বাংলায় বন্যা ত্রাণে দুর্নীতির অভিযোগ, মমতার সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ক্যাগের তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
দুই জেলায় রাজ্যে বন্যা ত্রাণে দুর্নীতির অভিযোগ, মমতার সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ক্যাগের তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
বন্যা ত্রাণে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে গত কয়েকমাস ধরে হাইকোর্টে শুনানি চলছে। এব্যাপারে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের তরফে এর আগে রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করা হয়েছিল। এবার সেই দুর্নীতির অভিযোগের ক্ষেত্রে ক্যাগকে দিয়ে তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের। পাশাপাশি কেন্দ্রকে এব্যাপারে নজরদারি করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফ থেকে।
২০১৭ সালের বন্যা ত্রাণে দুর্নীতির অভিযোগ
২০১৭ সালে মালদহ ও মুর্শিদাবাদের বন্যার পরে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ করেছিল সাহায্যের জন্য। সেই টাকা বিলিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, আসল ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণের টাকা পাননি। অন্যদিকে যারা ক্ষতিগ্রস্তই নন, তারা এক নয় একাধিকবার ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়েছেন, বলা ভাল অ্যাকাউন্টে ঢুকে গিয়েছিল সরকারি টাকা। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৭০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছিল।
টাকা উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল রাজ্য সরকার
আগে এই মামলার শুনানি চলছিল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে। অগাস্টে শুনানির সময়ে তাঁদের সামনে তৎকালীন কৌসুলি কিশোর দত্ত বলেছিলেন, বিষয়টি জানার পরে পঞ্চায়েত প্রধানকে শোকজ করা হয়েছে, টাকাও উদ্ধার করা হচ্ছে। সেই সময় বিচারপতি বিন্দর সরকারি আইনজীবীকে ভর্ৎসনা করে বলেছিলেন, শোকজ করলেই কাজ শেষ হয় না। যাঁদের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, তাঁরা কি টাকা পেয়েছেন? আদালতের প্রশ্ন ছিল, পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে কি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে?
ক্যাগকে দিয়ে তদন্তের নির্দেশ
বর্তমানে বন্যাত্রাণের এই মামলাটি রয়েছে বর্তমান প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চে। এদিন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, ক্যাগ এই দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করবে। আর কেন্দ্র সেই তদন্তে নজর রাখবে। তদন্তে রাজ্য সরকারকে সবরকমের সহযোগিতা করতে হবে। পাশাপাশি আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যে রিপোর্ট জমা দিয়ে রাজ্য সরকারকে বলতে হবে, বন্যা ত্রাণে কত টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, কতটাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে খরচ করা হয়েছে, কত টাকা উদ্ধার করা গিয়েছের মতো তথ্য।
আমফানে দুর্নীতির অভিযোগ স্বীকার করেছিল রাজ্য
২০২০-তে করোনা হানা দেওয়ার পরে মে মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ একাধিক জেলায় আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আমফান। সেই সময় কেন্দ্রের পাঠানো ত্রাণের টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। বিরোধী বিজেপি ও সিপিএম-এর তরপে অভিযোগ ছিল, যাঁদের ক্ষতি হয়নি তাঁরা ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন। সেখানেই শেষ নয়, পরিবারের একাধিক ব্যক্তি ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন। প্রথমে অস্বীকার করা হলেও, পরে রাজ্য সরকারের তরফে দুর্নীতির কথা কার্যত স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে এদিনের হাইকোর্টের নির্দেশ রাজ্য সরকারের ওপরে যে চাপ বাড়াল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।