মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করা যাবে না, নার্সিংহোম কর্তাদের কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
ইট-কাঠ বেচা আর জীবন বাঁচানো এক জিনিস নয়। মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা তিনি বরদাস্ত করবেন না। তাঁর কথায়, সেবা কখনও বিক্রি করা যায় না।
কলকাতা, ২২ ফেব্রুয়ারি : ইট-কাঠ বেচা আর জীবন বাঁচানো এক জিনিস নয়। মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা তিনি বরদাস্ত করবেন না। তাঁর কথায়, সেবা কখনও বিক্রি করা যায় না। বুধবার টাউন হলে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম কর্তাদের বৈঠকে মানুষের সাধ্যের মধ্যে চিকিৎসা খরচ নির্ধারিত করার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেজন্য বেসরকারি হাসপাতালে ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকান চালুর পরামর্শ দিলেন তিনি। স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিলেন, এ রাজ্যে দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো চিকিৎসা খরচ নেওয়া যাবে না। সেইসঙ্গে ই-প্রেসক্রিপশন বাধ্যতামূলক করার নিদান দিলেন মুখমন্ত্রী। পাশাপাশি সাধারণের অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, কোথাও কোথাও বেশি চার্জ নেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও অবহেলা হচ্ছে। তা অস্বীকার করা যাবে না। তবু ক্ষোভ থাকলেও আইন হাতে নেওয়া উচিত নয়। সিএমআরআইয়ে যা হয়েছে, তা সমর্থনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে গুলির বিরুদ্ধে বিল না দেওয়ায় মৃতদেহ আটকে রাখার সাঙ্ঘাতিক অভিযোগও উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন হাসপাতাল কর্তাদের হুঁশিয়ারি দেন অনেক মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে যান, তাই পরিষেবা দিতে হবে বেসরকারি হাসপাতালকেও। তিনি বলেন মনে রাখবেন, সেবা কখনও বিক্রি করা যায় না।
বহুদিন ধরেই বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। সেই অভিযোগ খতিয়েও দেখা হচ্ছে রাজ্যের তরফে। ইতিমধ্যে ৯৪২টি নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতালে তদন্ত চালানো হয়েছে। ৭০টিকে শোকজ করা হয়েছে। ৩৩টির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। শুধু এ রাজ্যের মানুষরাই নন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও নেপালের মানুষও অভিযোগ জানিয়ে যাচ্ছেন কলকাতার হাসাপাতালগুলির বিরুদ্ধে।
এটা বাংলার পক্ষেও ভালো দৃষ্টান্ত নয়। তাদের অভিযোগ, কলকাতার বেসরকারি হাসপাতলে চার্জ বেশি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মনে রাখা উচিত, রাজ্যে জীবন ধারণের মান বেশি উঁচু নয়। তাই দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো চিকিৎসা ফি এখানে নেওয়া যাবে না।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারি হাসপাতালেগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, সরকারি প্রকল্পের দেওয়া টাকার উপরও চার্জ নেওয়া হচ্ছে। অযথা আইসিইউতে ভর্তির সুপারিশ করা হচ্ছে। দামি পরীক্ষার সুপারিশ করা হচ্ছে। সব পরীক্ষার ক্ষেত্রেই কমিশন নেওয়া হচ্ছে। ভেন্টিলেশনে ভর্তি রাখা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, ত্রাণ তহবিল নিয়েও সমস্যা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে না রোগীদের। স্বচ্ছতার অভাব স্পষ্ট। কিন্তু এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের দোষ দেব না, তাঁদের বাধ্য করা হয় এরকম নানা কাজ করতে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলবেন, ব্যবসা নয়, রোগীদের স্বার্থ সবার আগে। সেই স্বার্থ মেনেই কাজ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন হাসপাতাল ধরে ধরে তাদের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। কেন এত বিল, কেন পরিষেবায় বেশি গুরুত্ব নয়, তাদের কোথায় অসুবিধা, স্বাস্থ্য উন্নয়নে তাদের ভাবনা নিয়ে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। একে একে রাজ্য তথা কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালগুলির কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রসচিব ও স্বাস্থ্য সচিব প্রমুখ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, শিশুপাচার চক্র ও কিডনি চক্র চালাতে দেব না। এই চক্র রুখবই।