লালগড়ের চেনা পথে ফিরছেন ছত্রধর, বিজেপি-দমনে তিনিই কি তবে তুরুপের তাস মমতার
রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন ছত্রধর মাহাতো। কলকাতা হাইকোর্টে এই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ কমে ১০ বছর হয়।
রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন ছত্রধর মাহাতো। কলকাতা হাইকোর্টে এই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ কমে ১০ বছর হয়। তারপর অবশেষে আসে মুক্তির দিন। সমস্ত আইনি জটিলতা ও মামলার ফাঁস কাটিয়ে ছত্রধর ফের ফিরছেন লালগড়ে। এবার তিনি কোন দলে যোগ দেবেন, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে।
একার হাতে সিপিএমকে শুইয়ে দিয়েছিলেন
জঙ্গলমহলে জনসাধারণের কমিটির নেতা ছিলেন তিনি। একার হাতে সিপিএমকে তিনি শুইয়ে দিয়েছিলেন লালগড়ে। কিন্তু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সফর চলাকালীন ল্যান্ডমাইনে বিস্ফোরণকাণ্ডে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। মাওবাদী তকমার পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তিনি যাবজ্জীবন কারাদম্ডে দণ্ডিত হন। এছাড়া আরও অনেক মামলা হয় তাঁকে ঘিরে।
তিনি মুক্ত, ফিরছেন জঙ্গলমহলে
এখন সমস্ত মামলা থেকে তিনি মুক্ত। ফিরছেন জঙ্গলমহলে। লালগড়ে ফিরে তিনি কোন দলের মুখ হয়ে ওঠেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। ইতিমধ্যেই তৃণমূল ব্লক সভাপতি তাঁকে পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। স্বভাবতই তাঁর তৃণমূল-যোগই স্বাভাবিক। কেননা আগেও তিনি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাঁদে কাঁধ মিলিয়ে রাজনীতি করেছেন।
জঙ্গলমহলে বিজেপিকে ধরাশায়ী করতে
তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে কমে ১০ বছর হওয়া এবং পুরোপুরি মু্ক্ত হয়ে লালগড়ে ফেরা আর আসন্ন পুরভোট ও আসন্ন বিধানসভা ভোট-প্রস্তুতির সন্ধিক্ষণ মিলে যাওয়ার পিছনে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তৃণমূল তাঁকে এনে জঙ্গলমহলে বিজেপিকে ধরাশায়ী করতে পারে।
ঘুরে গিয়েছে জঙ্গলমহল, তাই
আবার এমনও প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে ইতিমধ্যে ছত্রধরের কোনও গেরুয়া লিঙ্ক তৈরি হয়নি তো! কেননা জঙ্গলমহল অনেকটাই ঘুরে গিয়েছে গেরুয়ার দিকে। সেই পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই মমতার হাত ছেড়ে তারা মুকুল-দিলীপদের উপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে বেশি। এই অবস্থায় ছত্রধর কোন পথে রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করেন, তা-ই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
মুক্তির স্বাদ পেলেন ছত্রধর
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মুমতাজ খান ও বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ ছত্রধরের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের দেওয়া যাবজ্জীবনের সাজা মুকুব করে ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখে। যার মেয়াদ শেষ হতেই মুক্তির স্বাদ পেলেন ছত্রধর। অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬ সিপিএম নেতাকে অপহরণ এবং রামগড় পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টা- এই দুটি পৃথক মামলাতেও কলকাতা হাইকোর্টে জামিন পান ছত্রধর মাহাতো। শনিবার ঝাড়খণ্ডের মামলাগুলো থেকেও আইনি জট কাটিয়ে পুরোপুরি মুক্তি পেলেন মাওনেতা ছত্রধর।
সেদিন ছত্রধর
২০০৮-এর নভেম্বরে শালবনির জামবেদিয়ায় জিন্দল কারখানার শিল্যান্যাস সেরে মেদিনীপুরে ফেরার পথে ভাদুতলায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে মাওবাদীদের মাইন বিস্ফোরণের মুখে পড়েন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ তখনই সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে ছত্রধর মাহাতোর নাম। পরবর্তীতে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার ঘটনাতেও অভিযোগ ওঠে ছত্রধর মাহাতদের বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক বেশে একটি সভা থেকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় জনসাধারণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতো-সহ ৬ জনকে।
যে সব ধারায় অভিযুক্ত ছত্রধর
ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২১, ১২২, ১২৩ ও ১২৪ ধারা এবং ইউএপিএ-এর ২০, ৩৮, ৩৯ ও ৪০ নং ধারা অনুযায়ী নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা, তার সদস্য হওয়া, নিষিদ্ধ সংগঠনকে সমর্থন করা, আর্থিক বা অন্যান্য ভাবে সহযোগিতা করা এবং অস্ত্র আইন-সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়। ২০১৫-র মে মাসে ছত্রধর মাহাত-সহ ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেয় মেদিনীপুর আদালত। মেদিনীপুর জেলা চতুর্থ অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক কাবেরী বসু সাজা ঘোষণা করেন।
আইনি জট কাটিয়ে মুক্ত, এবার কোন পথে
ইউএপিএ আইনে ছত্রধর মাহাতো ছাড়াও সুখশান্তি বাস্কে, শাগুন মুর্মু, শম্ভু সোরেন, রাজা সরখেল এবং প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের যাবজ্জীবন সাজা হয়। জেলে থাকাকালীন মারা যায় রঞ্জিত সরকার। ছত্রধর-সহ বাকিরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলাতেই আদালতে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাদেরকে নির্দিষ্ট ধারায় দোষী প্রমাণ করা যায়নি। ফলে বেশ কয়েকটি ধারা থেকে অব্যাহতি পান তারা।