ধর্মীয় মেরুকরণ ছাড়াও ভরাডুবির পিছনে রয়েছে আরও কারণ, সিপিএম রাজ্য কমিটির পর্যালোচনায় জোটে জোর ইয়েচুরির
পরাজয় স্বীকার করার অর্থ হতাশা নয়। পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়েই কমিউনিস্টদের এগতে হবে। রাজ্যে ভোটে শূন্য হওয়ার পরে সিপিএম (cpim) রাজ্য কমিটির বৈঠক (state committee meeting) শেষে এমনটাই মন্তব্য করা হয়েছে ঘোষিত বিবৃতিতে। বল
পরাজয় স্বীকার করার অর্থ হতাশা নয়। পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়েই কমিউনিস্টদের এগতে হবে। রাজ্যে ভোটে শূন্য হওয়ার পরে সিপিএম (cpim) রাজ্য কমিটির বৈঠক (state committee meeting) শেষে এমনটাই মন্তব্য করা হয়েছে ঘোষিত বিবৃতিতে। বলা হয়েছে হারের পর্যালোচনার কাজ চলবে। পাশাপাশি পার্টি ও জনগণের সব অংশের মধ্যে গিয়ে আরও অভিমত সংগ্রহে জোর দেওয়া হয়েছে রাজ্য কমিটির বৈঠকে।
হারের কারণ অনুসন্ধান
এবারের সিপিএম-এর রাজ্য কমিটির বৈঠকে হারের কারণ অনুসন্ধান করা হয়েছে। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক যে রিপোর্ট পেশ করেছেন, তাতে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের হারের পিছনে রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক কারণ অনুসন্ধান করা হয়েছে।
- বলা হয়েছে, সিপিআই(এম) ও বামফ্রন্টের ভোটের হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। শ্রেণি ও জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমর্থন হ্রাস পেয়েছে।
- রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ থাকলেও ক্রমে বিজেপি-বিরোধী মনোভাবের ফলে তারা লাভবান হয়েছে।
- ধর্মীয় মেরুকরণ এই ফলাফলের প্রধান কারণ না হলেও একটি কারণ। বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে তীক্ষ্ণ মেরুকরণ হয়েছে।
- জনগণ তৃণমূলকেই বিজেপি-বিরোধী প্রধান শক্তি হিসেবে বেছে নিয়েছে।
- বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্পকে তৃণমূল জনগণের সমর্থন লাভের জন্য ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে।
- বিজেপি-র আগ্রাসী প্রচারের বিরুদ্ধে বাংলার জাতিসত্বাকে তৃণমূল ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। বিজেপি, তৃণমূল উভয়েই পরিচিতিসত্ত্বার রাজনীতি করেছে, তার যথাযথ মোকাবিলা করা যায়নি।
মোর্চার বিকল্প জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠা করা যায়নি
পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট সর্বোচ্চ সম্ভব এক জায়গায় আনতে এবং বাম, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির সমাবেশের প্রয়োজনীয়তা থেকেই রাজ্যে বামফ্রন্ট থাকলেও সংযুক্ত মোর্চা গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু মোর্চাকে বিকল্প হিসাবে জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। পার্টির সাংগঠনিক দুর্বলতা নির্বাচনী সংগ্রামে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে পর্যালোচনায় বলা হয়েছে।
গণভিত্তির হ্রাস হারের অন্যতম কারণ, বলেছেন সীতারাম ইয়েচুরি
সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, নির্বাচনী বিপর্যয়ের অভিন্ন কারণ হল পার্টির গণভিত্তি হ্রাস। এই দুর্বলতা কাটানো যায়নি। যে ভুলগুলির কথা আগেই পার্টিতে আলোচিত হয়েছে তা অতিক্রম করা যায়নি। ভুলকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থতা আরও বড় ভুলের জন্ম দেয়। রাজ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া ছিল। যার ফলে ২০১৯-এ বিজেপি'র লাভ হয়েছিল। কিন্তু পরে তৃণমূল কিছু পদক্ষেপ নেয় এই অসন্তোষ হ্রাসের জন্য। বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পকে তারা একাজে ব্যবহার করে। বিজেপি'র হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে বাঙালি জাত্যাভিমানকেও তারা ব্যবহার করেছে।
জোটে জোর
ইয়েচুরি বলেছেন, পার্টির ২২তম কংগ্রেসেই বলা হয়েছিল বিজেপি-কে পরাস্ত করা মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। এই ঐক্য হবে সংগ্রামের জন্য। নির্বাচন এলে বোঝাপড়ার চেষ্টা হবে। কিন্তু জনগণ প্রস্তুত না থাকলে রণকৌশল সফল হয় না। রাজ্যেও এই ঐক্যের চেষ্টা অব্যাহত থাকা উচিত কিন্তু কীভাবে তা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আলোচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে বামফ্রন্ট ও অন্য বামদলগুলিতে ঐক্যবদ্ধ করার ডাক দিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
তারুণ্যে জোর
সীতারাম ইয়েচুরি আরও বলেছেন, তরুণরা আমাদের চারপাশে এসেছেন তারা আমাদের সম্পদ। এদের যত্ন করতে হবে, পার্টি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তাদের দায়িত্ব দিতে হবে। অভিজ্ঞদের এই দায়িত্ব নিতে হবে। সিপিআই(এম) ও বামফ্রন্ট ছাড়া জনগণের মৌলিক প্রশ্ন কেউ তুলবে না। জনগণ আক্রান্ত। সামনের দিনে আরো বেশি আক্রমণ নেমে আসবে। তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শ্রমিকশ্রেণি ও কৃষকদের আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে। জনগণই আমাদের প্রকৃত শক্তি। জনগণের লড়াই গড়ে তোলার সুযোগ সামনেই আসবে। তা এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্ম দেবে। এক্ষেত্রে সূর্যকান্ত মিশ্র রেড ভলান্টিয়ারদের কাজের প্রশংসা করেছেন।