সরকারি টাকা নয়ছয় করে নাইটদের সংবর্ধনা দেওয়া উচিত হয়নি, বলছেন আমজনতাই
স্টেট ব্যাঙ্কের কর্মী সুগত চক্রবর্তী বলেন, "আমি ক্রিকেট ভালোবাসি। কলকাতা নাইট রাইডার্স জেতায় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে রাতে বাজি পুড়িয়েছি। কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না যে, সরকারি টাকায় সংবর্ধনা কেন দেওয়া হল? শুভেচ্ছাবার্তা পাঠালেই তো চলত। নইলে চাঁদা তুলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারত।"
ব্যান্ডেল-হাওড়া লোকাল ট্রেনের নিত্যযাত্রী অরূপ সাহা, প্রদীপ পরামাণিক, দুলাল গুপ্তদের মতে, "পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম মিডিয়াকে বলেছেন, আপনারা খারাপ দিকটা কেন দেখাচ্ছেন? খারাপ কাজ করলে খারাপ দিক তো মিডিয়া দেখাবেই। শাহরুখ খানের জন্য রাজ্য সরকার যখন এত কিছু করল, তখন ওঁর উচিত এ রাজ্য থেকে ভালো ক্রিকেটার তৈরির জন্য কলকাতায় একটা আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট অ্যাকাডেমি তৈরি করা। তাতে বাঙালি ছেলেরা সুযোগ পাবে। ইডেন গার্ডেনে চারটে ভালো ভালো কথা বলে গেলে আমার আপনার কী লাভ?"
রাজ্য সরকারি কর্মচারী অনিন্দ্য সাঁপুই বলেন, "সত্যি কথা বললে তো মাওবাদী তকমা পড়ে যাবে। আমরা বারবার মহার্ঘভাতার কথা বলেছি। পাইনি। সরকার বলছে, টাকা নেই। শাহরুখ খানকে নিয়ে নাচগানা করার সময় টাকা আসছে কোথা থেকে? শাহরুখ খান দু'দিক থেকে লাভবান হল। নাইট রাইডার্সকে নিয়ে ব্যবসা করে টাকা কামিয়ে নিল। এদিকে, ওদের ডেকে দামি উপহার দেওয়া হল আমাদের করের টাকায়। সামনে পুজো আসছে। জানি না, তার আগে বকেয়া মহার্ঘভাতা পাব কি না? এটা আমাদের ন্যায্য পাওনা। লিখবেন, এই জমানায় আমরা আর ভালো কিছু আশা করছি না। যা অবস্থা, কোনদিন মাইনেটাও বন্ধ হয়ে যাবে।"
"বাইরে 'কলকাতা এগ রোল' পাওয়া যায়। এদেরও ইডেনে ডেকে সংবর্ধনা দিক রাজ্য সরকার"
হুগলী জেলার পাইকারি ব্যবসায়ী অসীমপদ মুখোপাধ্যায় বললেন, "ব্যবসার কাজে কাল কলকাতা গিয়েছিলাম। ফেরার সময় যা-তা অবস্থা। শুনলাম ইডেনে পুলিশ লাঠি পেটা করছে। সরকারি টাকা নয়ছয় করে সার্কাসের আয়োজন করেছিল আমাদের সরকার। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা ভিড় জমিয়েছিল ওখানে। বাচ্চাগুলোকে কী মার মেরেছে পুলিশ! সরকারি টাকা নয়ছয় আর বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোকে পুলিশের মার, দু'টোই নিন্দাজনক। পরে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন শুনেছি। একে ন্যাকামি ছাড়া আর কী বলবেন?" প্রশ্ন করা হল, অত লোক যে ইডেনে ভিড় করেছিলেন? এ বার অসীমবাবুর সপাট উত্তর, "কত লোক হয়েছিল ইডেনে? বড় জোর একলাখ। আর বাংলার জনসংখ্যা তো ন'কোটি। কত শতাংশ হয়, হিসেব করুন।"
সল্ট লেক সেক্টর ফাইভে কর্মরত তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী শুভম মিত্র বলেন, "আমাদের বস তামিলভাষী। চেন্নাইয়ের লোক। বললেন, 'তোমাদের এখানে কী কাজ নেই লোকের? সপ্তাহে কাজের দিনে এমন পাগলামো। তাও বাংলা রঞ্জি ট্রফি জিতলে যদি সংবর্ধনা দেওয়া হত, একটা যুক্তি ছিল। একটা ব্যক্তি মালিকানাধীন দল, তাদের নিয়ে এত হুল্লোড় কেন? শাহরুখ খান কি এখানে কারখানা খুলতে পয়সা ঢালবে?'"
স্কুলশিক্ষিকা সুলগ্না ভট্টাচার্য ঘোষাল বললেন, "আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর উচিত কালকের সংবর্ধনায় সরকারের কত খরচ হল, তার হিসাব দেওয়া। হয়তো উনি বলবেন, সিপিএম আমলেও অন্যভাবে টাকা নয়ছয় হয়েছে, যেমনটা বিভিন্ন ঘটনার ক্ষেত্রে বলে থাকেন। সবই যদি সিপিএম আমলের সঙ্গে তুলনা টানা হয়, তা হলে পরিবর্তন হয়ে কী লাভ হল?"
তরুণ চিকিৎসক সুদীপ দে বললেন, "কলকাতা নাইট রাইডার্সে 'কলকাতা' নাম আছে বলেই এত গদগদ হতে হবে? আপনি মুম্বই, ব্যাঙ্গালোর গেলে দেখবেন, 'কলকাতা এগ রোল' পাওয়া যায়। ওই দোকানের মালিক, কর্মীরা কেউই বাঙালি নয়। তা এরাও তো বাইরে কলকাতার নাম উজ্জ্বল করছে। কলকাতার খাবারের কথা প্রচার করছে। তা হলে এদেরও ইডেনে ডেকে সংবর্ধনা দিক রাজ্য সরকার।"
বোঝাই যাচ্ছে, কলকাতা নাইট রাইডার্স জেতায় অনেকে আনন্দ পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সরকারি খরচে ইডেন গার্ডেনে সংবর্ধনা যেমন ভালো চোখে নেননি, তেমনই ইডেনের বাইরে পুলিশের আচরণেও ক্ষুব্ধ।