অঙ্কিত কেশরীর মৃত্যু ঘিরে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের খেলা
কলকাতা, ২১ এপ্রিল : বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের প্রতিভাবান ক্রিকেটার অঙ্কিত কেশরীর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা পর থেকেই শুরু হল অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের রাজনীতি।
শুক্রবার খেলার মাঠেই ক্যাচ ধরতে গিয়ে সহ খেলোয়াড়ের সঙ্গে ধাক্কায় মাথায় ও ঘাড়ে চোট লাগে তাঁর। এরপরই তাঁকে আমরি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু রবিবার রাতেই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের উচ্চপদস্থ আধিকারিক সদানন্দ মুখোপাধ্যায় বন্ডে সই করে তাঁকে অঙ্কিতকে নাইটেঙ্গল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করান। এপর সোমবার সকালেই মৃত্যু হয় অঙ্কিতের। [ফিলিপ হিউজের স্মৃতি উসকে মাথায় আঘাত লেগে প্রয়াত হলেন বাংলা অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটার]
আর অঙ্কিতের মৃত্যু ঘিরে দানা বেঁধেছে বিতর্ক, শুরু হয়ে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের খেলা। সল্টলেকের সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতাল বলছে অঙ্কিতের পরবর্তী চিকিৎসার জন্য তাদের সুযোগই দেওয়া হয়নি। অথচ ইস্টবেঙ্গল আধিকারিক সদানন্দ মুখোপাধ্যায় ঠিক উল্টো অভিযোগটাই করছেন।
আমরি হাসপাতালের বক্তব্য
আমরি হাসপাতালের সিইও রূপক বড়ুয়া জানিয়েছেন, অঙ্কিতের চিকিৎসার জন্য সুযোগটুকু দেওয়া হয়নি, চিকিৎসার জন্য কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন ছিল, যেমন সিটি অ্যানজিও ও আরও কিছু পরীক্ষা। কিন্তু সেই সময়টুকুই দেওয়া হল না ক্লাব ও পরিবারের তরফে 'রিস্ক বন্ডে' সই করে দেওয়ার পর আমরা হাসপাতাল থেকে অঙ্কিতকে ছেড়ে দিই।
ইস্টবেঙ্গল
ক্লাবের
বক্তব্য
যদিও সদানন্দ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছিল অঙ্কিতের শারীরিক অবস্থা সম্পূর্ণ স্থিতিশীল। এর জবাবে ডাঃ বড়ুয়া বলেন, যে চিকিৎসক অঙ্কিতের দেখাশোনা করছিলেন, তিনি অঙ্কিতের অবস্থা স্থিতিশীল জানিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু কখনও হাসপাতাল থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ তিনি কখনওই দেননি।
ইস্ট বেঙ্গল কোচ প্রণব নন্দীর কথায়, হাসপাতালের তরফে কোনওরকম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি। এমনকী চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, সিটি স্ক্যানে কিছুই পাওয়া যায়নি খুব শিগগিরই আমরা অঙ্কিতকে জেনারেল বেডে দিয়ে দেব।
সিএবির-বক্তব্য
অন্যদিকে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল বা সিএবি-র সঙ্গে নাইটেঙ্গল হাসপাতালের টাই-আপ আছে। আমরির পর যেখানে অঙ্কিতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওযা হয়েছিল। যদিও সিএওবি যুগ্মসচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় পিটিআই-কে জানিয়েছেন, টাই-আপ আছে বলে নয়, শুধুমাত্র অঙ্কিতের উন্নত চিকিৎসার জন্য ওর পরিবারের সম্মতি নিয়ে তাঁকে সরানো হয়েছিল।
নাইটেঙ্গল হাসপাতালের বক্তব্য
এদিকে নাইটেঙ্গল হাসপাতালে অঙ্কিতের বুলেটিনে জানানো হয়, অঙ্কিতের নাড়ি স্পন্দনের হার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই কম ছিল। এবং মস্তিষ্কে একটা জায়গা ফুলে গিয়েছিল। যার ফলে 'কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট' (হৃদযন্ত্রে আক্রমণ)-এ মৃত্যু হয় অঙ্কিতের।
সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, অঙ্কিতের মাথার ভিতর ছোট একটি রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। অবস্থার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কারণ মস্তিষ্কে পার্শ্বিক আঘাতের সম্ভাবনা ছিল। পরে অবস্থার অবনতি হতে থাকলে সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় মস্তিষ্কের ফোলা অংশটা আরও বাড়তে শুরু করেছে। সমস্ত রকম ওযুধ দেওয়া সত্ত্বেও তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। আর এই ওযুধগুলিই অঙ্কিতের হৃদযন্ত্রে প্রভাব ফেলে।
অঙ্কিতের বাবার কথায়
এদিকে অঙ্কিতের বাবা রাজকুমারের কথায়,"আমি জানি না কেন অঙ্কিতকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হল। আমরা চেয়েছিলান অঙ্কিতের চিকিৎসায় যেন কোনও ত্রুটি না থাকে, ওর কোচ এবং ইস্ট বেঙ্গল আধিকারিকরা রিস্ক বন্ডে সই করে অঙ্কিতকে আমরি থেকে বের করে আনে।"
অঙ্কিতের কোচের কথায়
অঙ্কিতের প্রথম কোচ অরিজিৎ মজুমদার অবশ্য বলছেন, হয়তো অঙ্কিতকে আমরি থেকে নাইটেঙ্গলে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্তটাই ভুল ছিল।