মমতার পুলিশেরও নাম জড়াল ছাত্র খুনে, ইসলামপুরের এক সাধারণ ঘটনায় বেনজির হিংসা
ছাত্র খুনে নাম জড়াল এবার মমতার পুলিশেরও। আর সেই সঙ্গে ফিরল প্রায় দু'দশক আগে দক্ষিণ দিনাজপুরের গোপালগঞ্জে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হওয়া ছাত্রের ঘটনার আতঙ্ক।
ছাত্র খুনে নাম জড়াল এবার মমতার পুলিশেরও। আর সেই সঙ্গে ফিরল প্রায় দু'দশক আগে দক্ষিণ দিনাজপুরের গোপালগঞ্জে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হওয়া ছাত্রের ঘটনার আতঙ্ক। সেবারও পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের খণ্ডযুদ্ধ হয়েছিল। আর বৃহস্পতিবার প্রায় একইি রকম ঘটনা ঘটল উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাড়িভিটে স্কুলে। এখানেও পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে প্রাণ হারাল এক ছাত্র। ঘটনা জখম ৮ ছাত্র-সহ গ্রামবাসী। এছাড়াও গ্রামবাসীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে মাথা ফেটেছে মহিলা পুলিশ কর্মী-সহ ২ পুলিশ কর্মীর। চোট পেয়েছেন আরও কয়েক জন পুলিশকর্মী।
দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাড়িভিটে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে গণ্ডগোল চলছে। যে বিষয়ের শিক্ষক দরকার তা না করে অন্য বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা অসন্তোষ জানিয়ে আসছিল। স্থানীয় গ্রামবাসীরাও এই নিয়োগের বিরোধিতা করছিল।
বৃহস্পতিবার নবনিযুক্তি তিন শিক্ষককে নিয়ে পুলিশ বাহিনী হাজির হয় দাড়িভিটে স্কুলে। কিন্তু, ছাত্র-ছাত্রীরা এই শিক্ষকদের নিয়োগের বিরোধিতা করতে থাকে। তাদের দাবি ছিল, দীর্ঘদিন ধরে বাংলা-সহ একাধিক বিষয়ে কোনও শিক্ষক নেই। সেই বিষয়গুলির শিক্ষক নিয়োগ না করে কেন যে বিষয়ে শিক্ষক আছে তাতেই আবার বাড়তি শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে পুলিশের বচসা শুরু হয়ে যায়।
ক্ষিপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের হঠাতে না পেরে র্যাফ ডাকা হয়। এতেই উত্তেজনার পারদ বেড়ে যায়। ইতিমধ্যেই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভ হচ্ছে জানতে পেরে ছুটে আসেন গ্রামবাসীরা। তাঁরাও দলবেঁধে পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
উত্তেজিত ছাত্র-ছাত্রী এবং গ্রামবাসীদের হঠাতে পুলিশ লাঠি চার্জ শুরু করে। বেধড়ক লাঠি চার্জে গ্রামবাসীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ইট নিয়ে পুলিশকে ধাওয়া করে মারমুখী জনতা। জনতার ছোঁড়া ইটের আঘাতে এক মহিলা পুলিশ কর্মী এবং এক এসআই-এর মাথা ফেটে যায়। আরও কয়েক জন পুলিশকর্মী আহত হন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ফাটাতে থাকে। এমনকী,উত্তেজিত ছাত্র-ছাত্রী ও গ্রামবাসীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রবারের বুলেটও ছোঁড়ে। এমনই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে রাকেস সাহা নামে এক আইআইটি পড়ুয়া। দাড়িভিটে স্কুলের পাশেই রাকেশের বাড়ি। পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সেও সামিল হয়েছিল। রাকেশের পিঠে গুলি লাগে। কিন্তু কে এই গুলি চালাল তা পরিস্কার নয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুলিশই কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রবার বুলেট ছোঁড়ার ফাঁকে গুলি চালিয়েছে।
পুলিশ থেকে অবশ্য সরকারিভাবে কোনও বক্তব্য জানানো হয়নি। রাকেশেরে সঙ্গে সঙ্গে জখম হয় ৩ স্কুল ছাত্র-সহ ৮ গ্রামবাসী। রাকেশকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। জানা গিয়েছে আহত এক গ্রামবাসীর অবস্থা সঙ্কটজনক।
[আরও পড়ুন:পুলিশের এসিপি পদমর্যাদার অফিসারের নাম জড়াল ধর্ষণ ও অপহরণে! ফের শিরোনামে দিল্লি]
সামান্য এক শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে কেন এমন ধুন্ধুমার পরিস্থিতি এবং এক ছাত্রের মৃত্যু তার কোনও সদুত্তর প্রশাসন দিতে পারেনি। বিশেষ সূত্রে শুধু জানা গিয়েছে, প্রশাসন থেকে গোটা ঘটনার দায় দাড়িভিটা স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্র-ছাত্রী ও গ্রামবাসীদের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে।
[আরও পড়ুন: বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে টেলি অভিনেত্রীকে ধর্ষণ, অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য]
নব্বই দশকের শেষে দক্ষিণ দিনাজপুরের গোপালগঞ্জেও পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের খণ্ডয়ুদ্ধ হয়। তাতেও পুলিশের বিরুদ্ধে নির্বিচারে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় এক ছাত্র-সহ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই ঘটনাকে নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। পুলিশের বিরুদ্ধেঅভিযোগ ছিল বিক্ষোভ দেখানো ছাত্রদের বুকের উপর গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশ তথা তৎকালীন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা লড়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন কারামন্ত্রী তথা বালুরঘাটের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর চক্রবর্তী।
[আরও পড়ুন:বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচল জেট-এর বিমান! মাঝআকাশে ঘটতে পারত ভয়ঙ্কর ঘটনা ]