সিপিএমের ‘শেষপুর’ হতে দেয়নি অধিকারীরাই! আজও ‘লাল’-গড়ই আছে মহিষদা
কেশপুর ছিল এক সময়ে সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। সেই কেশপুর এখন তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। কিন্তু কেশপুরকে ‘শেষপুর’ হতে দেয়নি থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম মহিষদা?
কেশপুর ছিল এক সময়ে সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। সেই কেশপুর এখন তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। কিন্তু কেশপুরকে 'শেষপুর' হতে দেয়নি থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম মহিষদা? গ্রামে কান পাতলেই শোনা যায়, সিপিএম এখনও অধিকাংশ মানুষই ভোট দেওয়ার 'সুযোগ' পেলে লালপার্টিকেই তা দেন। এবারও তার অন্যথা হবে না বলেই আশাবাদী বামপন্থীরা।
দেবের জেঠু শক্তিপদ অধিকারী ছিলেন কট্টর সিপিএম কর্মী। সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। প্রায় ৪৮ বছর ধরে বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যদিও গত বছর তাঁর মৃত্যু হয়। দেবের সমর্থনে প্রচারে নামা জেঠুর পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, আমার শুভেচ্ছাও ওর সঙ্গে আছে। এই গ্রামেই সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ের বাড়ি। সিপিএমের দাপুটে নেতা হীরালাল ভুঁইয়ারও বাড়িও ছিল এই গ্রামে।
গতবারের মতো এবারও জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত দেব। তৃণমূল কংগ্রেসের টার্গেট ঘাটাল কেন্দ্রে দেবের জয়ের ব্যবধান এবার বাড়িয়ে অন্তত সাড়ে তিন লক্ষ করা। কিন্তু নিজের গ্রামে জেতা কি সহজ হবে? সে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে। কেননা, ২০১৪ সালে মহিষদা প্রাইমারি স্কুলে ১৭৬ নম্বর বুথে (বর্তমানে ১৭৯ নম্বর বুথ) মোট ভোট পড়েছিল ১০৩০টি। এর মধ্যে দেব পেয়েছিলেন ৩৫৯টি ভোট। আর সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রানা পেয়েছিলেন ৫৯৬টি ভোট।
প্রায় ২৩৭ ভোটে হেরেছিলেন দেব। পরিবর্তনের মধ্য-জমানাতেও এই বুথে পরাজিত হয় তৃণমূল। ২০১৬ সালে এই বুথে ভোট পড়েছিল মোট ৯৮৪টি। তৃণমূল প্রার্থী শিউলি সাহা পেয়েছিলেন ৪২৩টি ভোট। সিপিএম প্রার্থী রামেশ্বর দোলই পেয়েছিলেন ৫০১টি ভোট। মহিষদা হাইস্কুলে রয়েছে আরও দু'টি বুথ। ২০১৪ সালে সেখানের একটিতে দেব পেয়েছিলেন ২০৩টি ভোট। সিপিআই প্রার্থী ভোট পান ৪৭২টি। এই বুথে ২০১৬ সালে সিপিএম পায় ৫০৪টি ভোট। শিউলিদেবীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ২৬৬টি। অন্য বুথটিতে, ২০১৪ সালে মাত্র ১০ ভোটে জিতেছিলেন দেব। আর বিধাননসভা ভোটেও ৫০ ভোটে জিতেছিল তৃণমূল।
গ্রামের অনেকেই জানিয়েছেন যে তারা চান দেব, তাদের গ্রামের রাজু আবার জিতুক, আবার সংসদে যাক, আরও ভাল সিনেমা করুক, ভাল অভিনয় করুক। কিন্তু তাকে ভোট দেওয়ার প্রসঙ্গে অনেকেই জানান, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারেননি। 'এবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে আবার কাস্তেতেই ভোট দেব' বলে জানালেন তারা।
কেশপুরের সিপিএম নেতা মানিক সেনগুপ্ত বলেন, ঠিকঠাক ভোট হলে শুধু মহিষদা কেন,অনেক জায়গাতেই আমরা ভালো ভোট পাব। তবে এলাকার বিধায়ক থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান সকলের দাবি, " মহিষদার ওই বুথে এবার আমরা জিতছি। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
আর এই গ্রামের বাসিন্দা মিতা মণ্ডল। তিনি আবার দেবের খুব ভক্ত। তার সিনেমা এলেই ছুটে যান দেখতে, টিভিতে তার সিনেমা থাকলেই বসে পড়েন তার সামনে। কিন্তু ভোট? তার সহাস্য উত্তর, আরে সিনেমা দেখি বলে তাকেই ভোট দিতে হবে নাকি? আমার যাকে ইচ্ছে তাকে ভোট দেব।
মিতার উত্তর দেওয়ার সময় ঠোটের কোনে এক ঝিলিক হাসি দেখা যায়। আর তা বুঝিয়ে দেয় নিজের গ্রাম কিন্তু কাঁটাই হয়ে থাকছে ' খোকাবাবু'র কাছে।