মগজহীন শিশু! বিরলের মধ্যে বিরলতম ছেলেকে বাঁচাতে মরিয়া প্রয়াস বাবা-মা’র
রোহিতের মাথায় মগজটাই নেই! বিস্ময়কর সৃষ্টি বিধাতার। এখন সেই মগজহীন শিশুকেই বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টায় নেমেছেন রোহিতের বাবা-মা।
উত্তর ২৪ পরগনা, ১৮ নভেম্বর : জন্মের পর আর পাঁচটা শিশুর মতোই স্বাভাবিক ছিল রোহিত। কিন্তু দু'মাস পর থেকে হঠাৎই বড় হতে থাকে রোহিতের মাথা। কিছুই বুঝতে পারছিলেন না রোহিতের বাবা-মা। বহু ছোটাছুটির পর জানতে পারলেন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত সে। রোহিতের মাথায় মগজটাই নেই! বিস্ময়কর সৃষ্টি বিধাতার। বরলের মধ্যে এই ঘটনা বিরলতম বলে মনে করছে চিকিৎসক মহল। এখন সেই মগজহীন শিশুকেই বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টায় নেমেছেন রোহিতের বাবা-মা।
উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বাসিন্দা চঞ্চল বিশ্বাস ও সোমা বিশ্বাস ছেলে রোহিত। বর্তমানে এক বছর বয়স। মাথাটা বড় হতে শুরু করায় স্থানীয় চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। এরপর বিসি রায় হাসপাতাল ও পরে বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে গিয়ে বিশ্বাস দম্পতি জানতে পারেন ছেলের এই দুরারোগ্য রোগের ব্যাপারে। চিকিৎসকদের কথায়, রোহিতের মাথায় মস্তিষ্কই নেই, রয়েছে শুধুই জল। যা কিনা বিরলঘটনা বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের মতে, মস্তিষ্ক ছাড়া এই ধরনের রোগীদের 'হাইড্রেনসিফেলি' বলা হয়। গোটা বিশ্বে মস্তিষ্কহীন এই ধরনের শিশুর সংখ্যা মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি। এই ধরনের শিশুরা বাঁচে খুব খুব অল্প সময়ের জন্য। মায়ের গর্ভে ফোলিক অ্যাসিডের পরিমাণ কম থাকার জন্য এই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় সঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া না করা ও অল্প বয়সে গর্ভধারণ করার ফলে এই সমস্যা দেখা দেয় শিশুর।
চিকিৎসকদের কথায়, মস্তিষ্ক ছাড়া কোনও মানুষ বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারে না। শুধুমাত্র লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমের সাহায্যে বেঁচে থাকা সম্ভব। এ দেশে এখন পর্যন্ত ৪ জন মস্তিষ্কহীন শিশু জন্মেছে। মায়ের গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন এই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব হলেও, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর এই রোগের চিকিৎসা এখনও অনাবিষ্কৃত।
রোহিতের মা সোমাদেবী জানান, সিজার করে রোহিতের জন্ম। এরপর কয়েকদিন হাসপাতালে থাকার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। রোহিত সুস্থই ছিল। খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিকভাবেই করছিল সে। রয়েছে তাঁর। দু'মাস বয়স থেকে হঠাৎই রোহিতের মাথাটা ক্রমশ বড় হতে শুরু করে। অশোকনগরের কয়েকজন চিকিৎসদের প্রথম দেখানো হয়। চিকিৎসকরা সুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন সুস্থ না হওয়ায় তাঁকে বি.সি রায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে সিটি স্ক্যান সহ বেশ কিছু পরীক্ষা করানোর পর চিকিৎসকরা রোহিতকে বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সে পাঠান। সেখানের চিকিৎসকরা জানান রোহিতের মস্তিষ্ক নেই। রয়েছে শুধুই জল। সুতরাং অস্ত্রোপচার করে কোনও ফল হবে না। তাই যেক'টা দিন বেঁচে থাকবে, এই ভাবেই থাকতে হবে তাকে।
রোহিতের
বাবা
চঞ্চলবাবু
জানান,
রোহিতের
মাথা
বড়
ছাড়া
সবকিছুই
স্বাভাবিক
রয়েছে।
খাওয়া
দাওয়া,
হাসি-
কান্না
কোথাও
কোনও
সমস্যা
ছিল
না।
আর
পাঁচটা
শিশুদের
মতোই
ছিল
রোহিত।
এমনকী
রোহিত
বলে
ডাকলেও
সে
ঘুরে
তাকায়।
শুধু
মাথাটি
বড়
হওয়ার
কারণে
সে
দাঁড়াতে
পারে
না।
চঞ্চল
ও
সোমার
একমাত্র
সন্তান
রোহিত।
তাকে
বাঁচিয়ে
রাখার
আপ্রাণ
চেষ্টা
চালিয়ে
যাচ্ছেন
দু'জনেই।
জানেন
তাঁরা
এই
অসম
লড়াই
তাঁরা
কীভাবে
জিতবেন।
টাকার
অভাব
রয়েছে,
কিন্তু
ছেলের
চিকিৎসার
জন্য
শেষ
শ্বাসটুকু
লড়তে
রাজি
ওই
বিশ্বাস
দম্পতি।