এমবাপেরা জিতলেই 'ফরাসডাঙা'-য় নামবে অকাল জগদ্ধাত্রীর রাত
ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে তুমুল উন্মাদনা একসময়ের ফরাসী উপনিবেশ চন্দননগরে। অবশ্যই ফ্রান্সের জয় চাইছেন বাসিন্দারা।
বেলজিয়ামের বনাম ব্রাদিল কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ শেষ হতেই এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একজন লিখেছিলেন বাঙালীর বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হইল। উত্তরে সঙ্গে সঙ্গেই একজন লিখেছিলেন, দাদা চন্দননগর এখনও বিশ্বকাপে টিকে আছে। ব্যাপারটা কী? তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, ভুলে যাবেন না চন্দননগর ফরাসী উপনিবেশ ছিল, আর ফরাসীরা এখনও বিশ্বকাপে দৌড়চ্ছে।
চন্দননগরের সেই সমর্থনই আবেগের বোমা হয়ে আছড়ে পড়েছিল সেমিফাইনালে ফ্রান্স বেলজিয়ামকে হারানোর পর। ফাইনালে উঠেছে পোগবা-এমবাপেরা, আর একসময়ের ফরাসী উপনিবেশ চন্দননগরে ঢাক-ঢোল-রণপা আর ফ্রান্সের লাল-সাদা-নীল পতাকা নিয়ে বেরিয়েছে শোভাযাত্রা।
ছেলে-বুড়ো-মহিলা দলে দলে চন্দননগরবাসী সামিল হয়েছেন সেই শোভাযাত্রায়। ছিল মুখোশ নাচ, গানের আসর, বল জাগলারি। গঙ্গার পারে তখন যেন এক টুকরো ফ্রান্সই উঠে এসেছে। বিশ্বকাপের শুরুর দিকে অবশ্য চন্দননগরের এই উন্মাদনা ছিল না। কিন্তু এমবাপে-গ্রিজম্য়ানরা একবার ডানা মেলতে শুরু করতেই রাস্তায় নেমে এসেছে গোটা চন্দননগর।
তবে এনিয়ে বিতর্কও আছে। চন্দননগরেরই অনেকে বলছেন ঔপনিবেশিকদের প্রতি এই আদেখলামো প্রদর্শন, মোটেই ভাল দেখায় না। তারা তুলেছেন চন্দননগরের সম্বৃদ্ধ বস্ত্রশিল্প ধংস করে ফরাসীদের নীল চাষ শুরুর কথা, চন্দননগরের মানুষদের ক্রীতদাস করে ফ্রান্সে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা।
ফরাসী সমর্থকরা পাল্টা বলছেন স্ট্য়ান্ড থেকে মিউজিয়াম যে সুসজ্জিত চন্দননগর শহর তাদের গর্ব, সেটা তো ফরাসীদের হাতেই তৈরি। তাছাড়া এখনও চন্দননগর পৌরসভা থেকে কলেজে ফরাসী সরকারের অনুদান আসে। তাদের ফরাসীদের সঙ্গে নাড়ির যোগ আছে।
আজ রবিবার বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ায ঠতই বিতর্ক থাকুক সব পেছনে ফেলে এদিনও সকাল থেকেই চন্দননগরের স্ট্র্য়ান্ড সেজে উঠেছে ফ্রান্সের জাতীয় পতাকায়। সেই পতাকার রঙে মুখ রাঙিয়ে জমজমাট ফুটবল কার্ণিভালে সামিল হয়েছে বহু চন্দননগরবাসী।
এতদিন পাড়ায় পাড়ায় ক্লাবে টিভি চালিয়ে চলেছে খেলা দেখা। কিন্তু সেমিফাইনালেই স্ট্র্যান্ডে একটি জায়ান্ট স্ক্রিন লাগানো হয়েছিল। ফাইনালে সবমিলিয়ে অন্তত ৪ টি জায়ান্ট স্ক্রিন থাকছেই সেখানে। জায়ান্ট স্ক্রিনে কেলা দেখার ব্যবস্থা হয়েছে উচ্চর চন্দননগরের বিবির হাটেও। আবার শোনা যাচ্ছে ইনস্টিটিউট দে চন্দননগরের উদ্যোগেও একটি খেলা দেখার আয়োজন হতে পারে।
সাধের ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা নিদেন পক্ষে ইংল্যান্ড না থাকায় আজ যেমন বাংলার ফুটবল উৎসাহীদের বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে উন্মাদনা অনেকটাই কম। কিন্তু তার মধ্যেই উৎসাহ উদ্দীপনায় টগবগ করে ফুটবে 'ফরাসডাঙা'। পোগবারা বল গোলে ঢোকাতে পারলেই নেমে আসবে অকাল জগদ্ধাত্রীর রাত। আর না পারলে, লে ব্লু-দের সঙ্গেই হয়ত কাঁদবে চন্দননগরের মন। তবে '৯৮-এ জিদানদের সই করা বল পেয়েছিল চন্দননগরের সব স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। এবার এমবাপে-পোগবাদের সাক্ষরিত বলও আসবে বলেই ধরে নিয়েছে একসময়ের এই ফরাসী উপনিবেশ।