মুকুলে মোদীর আস্থা কোন পর্যায়ে! যার জন্য পেতে চলেছেন এমন ভিভিআইপি নিরাপত্তা
পাহাড়ে যখন বহু মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত, সেখানে বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর মুকুল রায়কে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে এত ঘটা কেন?
তৃণমূলের বিরুদ্ধে 'বিদ্রোহ' ঘোষণা করে আগেই ছেড়েছেন রাজ্য সরকারের দেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজ্যের নিরাপত্তা ছাড়ার পরই তিনি পেয়ে গেলেন কেন্দ্রের নিরাপত্তার আশ্বাস। সম্প্রতি মুকুল রায়কে দুই প্রকার নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তাঁকে দিল্লিতে একরকম, কলকাতায় আর একরকম নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
[আরও পড়ুন : মুকুল রায়কে কেন দলে নিচ্ছে বিজেপি, এই ১০ পয়েন্টে মিলবে উত্তর]
সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়েছেন মুকুল রায়। তাঁর বিজেপিতে যাওয়ার সিদ্ধান্তও প্রায় পাকা। বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, মুকুলবাবুর বিজেপিতে যোগদানের দিনক্ষণও পাকা হয়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তড়িঘড়ি দিল্লিতে গিয়ে এই বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেললেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ।
তিনি আশঙ্কা করছিলেন, যে কোনও দিন আক্রান্ত হতে পারেন নিজের রাজ্যেই। বিশেষ করে জেলা সফরে গেলে তৃণমূল কর্মীদের একাংশ তাঁর উপর চড়াও হতে পারেন। এতদিন জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা ভোগ করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু এখন কোনও নিরাপত্তা নেই তাঁর। সেই আশঙ্কার কথাই তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে জানান। সেই মোতাবেকই মুকুল রায়কে নিরাপত্তা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
[আরও পড়ুন : মুকুলই কি পরবর্তী সভাপতি! মোদীর নির্দেশে রাজ্যে নতুন রূপে আসছে বিজেপি]
জানা গিয়েছে, মুকুল রায়কে দিল্লিতে এক্স ক্যাটাগরির নিরাপত্তা আর কলকাতায় ওয়াই ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়া হবে। ফলে দিল্লিতে থাকলে সর্বক্ষণের জন্য তাঁর সঙ্গে একজন স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী থাকবেন। আর কলকাতা-সহ জেলাসফরে তাঁর সঙ্গে চারজন নিরাপত্তারক্ষী থাকবে। সঙ্গে থাকবে এসকর্ট কারও।
এখনও তিনি বিজেপিতে যোগ দেননি। তাঁর আগেই তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সুবিধা পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা পেয়ে গেলেন। ফলে তাঁর আশঙ্কাও কাটল। তাঁর বিজেপিতে যাওয়ার এটা একটা বড় কারণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কেননা ঘনিষ্ঠমহলে তিনি বারবার নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
মুকুল রায় নতুন দল গড়েও পিছিয়ে যান। মুকুলবাবু এই নিরাপত্তার প্রশ্নে পিছিয়ে যান বলে মনে করছে ওই দলেরই একাংশ। মুকুল রায় বিজেপিতে গেলে অনেকেই তাঁর সঙ্গে থাকতে পারবেন না, তা জানানো সত্ত্বেও মুকুল রায় বিজেপির দিকে পা বাড়িয়ে দেন।
তিনি তাঁর অনুগামীদের জানান, আমার নিজেরই নিরাপত্তা নেই, আমার সঙ্গে যাঁরা আসবেন, তাঁদের নিরাপত্তা দেব কীভাবে। যেহেতু রাজ্যের শাসকদল ভেঙে তাঁর সঙ্গে আসবেন নেতা-কর্মীরা অনেকে, তাঁদের উপর হামলাও হতে পারে। নতুন দলে যোগ দিলে তিনি রাজ্য এবং কেন্দ্র কোনও তরফেই নিরাপত্তা পেতেন না। ফলে অন্যদের নিরাপত্তা দেওয়াও তাঁর পক্ষে সমস্যার হত। কিন্তু বিজেপিতে গেলে তাঁকে সেই সমস্যায় পড়তে হবে না।
দিন তিনেক আগে রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পরই মুকুল রায়ের নিরাপত্তার সিদ্ধান্ত পাকা হয়। মুকুল রায়কে তখনই আশ্বস্ত করেছিলেন রাজনাথ সিং। এখন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরকে মুকুল রায়ের নিরাপত্তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেইমতো কাগজপত্র প্রস্তুত করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে মুকুল রায়কে এমন ভিভিআইপি নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি ভালো ভাবে নিচ্ছে না রাজ্য সরকার। প্রশ্ন উঠছে, পাহাড়ে যখন বহু মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত, সেখানে বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর মুকুল রায়কে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে এত ঘটা কেন? তাহলে কি পাহাড়ের মানুষের থেকে মুকুল রায়কে নিরাপত্তা দেওয়া বিজেপির কাছে আগে?
উল্লেখ্য, মুকুলবাবু রেলমন্ত্রী থাকাকালীন জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেয়ে আসছিলেন। তারপর মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার পরও রাজ্য সরকার তাঁকে জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দিয়ে আসছিল। সেই নিরাপত্তা নিজেই ছেড়ে দেন মুকুল রায়। রাজ্যকে বার্তা দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েই তিনি পেয়ে গেলেন বিশেষ নিরাপত্তা। এই সিদ্ধান্ত মুকুল রায়ের নয়া অবস্থানের আগাম জানান দিয়ে গেল অবশ্যই।