসহায় হয়ে যান বলে জানিয়েছেন একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা সুশান্ত ঘোষ। কেননা যখন কর্মীরা বলেন, কমরেড সংকটের এই মুহূর্তে কেন আমরা তাকে পান না? বিষয়টি হালকা করতে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে এসেছেন, তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে। পাল্টা প্রশ্ন আসে, অতীতের ভূমিকায় কেন তাকে পাওয়া যায় না? কর্মীরা বলেন, এলাকায় দলীয় কর্মসূচির জন্য তাঁর(সুশান্ত ঘোষ) নাম সুপারিশ করলেও, বর্তমান রাজ্য নেতৃত্ব চুপ করে থাকেন। কোনও সদর্থক উত্তর কর্মীরা পান না বলে জানিয়েছেন সুশান্ত ঘোষ। তিনিও দলীয় শৃঙ্খল মানা কর্মী হিসেবেই তাঁদের সরাসরি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। কেননা যদি সঠিক উত্তর দেন, সেটা সংগঠনের পক্ষে সুখকর হবে না বলেও মনে করছেন সুশান্ত ঘোষ । তাই প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে হয় কখনও শারীরিক, কখনও পারিবারিক কিংবা আইনি সমস্যার যুক্তি দেখিয়ে। নিজের কাছে প্রশ্ন করে নিজেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন, এ রকমটা কি কাম্য ছিল?

সুশান্ত ঘোষ বলেছেন, যে কথা রাজনীতির শুরুতে শিখেছিলেন, বন্ধুর চেয়ে পার্টি বড়। এখন কি বুকে হাতে দিয়ে তিনি বা তাঁরা, যাঁরা নানাভাবে পার্টিতে আক্রান্ত, তাঁরা একথা বলতে পারবেন! পুরনো মামলায় জর্জরিত, নতুন মামলার বোঝা, আর্থিক সংকট, পারিবারিক সমস্যা, কোনও কিছুই আজ আর সংগঠনের মনে দাগ কাটে না। সবই যেন ব্যক্তিগত বিষয়। এ নিয়ে সঠিক জায়গায় বলার চেষ্টা কম করেননি। কিন্তু নিট ফল 'শূন্য' বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এখন মনে করেন, তাঁর আর খোঁজ নেওয়ারও প্রয়োজন নেই। এক বুক যন্ত্রণা নিয়েই তাঁর মনে হয়, এর থেকে জেল জীবন ভাল ছিল। অনিশ্চয়তার মাঝেও সেখানে এক ধরনের নিশ্চয়তা ছিল।
এখন তাঁর দশা কার্যত গৃহহীন বলে মনে করছেন সুশান্ত ঘোষ।

তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে একাধিক ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন সুশান্ত ঘোষ। এই বছরের (২০১৮) মার্চ মাসেও রাজ্য সম্মেলনে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে মানসিকভাবে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দু'জন সদস্যের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। পরে তাঁদের মধ্যে এক সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য একদিন তাঁর বর্তমান ঠিকানায় গিয়েছিলেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন গুরু-গম্ভীর বিষয়ে আলোচনাও হয় তাঁদের মধ্যে। যাওয়ার সময় ওই নেতা অনেক ভাল ভাল কথা বলে যান তাঁকে। তারপর সব ভুলে যান বলে অনুযোগ করেছেন সুশান্ত ঘোষ। কেননা পরবর্তী তিন মাসে তাঁর একটি শব্দও কানে আসেনি।

এর মধ্যেই একদিন হঠাৎ একটি ঘটনা ঘটল। কলকাতা বিমানবন্দরের একজন অস্থায়ী কর্মচারী, দমদম এলাকায় তাঁর বাড়ি। হঠাৎ করেই তাঁর সঙ্গে দেখা বিমানবন্দরে। সুশান্ত ঘোষের হাত চেপে বলেন, তাঁকে চিনতে পারছেন কিনা! তিনি নিজেকে শম্ভু বলে পরিচয় দেন। বলেন, আগের দিনই তাঁকে( সুশান্ত ঘোষ) নিয়ে কথা বলছিলেন। আর পরের দিনই তাঁর (সুশান্ত ঘোষ) সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। সুশান্ত ঘোষ বলেন, অনেকে পার্টি ছেড়ে গেলেও এই শম্ভু আজও পার্টি সদস্য আছে। সেই ব্যক্তিই বললেন, দাদা কিছু করুন। পার্টিটা চোখের সামনে শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে এক নিশ্বাসে দিল্লি থেকে রাজ্য পর্যন্ত কিছু পার্টি নেতার নাম উচ্চারণ করে যান। শেষে বললেন, দাদা মরে গেলেও পার্টি ছেড়ে যাব না। তিনি(সুশান্ত ঘোষ) শুধু তাদের পাশে দাঁড়ান।

তবে এই ঘটনা তাঁকে অবাক করেছে বলে জানিয়েছেন সুশান্ত ঘোষ। মহেশতলার উপ-নির্বাচনের পর সিপিএম-এর তরফে কোনও সদর্থক বক্তব্য প্রকাশিত হয়নি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। তিনি বলছেন, যখন পশ্চিমবঙ্গে প্রতি মুহূর্তে সিপিএম ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে, নির্বাচনের মাপকাঠিতে প্রতিদিন কোণঠাসা হচ্ছে সিপিএম, যখন এই কোণঠাসা অবস্থায় তাদের বক্তব্য কী হবে সেই ভাষাও খুঁজে পাচ্ছেন না, সেই সময় এই ঘটনা তাঁকে যথেষ্ট নাড়া দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সুশান্ত ঘোষ।

সুশান্ত ঘোষ বলেছেন, যাবতীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে, বামপন্থী আদর্শ মেনে বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ, স্তাবকতা ভেদ করে সঠিক আপনজনকে চিহ্নিত করে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই তিনি কলম ধরেছেন। তাঁর আশা, মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সিপিএম আবার একদিন মাথা তুলে আবার দাঁড়াতে পারবে।

( সুশান্ত ঘোষের সঙ্গে কথা বলে, তাঁর লেখার নির্বাচিত অংশ প্রকাশ করা হয়েছে)

English summary
CPM leader of West Midnapur Susanta Ghosh writes on his present situation
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X