জনগণ তৃণমূল সরকারের অহংকার, বিধায়কদের ধমকে পঞ্চায়েতের আগে বার্তা মমতার
ঝাড়গ্রাম জেলার উন্নয়ন-পর্যালোচনায় প্রশাসনিক বৈঠকে জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
'ক্ষমতার অপব্যবহার মানবে না আমাদের সরকার। আমার হাতে ক্ষমতা আছে বলে আমি যেটা বলব, সেটাই হবে, এই মনোভাব চলবে না।' ঝাড়গ্রাম জেলার উন্নয়ন-পর্যালোচনায় প্রশাসনিক বৈঠকে জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধায়ক থেকে জেলা পরিষদ সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নাম ধরে ধরে ধমক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বললেন, 'আমার কাছে খবর আছে কেউ ঠিকমতো এলাকার দিকে খেয়াল রাখছেন না। মনে রাখবেন আমাদের অহংকার জনগণ, জনগণের অবহেলা আমি মানব না।'
[আরও পড়ুন:পঞ্চায়েতে বিজেপির টার্গেট অনুব্রত, দিলীপদের ভোকাল টনিক দিতে আসছেন অমিত]
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, 'ঝাড়গ্রাম নতুন জেলা হয়েছে। সেই জেলাকে নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। তাই কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে, সেটা আমি জানি। কিন্তু এই নতুন জেলার উন্নয়ন নিয়ে কেন এত ঢিলেঢালা মনোভাব থাকবে।' একে একে খগেন মুর্মু, চুড়ামণি মাহাতো, সুকুমার হাঁসদা-সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের দাঁড় করিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানাতে চান প্রত্যেকের ভূমিকা।
তিনি বলেন, 'আমার কাছে নির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, আপনারা কেউ এলাকায় টাইম দিচ্ছেন না। কাজ করতে হবে, দায়িত্ব পালন করতে হবে, কিন্তু সবারই ঢিলেঢালা মনোভাব। আমি জানি দু-একজন বদমাশ রয়েছে, তা বলে আপনারা কেন কাজ করবেন না, এলাকার উন্নয়নে নজর দেবেন না?' প্রশ্ন ছুড়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা এমনও বলেন, 'আগে তো ভালোই কাজ করতে, এখন কী তোমরা শুধু ঝগড়া কর?'
চূড়ামণি মাহাতোকে বলেন, 'ঠিকমতো জেলা দেখছো? এলাকায় যাচ্ছো? এলাকায় পাবলিক পরিবষেবা ঠিকঠাক পাচ্ছে সবাই? আমার মনে হচ্ছে কোথাও কোনও সমস্যা হচ্ছে।' শীঘ্রই সেই সমস্যা দূর করে একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী জেলাশাসক, বিডিওদেরও বার্তা দেন কাজ ফেলে না রেখে, উন্নয়নে নজর দিতে। নিয়মিত পরিদর্শন করতে হবে বলেও কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিতি জেলার সমস্ত জনপ্রতিনিধি, আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, 'মানুষ কেন আমার কাছে এসে অভিযোগ জানাবেন। মানুষ এসে অভিযোগ জানাচ্ছে, নেতা, আধিকারিকদের দেখা পাওয়া যায় না। তাঁদের কাছে গিয়ে বারবার ফিরে আসতে হয় দেখা না পেয়ে। কেন এমন হবে? মনে রাখবেন আমাদের কেউ না ডাকলেও, আমাদের মানুষের কাছে যেতে হবে। আমরা মানুষের সরকার। মানুষই আমাদের গর্ব।'
এদিন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নের বরাদ্দ টাকা কতটা খরচ হয়েছে, কোন খাতে খরচ হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী তা জানতে চান পশ্চিমাঞ্চল বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে। তিনি কোন জেলার জন্য কত টাকা বরাদ্দ করেছেন, তাও বিশদে রিপোর্ট চান মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে বলেন, 'ঝাড়গ্রামে প্রচুর পর্যটক আসছেন। কিন্তু থাকার জায়গা পাচ্ছেন না।' বনবিভাগকে তিনি থাকার ব্যবস্থা বাড়াতে নির্দেশ দেন। মমতা বলেন, 'ঝাড়গ্রাম থেকে মুকুটমণিপুর ট্যুরিজম সার্কিট করার উপযুক্ত জায়গা।' বিশেষ করে তিনি ঝিলিমিলির নাম করেন এদিন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, 'পর্যটন সার্কিট গড়ে থাকার ব্যবস্থা করলে, আরও অনেক পর্যটক আসবেন ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বীরভূম ও বাঁকুড়ায়।'
একইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন পরিবহণ দফতরের সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নির্দেশ দেন, বেলপাহাড়ি ও ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পরিবহণ পরিষেবা বাড়াতে। আরও বাস চালু করতে নির্দেশ দেন মমতা। বেলপাহাড়ি থেকে সন্ধ্যায় একটি বাস সার্ভিস ছিল, সেটা এখন বন্ধ। তা অবিলম্বে চালু করতে নির্দেশ দেন মমতা।
[আরও পড়ুন: রাজ্যের মহা ধামাকা 'অফার', প্রবীণদের অধিকার রক্ষায় কর ছাড় মমতার সরকারের]