আরাবুলের বাগানে বোমার আড়ত! বোমা সংরক্ষণের ‘কায়দা’ দেখে চক্ষু চড়কগাছ
ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের বাড়ির পিছনে বাগানে মিলল বস্তা বস্তা বোমা। মাটিতে গর্ত খুঁড়ে মজুত করে রাখা হয়েছিল ওইসব বোমার বস্তা।
ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের বাড়ির পিছনে বাগানে মিলল বস্তা বস্তা বোমা। মাটিতে গর্ত খুঁড়ে মজুত করে রাখা হয়েছিল ওইসব বোমার বস্তা। বস্তা ও ব্যাগে ভর্তি করে বনজঙ্গলের মধ্যেও লুকিয়ে রাখা ছিল প্রচুর বোমা। অভিযোগ, ভোটের আগে এলাকা সন্ত্রস্ত করতেই এই বোমা মজুত করা হয়েছিল।
[আরও পড়ুন: আরাবুলের গ্রেফতারি কি আইওয়াশ! অগ্নিগর্ভ ভাঙড়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও উঠছে আঙুল]
পুলিশ গ্রামে ঢুকতে না পারায় এই বোমা উদ্ধার করা যায়নি। ক্যামেরায় ধরা পড়ে বস্তা বস্তা বোমার ছবি। এখন সংশয় এই বোমা উদ্ধার করা সম্ভব হবে, নাকি বোমা গুলো সরিয়ে ফেলবেন দুষ্কৃতীরা। শুধু বাগানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল না বোমা, বোমা মজুত রাখা হয়েছিল মাটির নিচে, রাখা হয়েছিল পুকুরের মাঝখানেও।
আরাবুল ইসলামের বাড়ির পিছনে তাঁর বাগানে বোমা মজুত রয়েছে বলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করে আসছিলেন বহুদিন ধরে। এদিনও অগ্নিগর্ভ ভাঙড়ে গ্রামবাসীরা অভিযোগ জানান, এলাকা সন্ত্রস্ত করার জন্য আরাবুলের বাগানে মজুত করে রাখা হয়েছে প্রচুর বোমা। সেইমতো সাংবাদিকরা বাগানে ঢুকে বোমার সন্ধানে পান।
বাগানের আনাচে-কানাচে যেমন ছড়িয়ে রয়েছে প্রচুর বোমা, তেমনই কোথাও মাটির নিচে, কোথাও জঙ্গলের মধ্যে, কোথাও খড় চাপা দিয়ে মজুত করে রাখা হয়েছে বোমা। এমনকী পুকুরের মাঝখানে খাঁচা তৈরি করে বোমা মজুত রাখার ছবিও ধরা পড়ে ক্যামেরায়।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে এলেও বোমাগুলি উদ্ধার করা যায়নি। তার কারণ ভাঙড়ে আন্দোলনের জেরে পুলিশ ঢুকতে পারছে না গ্রামে। এই অভিযোগ পাওয়ার পর সাংবাদিকরা গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। মুখে কাপড় বাঁধা একদল যুবক তাঁদের বাধা দেন। পরে অন্য রাস্তা দিয়ে সাংবাদিকরা ঢোকেন। এই সময় খামারে কর্মরত চাষিরা সাবধান করেন মাটির নিচে বোমা রাখা হয়েছে বলে। তাঁরা সাবধানে পা ফেলার পরামর্শও দেন। এরপরই চিত্র-সাংবাদিকদের ক্যামেরায় যা উটে আসে, তাতে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যাওয়ার জোগাড়।
এদিকে, আরাবুল ইসলামের গ্রেফতারিকে আইওয়াশ মনে করে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন ভাঙড়ের জমি আন্দোলনকারীরা। তাই আন্দোলনের রাস্তা থেকে না সরে অবস্থান-বিক্ষোভ চালাচ্ছেন তাঁরা। শনিবার ভাঙড়ের নতুন হাট থেকে শুরু করে রাস্তা মোড়ে মোড়ে দফায় দফায় অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে দাবি তুলেছেন বাকি ১২ জনকেও গ্রেফতার করতে হবে।
উল্লেখ্য, ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনকারীরা শুক্রবার নির্দল প্রার্থীর সমর্থনে মিছিল নতুনহাট মোড়ে পৌঁছলে একদল দুষ্কৃতী হামলা চালায়। মিছিল লক্ষ্য করে বোমা চালানো হয়, চালানো হয় গুলিও। দুষ্কৃতীদের সেই গুলি লেগেই মৃত্যু হয় হাফিজুল মোল্লা নামে এক আন্দোলনকারীর। এরপর অভিযুক্তদের গ্রেফতারির দাবিতে হাড়োয়া রোড অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে এরপর পুলিশ রাতেই আরাবুলকে গ্রেফতার করে। ওই বাগান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
[আরও পড়ুন: অগ্নিগর্ভ ভাঙড়ে আন্দোলনকারীদের পাশে সুজন, নিহত হাফিজুলের পরিবারকে আশ্বাস]
এদিন আরাবুলকে বারুইপুর আদালতে তোলা হয়। সেইসময় আরাবুল দাবি করেন, তিনি নির্দোষ। তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। ঘটনার সময় তিনি উপস্থিতও ছিলেন না। তাঁর উপর মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি দিদিকে বলব, এই ঘটনার প্রকৃত তদন্ত হোক। আমি দোষী নই, এই ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের শাস্তি চান তিনিও। উল্লেখ্য, হাফিজুল হত্যাকাণ্ডে আরাবুলের বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাঁধানো, ষড়যন্ত্র, এলাকা সন্ত্রস্ত ও হত্যার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলা করা হয়েছে অস্ত্র আইনেও।