সুদীপের জামিনের মোকাবিলায় তাপসকেই ঢাল বানাচ্ছে সিবিআই
সু্প্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে একই অভিযোগে তাপস পালের জামিন আর্জি খারিজকেই অস্ত্র হিসেবে তুলে ধরে সুদীপের জামিনের বিরোধিতা করবেন সিবিআই আইনজীবীরা।
একই চার্জ। একই আদালত। একই এজলাস। তাহলে পৃথক ফল কেন? রোজভ্যালিকাণ্ডে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিন প্রসঙ্গে এখন এই অবস্থান নিয়েই যুক্তি খাড়া করছে সিবিআই। সিবিআই আইনজীবীরা তুলে ধরতে চাইছেন- একই অভিযোগে তাপস পালের জামিনের আর্জি যদি খারিজ হয়ে যেতে পারে, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিন মঞ্জুর করা হল কীভাবে? সিবিআই আইনজীবী কে রাঘবাচারিউলু সেই প্রশ্নই তুলে ধরলেন এবার।
সিবিআইয়ের কাছে ওড়িশা হাইকোর্টের এই রায় নিরাশাজনক। তারা মনে করছে সুপ্রিম কোর্টে ওড়িশা হাইকোর্টের এই রায় ধোপে টিকবে না। সু্প্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হয়ে তাপস পালের জামিন আর্জি খারিজকেই অস্ত্র হিসেবে তুলে ধরবেন সিবিআই আইনজীবীরা।
চার্জশিট পেশ করার কয়েকদিন আগে তাপস পালের জামিনের আর্জি খারিজ করে দেয় ওড়িশা হাইকোর্ট। একই অভিযোগে সুদীপের জামিন মঞ্জুর করে দেওয়া হল এদিন। এই পরস্পরবিরোধী রায় কেন? আদালতের যুক্তি, সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতিতে দু'টি মামলা আদালতে ওঠে। তাপস পালের মামলাটি যখন ওঠে, তখন রোজভ্যালিকাণ্ডে চার্জশিট দাখিল হয়নি। এখন চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। সেখানে দু'জনের নামই রয়েছে।
এমতাবস্থায় চার্জশিট পেশের পর সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন ওড়িশা হাইকোর্টে। সেই জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে প্রভাবশালী তত্ত্ব উড়িয়ে। এখানে একটা কথাই বোঝানো হয়েছে, একটা মামলার চার্জশিট পেশের পর আর তদন্তে প্রভাব খাটানোর তত্ত্ব কাজ করে না। সেই বিচারে এখন তাপস পালের মামলা পুনরায় উঠলে তাঁর জামিনও মঞ্জুর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে সিবিআই।
সিবিআই প্রথম থেকেই রোজভ্যালি মামলাকে রাজ্যের বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। যার জন্য তারা আদালত থেকে অনুমতি পায় ও রোজভ্যালি কাণ্ডে প্রভাবশালী তত্ত্বে ২ তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যাকে ওড়িশায় নিয়ে যেতে সমর্থ হয়। মামলার ক্রমপর্যায়ে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস পাল দুজনেই জামিন পেতে আদালতের সামনে হাতিয়ার করেছেন তাঁদের অসুস্থতাকে। তাপস পালের জামিনের আবেদন বহু আগেই নাকচ হয়।
কিন্তু চার্জশিট পেশের পর থেকেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিন নিয়ে তোড়জোর শুরু করেন তাঁর আইনজীবীরা।কটক আদালতের সাম্প্রতি জামিনের শুনানিতে সুদীপের আইনজীবীরা ফের সেই তাঁর অসুস্থতাকে বিতর্কের সামনে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু সিবিআই আদালতের সামনে তথ্য প্রমাণ পেশ করে ও সিসিটিভি ফুটেজ জমা করে সিবিআই দেখিয়ে দিয়েছিল সুদীপের অসুস্থতা আসলে একটা ভাঁওতাবাজী।
অ্যাপেলো হাসপাতালের সুইটকে কীভাবে লাক্সারি হোটেলের বিলাসে পরিণত করেছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তাও তথ্য প্রমাণ সহকারে আদালতের হাতে তুলে দিয়েছিল সিবিআই। কটক আদলতের বিচারকও সিবিআইয়ের এই অবস্থানে বিশ্বাস রেখেছিলেন। ফলে সুদীপের জামিন নাকচ হয়। সেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর অসুস্থতার কথা বলে কীভাবে হাইকোর্টে জামিন পেলেন, তা নিয়ে বিস্মিত কেন্দ্রীয় তদন্তাকীর সংস্থা। তাই সুদীপের জামিন খারিজের জন্য তারা এখন প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।