রাজ্য রাজনীতিতে বেনজির সৌজন্য, হঠাৎ অধীর চৌধুরীকে ফোন মমতার
কলকাতা থেকে বহরমপুর যাওয়ার পথে অধীর চৌধুরীর গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে। বরাত জোরে রক্ষা পান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। এই ঘটনার শোনার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের মোবাইল থেকে ফোন করেন অধীর চৌধুরীকে।
রাজ্য রাজনীতিতে বেনজির এক ঘটনা ঘটে গেল রবিবার! দুই রাজনীতিকের বৈরিতা নিয়ে কম কথা হয়নি আগে। এখনও উভয়ের মধ্যে অহি-নকুল সম্পর্ক বজায় রয়েছে। তবু সেই আবহের মধ্যেই সৌজন্যের রাজনীতির নজিরবিহীন নিদর্শন স্থাপন করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফোন করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে। মমতার এই 'সৌজন্যে' তাজ্জব বনে গেলেন স্বয়ং অধীরবাবুও।
[আরও পড়ুন : দুর্ঘটনার কবলে অধীর চৌধুরীর গাড়ি, বরাতজোরে রক্ষা কংগ্রেস সাংসদের]
রবিবার কলকাতা থেকে বহরমপুর যাওয়ার পথে অধীর চৌধুরীর গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে। বরাত জোরে রক্ষা পান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তাঁর গাড়ির চালক অল্প আহত হন। এই ঘটনার শোনার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের মোবাইল থেকে ফোন করেন অধীর চৌধুরীকে। দুর্ঘটনায় কোনও আঘাত লেগেছে কি না, তিনি কেমন আছেন- খোঁজখবর নেন। দুর্ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানেন তিনি।
একটা ছোট্ট দুর্ঘটনা। আর তারই জেরে মমতা-অধীরের কথা হল দীর্ঘদিন পর। কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের পর থেকেই অধীর-মমতার শত্রুতা চরম সীমায় পৌঁছয়। এমনকী কংগ্রেস হাইকমান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলেও অধীরের সঙ্গে বনিবনা ছিল না মমতার। অধীরকে 'গুন্ডা' আখ্যা দিতে তিনি যেমন কসুর করেননি, তেমনই অধীরও 'একনায়কতন্ত্রী' বলে বারবার বিঁধেছেন মমতাকে। সেই দুই রাজনীতিকই মিলে গেলেন সৌজন্যের রাজনীতিতে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ফোন পেয়ে অভিভূত অধীরবাবুও। তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করতে পারেন তাঁকে। তবু তাঁর দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মমতাদি ফোন করায় ধন্যবাদ জানান অধীর চৌধুরী। জানান, তিনি ভালো আছেন। চালকের দক্ষতায় তিনি রক্ষা পেয়েছেন এ যাত্রায়।
অধীরের দুর্গ ভেঙে খান খান হয়ে গিয়েছে এই মমতার হাতেই। টাকা দিয়ে তিনি দল ভাঙিয়ে বিরোধীশূন্য করতে চাইছেন রাজ্যকে- এমন অভিযোগ এনেছিলেন অধীর। উভয়ের বৈরিতা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে 'শত্রু' সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মমতাকে হারাতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন তিনি। শেষমেশ ২০১৬ বিধানসভায় জয় হয়েছে মমতারই।
তবে রাজ্যে বিজেপি-র হঠাৎ উত্থান কেন্দ্রীয়ভাবে কাছাকাছি এনে দিয়েছে মমতা ও কংগ্রেসকে। সেই নিরিখে এই মুহূর্তে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে জোটের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কংগ্রেস হাইকমান্ড মমতার বিরুদ্ধে সুর নরম করার নির্দেশিকা দিলেও অধীর তাঁর মতো করেই মমতা বিরোধিতা করে যাচ্ছিলেন।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সৌজন্যের ফোন করে সেই বিরোধেও জল ঢেলে দিলেন এবার। ফলে রাজ্যেও কংগ্রেস-তৃণমূল আরএ কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা তৈরি হতে বাধ্য। রাজ্যেও কংগ্রেসের সঙ্গে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে জোটের প্রাথমিক রাস্তা তৈরি করে রাখলেন মমতা।