সিপিএম নেতারা এবার কর্মী হবেন! নয়া ফরমান পলিটব্যুরোয়
নেতাদের এবার কাজ করতে হবে পার্টিকর্মীদের মতো। রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর ছ’বছরেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া দলটিকে আবার মূল স্রোতে ফেরাতে শূন্য থেকে শুরু করার রাস্তাতেই হাঁটতে চলেছে শীর্ষ নেতৃত্ব।
আবার প্রাসঙ্গিক হতে নয়া ফরমান জারি হল সিপিএমে। নেতাদের এবার কাজ করতে হবে পার্টিকর্মীদের মতো। রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর ছ'বছরেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া দলটিকে আবার মূল স্রোতে ফেরাতে শূন্য থেকে শুরু করার রাস্তাতেই হাঁটতে চলেছে শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রয়োজনে নেতা থেকে কর্মী হতেও যেন নেতারা আপত্তি না করেন, তার জন্য আবেদন রাখা হয়েছে নিচু স্তরের নেতৃত্বের কাছে।
আসলে সিপিএম এবার পাকাপাকিভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে জোনাল কমিটি তুলে দেওয়ার। সেইসঙ্গে লোকাল কমিটিও তুলে দেওয়া হবে। থাকবে শুধু অঞ্চল কমিটি। স্বাভাবিকভাবেই এতদিন বিভিন্ন লোকাল ও জোনাল কমিটিতে যাঁরা নেতার আসন অলংকৃত করতেন, তাঁরা এবার নেতৃত্ব হারাবেন। রাতারাতি বনে যাবেন নেতা থেকে কর্মী। তাই তাঁদের ইগো ত্যাগ করে এবার পার্টির স্বার্থে কর্মী হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
একটা অঞ্চল কমিটিতে থাকবেন বেশি হলেও ১২ থেকে ১৫ জন নেতা। সেখানে লোকাল কমিটি আর জোনাল কমিটি উঠে গেলে সিংহভাগ নেতাই বসে যাবেন। সেইসঙ্গে দড়ি টানাটানি শুরু হবে, কারা নেতার আসনে থাকবেন, আর কারা আসন খুইয়ে বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে আছড়ে পড়বেন! সিপিএম এই ফরমান জারির সঙ্গে সঙ্গে একটা প্রশ্নও উঠে পড়েছে, এতদিন সুখের স্বর্গে বিরাজ করার পর এই 'পদস্খলন' আরও ভাঙনের দিকে টেনে নিয়ে যাবে না তো দলকে? নেতৃত্ব খুইয়ে তাঁরা ভিড়বেন না তো অন্য দলে?
এমনিতেই
সিপিএম
ছেড়ে
বিজেপি-তে
ভিড়
জমানোর
একটা
প্রচার
চলছে।
শুধু
প্রচারই
নয়,
প্রবণতাও
রয়েছে
গেরুয়া
হাওয়ায়
গা
ভাসিয়ে
দেওয়ার।
অন্তত
সাম্প্রতিক
বেশ
কিছু
নির্বাচন
তেমনই
বার্তা
দিয়েছে
বঙ্গ
রাজনীতিতে।
তা
সত্ত্বেও
সিপিএম
শীর্ষ
নেতৃত্ব
সেই
আশঙ্কাকে
তুড়ি
মেরে
উড়িয়ে
দলের
এগিয়ে
চলার
পথ
নতুন
করে
সাজাতে
চলেছে।
তাঁদের
বিশ্বাস,
এই
পথেই
ফিরবে
প্রাসঙ্গিকতা।
আবার
ক্ষমতায়
ফেরার
রসদও
জোগাড়
হবে
এই
পথেই।
এবার
থেকে
নেতা-কর্মী
কোনও
ভেদাভেদ
থাকবে
না।
সবাই
একযোগে
মিছিল
করবেন,
পোস্টার
সাঁটবেন,
মানুষের
পাশে
দাঁড়াবেন।
মোট
কথা
সাধারণের
কাছে
নিজেদের
গ্রহণযোগ্য
করে
তোলাই
এখন
এক
ও
একমাত্র
কর্তব্য
সিপিএমে।
৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকা এক জিনিস। আর বর্তমান ছ'বছর বিরোধী হিসেবে থাকা আর এক জিনিস। কিছুতেই ৩৪ বছর ক্ষমতার অলিন্দে থাকার মানসিকতা থেকে বের হতে পারছেন না সিপিএম নেতা কর্মীরা। তাঁরা যে আজ শাসক নন বিরোধী, তাঁদের যে আবার মাঠে-ময়দানে নেমে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে- সেই সহজ সত্যটাই ভুলে যেতে বসেছেন সিপিএমের তথাকথিত নেতারা।
সিপিএম যখন ক্ষমতার অলিন্দে, তখন সবাই নেতা হতে চাইছিলেন। কমিটি থেকে বাদ পড়লেই বিপত্তি। শুরু হত নানা লবিবাজি। তখনই জোনাল কমিটি গঠন করে নেতাদের স্থান দেওয়া হয়েছিল। অনেককে দলে পদ দেওয়ার একটা উপায় বের করা হয়েছিল জোনাল কমিটি গঠন করে। বাড়ানো হয়েছিল লোকাল কমিটি।
২০১১-র পর থেকেই রাজ্যের চিত্রটা আমূল বদলে গিয়েছে। ক্ষমতা হারিয়েছে সিপিএম। গুরুত্ব কমেছে কমিটিগুলির। প্রাসঙ্গিকতা হারানো কমিটিগুলিকে তাই বিদায় দিয়ে এবার নতুন গঠনতন্ত্র কায়েম করাই লক্ষ্য সিপিএমের। নতুন করে দলকে উত্তরণের ভাবনা থেকেই সংগঠন ঢেলে সাজানো হবে এই নতুন গঠনতন্ত্রে।
তিন-চারটি লোকাল কমিটি এবার মিলে গিয়ে একটি অঞ্চল কমিটি হবে। সেই কমিটির সর্বোচ্চ সংখ্যা হবে ১৫ জন। এই কমিটির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকবে জেলা কমিটির। একেবারে নিচে লোকাল কমিটি, তার উপর জোনাল কমিটি আর থাকবে না। ফলে চারটি লোকাল কমিটি ও একটি জোনাল কমিটির সদস্য সংখ্যা হত কমপক্ষে ৮০ জন। সেই ৮০ জনের বদলে এবার নেতৃত্বের ভার থাকবে ১৫ জনের হাতে। ফলত ৬৫ জন 'বেকার' হয়ে পড়বেন। তাঁদের পদ থাকবে না। তাঁরা হয়ে যাবেন এক একজন কর্মী। এই নতুন ফরমান নিচুতলার নেতারা কীভাবে নেন, বঙ্গ সিপিএমের ভবিষ্যৎ তার উপরই নির্ভর করবে।