যা চান তাই পাবেন শুধু একটা শর্তে! শান্তি রক্ষায় পাহাড়ে ঐক্যের মন্ত্র বিলোলেন মমতা
সুভাষ ঘিসিংয়ের নামে রোহিনী রোডের নামকরণ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ভালো কাজ করতে গেলে একতাই মূল শক্তি। সবাই একসঙ্গে থাকলে দার্জিলিংও এগিয়ে যাবে।
আট মাস পর পাহাড়ে গিয়ে একতার মন্ত্র বিতরণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু একটা শর্তে দার্জিলংয়ের জন্য প্রাপ্তীর ভাণ্ডারও খুলে দিলেন। মঙ্গলবার পাহাড়ে পা দিয়েই প্রাক্তন জিএনএলএফ প্রধান সুভাষ ঘিসিংয়ের নামে রোহিনী রোডের নামকরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই তিনি জানান, ভালো কাজ করতে গেলে একতাই মূল শক্তি। সবাই একসঙ্গে থাকলে দার্জিলিংও এগিয়ে যাবে।
ক্ষমতায় এসেই দার্জিলিং নিয়ে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাহাড়ে হাসি ফুটিয়ে বলেছিলেন, দার্জিলিং সুইজারল্যান্ড হবে। কিন্তু সেই দার্জিলিংয়ের হঠাৎ অশান্ত হয়ে পড়ায় দার্জিলিংয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল পর্যটন। তারপরও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরন্তর প্রচেষ্টায় ফের শান্তি ফিরেছে পাহাড়ে।
এদিন পাহাড় সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সেই শান্তির বাণীই দিলেন। পাহাড়ে ঐক্যের সুর ছড়িয়ে পাহাড়বাসীর উদ্দেশ্যে বললেন, 'আপনারা যা চান তাই পাবেন। শুধু একটি শর্ত পালন করতে হবে। বজায় রাখতে হবে শান্তি। আর তা সম্ভব হবে সবাই একসঙ্গে থাকলেই।' তাই সবাইকে একসঙ্গে থাকার শর্ত আরোপ করে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়কে নতুন দিশা দিলেন।
এদিন শিমুলবাড়ি থেকে কার্শিয়াং পর্যন্ত রাস্তার নাম সুভাষ ঘিসিং মার্গ করা হয়। প্রাথমিকভাবে অস্থায়ী ফলকে এই রাস্তা সুভাষ ঘিসিংয়ের নামে করা হল। আগামীদিনে স্থায়ী ফলক বসানো হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'সুভাষ ঘিসিং দার্জিলিংয়ের জন্য কাজ করেছিলেন। ওই রাস্তাও তাঁর করা। তাই তাঁর নামেই এই রাস্তার নামকরণ করা হল।'
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'দার্জিলিং ফের এগিয়ে যেতে পারে। সে জন্য সবার আগে শান্তি বজায় রাখা দরকার। ভালো কাজ তখনই হয়, যখন সবাই একসঙ্গে থাকে।' অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী এই কথা দিয়ে বুঝিয়ে দেন, 'পাহাড় বাংলার অঙ্গ। আমরা সমতল ও পাহাড়ের মানুষ সবাই একসঙ্গে থাকব।'
তিনি বলেন, 'দার্জিলিং বাংলা তথা দেশের মধ্যে অন্যতম সুন্দর একটি জায়গা। এখানে একটু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তা এখন মিটে গিয়েছে। এখন আমরা আর পিছন ফিরে তাকাব না। আমরা যাতে এই সুন্দর জায়গাকে বিশ্বের সেরা জায়গায় রূপান্তরিত করতে পারি, সেদিকে নজর দেব। পাহাড়, সমতল, বাঙালি, নেপালি, গোর্খা, আদিবাসী সবাই একসঙ্গে কাজ করে দার্জিলিংয়ের উন্নয়ন করব।'
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'ঝগড়া করা তো খুব সহজ। এক সেকেন্ডে যেমন ঝগড়া করা যায়, তেমনই সব টুকরে টুকরো হয়ে যায়। কিন্তপ সবাই মিলে একসঙ্গে থাকা একটা বিশাল বড় কাজ। সেই কাজই এবার আমরা করে দেখাব।' এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে উপস্থিত ছিলেন জিটিএ চেয়ারম্যান বিনয় তামাং, ভাইস চেয়ারম্যান অনীত থাপা। ছিলেন জিএনএলএফের নেতৃত্ব। সুভাষ ঘিসিংয়ের ছেলে মন ঘিসিংও ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একই মঞ্চে।
বিনয় তামাং বলেন, 'আমাদের রাজনৈতিক গুরু ছিলেন। সেই সুভাষ ঘিসিংয়ের নামে রাস্তা হচ্ছে, এটা শুনেই আনন্দ হচ্ছে।' মন ঘিসিং বলেন, 'এতদিনে ভালো কাজের স্বীকৃতি পেলেন বাবা।' রাজ্যের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি। সেইসঙ্গে বলেন, 'পাহাড়ের শান্তি ফিরেছে, তা বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদের সবাইকে নিতে হবে।'