মমতা আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত! ১৭ হাজার চাকরি নিয়ে পাল্টা দিলেন ‘বিকাশবাবু’
মমতা আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত! ১৭ হাজার চাকরি নিয়ে পাল্টা দিলেন ‘বিকাশবাবু’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বকতৃতা চলাকালীন কিছু চাকরিপ্রার্থী প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে চেয়েছিলেন। তাঁদের থামিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন আমার কাছে ১৭ হাজার চাকরি প্রস্তুত আছে। যাঁরা মামলা করেছেন বিকাশবাবুদের বলুন অনুমতি নিয়ে আসতে। তার পাল্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দুর্নীতিগ্রস্ত খোঁটা দিলেন সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ভাষণের পর সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ১৭ হাজার পদে তিনি বেআইনি নিয়োগ করেছেন। যাঁরা যোগ্য নন, তাঁদের নিয়োগপত্র দিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে। যোগ্য প্রার্থীরা আদালতে গিয়েছেন। আমি আদালতে যাইনি। তাঁদের হয়ে সওয়াল করেছি আমি। সওয়াল করাটা আমার নৈতিক দায়। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে লোক পাঠালে আমি তাঁদের নিয়েই নবান্ন অভিযান করব।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত নেত্রী বলে কটাক্ষ করে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচা্র্য বলেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গোটা প্রশাসনটাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলেছেন। সেজন্যই তাঁর বিরুদ্ধে আমাদের লড়তেই হবে। তিনি যতই দুঃখ পান, যতই কান্নাকাটি করুন, এই ১৭ হাজার দুর্নীতিগ্রস্তরই চাকরি যাবে। যাঁরা চাকরি দিয়েছেন তাঁদের সাজা হবে। এই সাজা প্রাপ্তি থেকে তিনিও বাদ যাবেন না।
বিকাশবাবু বলেন, এই ১৭ হাজার চাকরি যদি দিতে হয়, উনি নবান্ন থেকে সরে যান। আমরা গিয়ে নিয়ম মেনে মেধার ভিত্তিতে ১৭ হাজারকে চাকরি দেব। যে পরিমা শূন্যস্থান ঘোষণা করা হয়েছে নোটিশে, তা আরও বেশি। তিনি সেইসব পদে নিয়োগ না করে ভয় দেখাচ্ছেন। চাকরিপ্রার্থীদের বলছেন, তোমরা মামলা প্রত্যাহার করে নাও, বিকাশবাবুর বাড়ি যাও। আমার কোনও আপত্তি নেই, আপনারা আসুন। আপনাদের নিয়েই আমি নবান্ন অভিযান করব। নবান্নের ১৪ তলা থেকে ওনাকে সরিয়ে দিয়ে যুক্তিসঙ্গতভাবে ১৭ হাজার চাকরির বন্দোবস্ত করব।
আসানসোলের বিজয় সমাবেশ থেকে এদিন চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রতিটি সভায় এসে পরিকল্পিতভাবে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সিপিএম ও বিজেপি পরিকল্পনা করে এসব করছে। তিনি বলেন, আমি গতকালই কথা বলেছি চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে। পুরো বিষয়টিই কোর্টের অধীনে চলে গিয়েছে। আমার হাতে কিছু নেই।
মমতা বলেন, কোর্ট অর্ডার দিলেই আপনারা চাকরি পাবেন। আপনাদের জন্য আমার ১৭ হাজার চাকরি প্রস্তুত আছে। কিন্তু আমার হাত-পা বাঁধা। আমি নিয়োগ করতে পারছি না। এমনকী আমি আরও পাঁচ হাজার চাকরির বন্দোবস্ত করেছি, সেটাও দিতে পারছি না। আপনারা যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁরা বিকাশবাবুকে বলুন, যেভাবে নিয়োগ বন্ধ করিয়েছেন, পুনরায় নিয়োগের অনুমতি আনতে। কোর্ট বললেই আমি চাকরির নিয়োগপত্র দিয়ে দেব। কিন্তু কোর্ট না বললে আমি কী করব!
বাংলায় শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। পুরনো নিয়োগে দুর্নীতিও সাংঘাতিক রূপ নিয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তে জেরবার রাজ্য। আর এক বছরেরও বেশি সময়ে ধরে নতুন নিয়োগ নিয়ে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া চাকরিপ্রার্থীরা অবস্থান বিক্ষোভ প্রদর্শন করে চলেছেন। তাদেরই কতিপয় এদিন আসানসোলে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় প্রতিবাদী হন।
আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন নিয়োগ নিয়ে ঘুরিয়ে চাকরি প্রার্থীদের দিকেই তির ছুড়ে দিলে পরোক্ষে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আমার হাতে প্রস্তুত রয়েছে ১৭ হাজার চাকরি। কিন্তু আমি নিয়োগ করব কীভাবে? আদালত অনুমতি না দিলে নিয়োগ করা তো সম্ভব নয়। আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। আমি তা মেনে চলিও।
ছবি লাগাতে লাগাতে 'ছবি’ হয়ে যাবে বিজেপি! বাংলার বাড়ি প্রসঙ্গে একহাত মমতার
এরপর তিনি নিশানা করেন সিপিএম নেতা তথা বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে। তিনি বলেন, বিকাশবাবু একের পর এক মামলা করেছেন। আর তার ফলে আদালত নিয়োগ বন্ধ করে দিচ্ছে। ওনার তো অর্থের কোনও অভাব নেই। কিন্তু ভুগতে হচ্ছে আপনাদের। আপনারা বিকাশবাবুদের গিয়ে বলুন, আপনারা চাকরি আটকেছেন আপনাদেরই চাকরিতে নিয়োগের অনুমতি আনতে হবে কোর্ট থেকে। আর কোর্ট অনুমতি দিলেই নিয়োগ হয়ে যাবে। এই অবস্থায় মামলাকারীদের উদ্দেশ্যেও তিনি বলেন, আপনারা মামলা তুলে নিন কিংবা অনুমতি নিয়ে আসুন, আমি চাকরি দিতে প্রস্তুত।