হাইকম্যান্ডের বিপরীতমুখী অবস্থানে প্রদেশ কংগ্রেস, লোকসভা ভোটে অন্য পথে হাঁটতে চান সোমেনরা
জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপিকে হারাতে হবে। সকলের শপথ একটাই। আর সেখানেই কিছুটা ভিন্ন সুর প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের গলায়।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে সারা দেশে বিরোধীরা জোট বেঁধে লড়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের পতন নিশ্চিত করতে চাইছে। সেই লক্ষ্যে এগোনোর জন্য শপথ করেছেন কংগ্রেসের হাইকম্যান্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। যেভাবেই হোক জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপিকে হারাতে হবে। সকলের শপথ একটাই। আর সেখানেই কিছুটা ভিন্ন সুর প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের গলায়।
প্রদেশ নেতৃত্ব একজোট
বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বে লোকসভা ভোটে রাজ্যে একলা লড়তে চাইছে। অথচ সারা দেশে কংগ্রেস চেষ্টা করছে ছোট দলগুলির সঙ্গে জোট বেঁধে বৃহত্তর জোট গড়ে তুলতে। যাতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পতন সুনিশ্চিত করা যায়।
সোমেনের সুর এক
তবে সভাপতি বদলের পরও অধীর চৌধুরীর জায়গায় সোমেন মিত্র এলেও তৃণমূল বিরোধী স্ট্যান্ড প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের একই রয়েছে। সেকথা রাহুল গান্ধীকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে বলে সোমেন মিত্র সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন। যদিও হাইকম্যান্ড যা বলবে তার ওপরেই তাঁরা গুরুত্ব দেবেন বলেও সোমেন জানিয়েছেন।
কেন নয় তৃণমূল
কেন তৃণমূলের সঙ্গে জোট চাইছে না কংগ্রেস? সোমেন মিত্রদের যুক্তি, ভবিষ্যতের জন্য তা একেবারেই ভালো কাজ হবে না। দলের ভিত পশ্চিমবঙ্গে আরও নড়বড়ে হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কর্ণাটকে জেডিএসের সঙ্গে লড়ে কংগ্রেস সাফল্য পেলেও সেই উদাহরণ রাজ্যে খাটবে না বলেই কংগ্রেস মনে করছে।
সভাপতিকে আবেদন
সোমেন মিত্র জানিয়েছেন, দলের সভাপতি রাহুল গান্ধীকে স্পষ্ট জানিয়েছি, লোকসভা নির্বাচনে একলা লড়লেই বেশি ভালো হবে। বেশি আসন জিততে না পারলেও বাংলায় ভবিষ্যতে কংগ্রেসের অস্তিত্ব থাকবে। তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলে বেশি আসন পেলেও পরে সেই বিধায়ক, সাংসদদের ভাঙিয়ে নিজেদের দলে নিয়ে নিচ্ছে শাসক দল।
তবে কি বাম-জোট
তবে কি বামেদের সঙ্গে জোট বাঁধতে চাইছে কংগ্রেস? সোমেন মিত্ররা তাও চান না। কারণ বামেদের অস্তিত্ব যে সঙ্কটে রয়েছে তা আলাদা করে বলে দিতে হবে না। ফলে জোট বাঁধলেও বামেরা ভোট এনে দিতে পারবে না বলেও কংগ্রেস ভালো করেই জানে। ফলে একলা চলাই শ্রেয় বলে অধিকাংশ মনে করছেন।
তৃণমূলে অনাস্থা
দলের অন্দরের খবর, আসলে তৃণমূল জোট করলেও দুই-চারটির বেশি আসন ছাড়তে রাজি হবে না কংগ্রেসকে। সেক্ষেত্রে তাতে সন্তুষ্ট হওয়া জাতীয় দল কংগ্রেসের পক্ষে অসম্ভব। তাছাড়া ২০০১, ২০০৯ ও ২০১১ সালে তৃণমূলের সঙ্গে ও ২০১৬ সালে বামেদের সঙ্গে জোট করে লড়ায় দলের অনেক নেতাই টিকিট পাননি। ফলে এভাবে চললে সংগঠন টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে যাবে রাজ্যে।
মমতার তাচ্ছিল্য
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, এবার ৪২টি আসন পেতেই দল ঝাঁপাবে। এক্ষেত্রে অন্য কারও সাহায্য প্রয়োজন নেই। ফলে কংগ্রেসকে আগে থেকেই বাদের খাতায় রেখেছেন তিনি। এই অবস্থায় কংগ্রেস জোট করলে রাজ্যে ব্রাত্য হয়ে যেতে পারে।
২০১৪ সালের ফল
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪২টি আসনে নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ৩৪টি, কংগ্রেস ৪টি ও বাম-বিজেপি দুটি করে আসনে জয়লাভ করেছিল। আশি শতাংশের বেশি আসনে তৃণমূল জয় পায়। কংগ্রেস শুধু মালদা ও মুর্শিদাবাদে শক্তি ভিটেয় জয় ছিনিয়ে নেয়।