একুশের আগে সিএএ কাঁটায় বিদ্ধ বিজেপি শিবির! বাংলা-অসমে জয়ের লক্ষ্যে কোন সমীকরণ?
চলতি বছরের ১১ ডিসেম্বর এক বছর পূর্ণ হয়েছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের। এক বছর আগে ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে সিএএ বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে গুয়াহাটি। বিতর্কিত আইনটির বিরুদ্ধে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখায় অসংখ্য মানুষ। বিক্ষোভকারীদের হটাতে গুলি চালায় পুলিশ। যাতে স্যাম স্ট্যাফোর্ড নামে এক নাবালক-সহ ৫ জনের মৃত্যু হয়। বাংলাতেও কম হিংসা হয়নি। এরপরই দেখতে দেখতে এক বছর কেটে গেল।

বেসুরো শান্তনু ঠাকুর
এরই মধ্যে বিজেপি সাংসদ তথা মতুয়া সম্প্রদায়ের অন্যতম সদস্য শান্তনু ঠাকুর সিএএ লাগুর দাবিতে বিদ্রোহের সুর চড়াতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাঁরা প্রতারিত হয়ে ভারতে আসবেন তাঁদের হিন্দুত্বের পরিচয়পত্র দেবে মতুয়া সংঘ। মতুয়া সংঘ যে পরিচয়পত্র দেবে তা সব থেকে বড় হিন্দুত্বের পরিচয়পত্র হবে। এই পরিচয় থাকলে মতুয়া সংঘ নিশ্চিত সেই ব্যক্তি হিন্দু।

এখনই সিএএ, এনআরসি নয়
তবে তা সত্ত্বেও রাজ্যেও অমিত শাহ এসে বলেন, এখনই সিএএ, এনআরসি নয়। করোনা পরিস্থিতির জন্য সিএএ, এনআরসি লাগু করা যাচ্ছে না৷ তবে টিকাকরণ শুরু হলেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ জানান অমিত শাহ৷ বোলপুরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, 'সিএএ-র নিয়ম-কানুন তৈরি করা হচ্ছে। করোনা প্যানডেমিকের মধ্যে এত বড় অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। কোরোনা টিকাকরণের প্রক্রিয়া শুরু হলে আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করব।'

মুখ্যমন্ত্রী ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন
একদিকে যখন সিএএ নিয়ে মানুষের মনে রয়েছে সংশয়, সেখানে বিজেপির নজরে রয়েছে মতুয়া ভোট। বাংলায় মতুয়ারা বহু সীমান্তবর্তী এলাকার আসনে 'ডিসাইডিং ফ্যাক্টর'। সেখানে সিএএ নিয়ে সাংসদ শান্তনু ঠাকুর ক্রমাগত বেসুরো হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতার অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন।

২৫ জন সিএএ বিরোধী প্রতিবাদীর মৃত্যু
এর আগে দেশজুড়ে ২৫ জন সিএএ বিরোধী প্রতিবাদীর মৃত্যু হয়। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে সিএএ বিরোধিতায় নর্থইস্টের রাজ্যগুলিতে বনধ ডাকা হয়েছিল। যাতে ব্যাপক সাড়া পান বনধ সমর্থনকারীরা। সিএএ বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন চলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস অবধি। প্রতিবাদ স্তিমিত হয় কোভিডের জেরে শারীরিক দূরত্ব, লকডাউন ইত্যাদি কারণে।

ভোটে জেতার কৌশল ফাঁদছে বিজেপি
এই বিভ্রান্তিমূলক পরিস্থিতিতে বিজেপির মূল লক্ষ্য হল ভোট বৈতরণী পার করা। এই লক্ষ্যে একদিকে যখন বিজয়বর্গীয়দের মতো নেতারা স্থানীয় স্তরে সিএএর পক্ষে কথা বলবেন, সেখানে অমিত শাহ, নাড্ডার মতো কেন্দ্রীয় নেতারা এটা নিয়ে টালবাহানা করবেন করোনা অজুহাতে। এভাবেই দুই পক্ষের মন যুগিয়েই ভোটে জেতার কৌশল ফাঁদছে বিজেপি।

পরবর্তীতে এনআরসিও লাগু করা হবে বাংলায়
অসমে বিজেপির জনভিত্তি প্রমাণিত হয়েছে বোড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনসট্রেশনের নির্বাচনে। অপরদিকে শুভেন্দুর অন্রভুক্তিতে বঙ্গ বিজেপিতে নতুন অক্সিজেন মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে গেরুয়া ঝড় আনতে সিএএর আশ্রয় বিজেপি হয়ত নেবে না। তবে ভোটে জিতে এলে নিশ্চিত ভাবে সিএএ এবং হয়ত পরবর্তীতে এনআরসিও লাগু করা হবে বাংলায়।