‘মুখ্যমন্ত্রী বা বিদ্যুৎমন্ত্রীকে এসে পাওয়ার গ্রিড বন্ধের আশ্বাস দিতে হবে, নতুবা আন্দোলন চলবে’
মুখ্যমন্ত্রী কিংবা বিদ্যুৎমন্ত্রী ঘটনাস্থলে এসে পাওয়ার গ্রিডের কাজ বন্ধের আশ্বাস দিলেই স্তিমিত করা হবে আন্দোলন। তা না হলে তাঁদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা , ১৭ জানুয়ারি : মুখ্যমন্ত্রী কিংবা বিদ্যুৎমন্ত্রী ঘটনাস্থলে এসে পাওয়ার গ্রিডের কাজ বন্ধের আশ্বাস দিলেই স্তিমিত করা হবে আন্দোলন। তা না হলে তাঁদের আন্দোলন চলতেই থাকবে। তাঁরা কোনওভাবেই জোর করে জমি দখল করে পাওয়ার গ্রিড প্রকল্প হতে দেবেন না। এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা এলে গ্রামবাসীরা তাঁকে গ্রামে ঢুকতে দেবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।[পাওয়ার গ্রিড প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার ঘোষণা বিদ্যুৎমন্ত্রীর, তবু চলছে লাগাতার অবরোধ]
এদিকে নবান্ন সূত্রে ঘোষণা করা হয়েছে, ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিডের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কোনও কৃষি জমির চরিত্র বদল হবে না। আর কৃষি জমির চরিত্র বদল করে কোনও প্রকল্প করাও হবে না। বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করার পরই এই সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড প্রকল্প হবে না। ওই প্রকল্পের নির্মাণকার্য স্থগিত রাখা হচ্ছে। মূলত সেই কথারই সিলমোহর পড়ল এদিন।[নন্দীগ্রামের ধাঁচে জমি আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ ভাঙড়, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে যাচ্ছেন রেজ্জাক!]
তবে গ্রামবাসীদের অভিযোগ ছিল, বিদ্যুৎমন্ত্রী কাজ বন্ধের কথা জানালেও, রাতের বেলায় পাওয়ার গ্রিডের কাজ হচ্ছে। তাই বিদ্যুৎমন্ত্রীকে এলাকায় এসে কথা দিয়ে যেতে হবে। তাঁরা কিছুতেই রেজ্জাক মোল্লার কথা শুনতে চান না। তাঁকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও জানান উত্তেদিত গ্রামবাসীরা। হয় বিদ্যুৎমন্ত্রী, নতুবা মুখ্যমন্ত্রীকে এলাকায় দাঁড়িয়ে আশ্বাস দিয়ে যেতে হবে।[অশান্ত ভাঙড়, নিজের এলাকায় ঢুকতেই পারলেন না রেজ্জাক]
অন্যদিকে, বিশাল পুলিশ বাহিনী ও জেলা প্রশাসনের তরফে উদ্যোগ নেওয়া হয় আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে। কিন্তু গ্রামবাসীরা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কোনও আলোচনাতেই রাজি হননি। আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করলেও, তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কোনও রফা সূত্র বের হয়নি।[জোর করে জমি অধিগ্রহণ নয়, প্রয়োজনে পাওয়ার গ্রিড সরানো হবে : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়]
এরপরই ফের উত্তেজিত জনতার তাণ্ডব শুরু হয়ে যায়। রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সমস্ত গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। ইটবৃষ্টি করে গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর চালায় জনতা। তারপর এক এক করে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয় গাড়িগুলি। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় একটি বাসে। সংবাদ মাধ্যমের গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পুলিশের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। কোনওভাবেই গ্রামে পুলিশকে ঢুকতে দিতে চান না তাঁরা।
পুলিশ এর পাল্টা দিতে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করে। কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। পুলিশ ব্যারিকেড করে গ্রামে ঢুকতে শুরু করে। বিশাল র্যাফও নামানো হয়। এইসময় পুলিশ গুলি চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশের গুলিতে একজন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, পাওয়ার গ্রিড প্রকল্প পুরোপুরি বন্ধ করে জোর করে কেড়ে নেওয়া জমি তুলে দিতে হবে জমিদাতাদের হাতে। এই দাবিতেই গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ চলছিল। সকাল থেকেই রাস্তা কেটে গাছের গুঁড়ি ফেলে দফায় দফায় অবরোধ চলে এলাকায়। পুলিশ অবরোধ তুলতে যেতেই অগ্নিগর্ভ এলাকা। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় খণ্ডযুদ্ধ চলছে।