বিজেপির সমস্যা বাংলায় খানিকটা দিল্লির মতো! একুশে গেরুয়া আকাশে সিঁদুরে মেঘের আনাগোনা
বিজেপির সমস্যা বাংলায় খানিকটা দিল্লির মতো! একুশে গেরুয়া আকাশে সিঁদুরে মেঘ
২০২১-এর ভোটে বাংলাকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। কিন্তু বাংলা বিজয় বিজেপির খুব সহজ হবে না। বাংলায় এমন কিছু সংকট রয়েছে বিজেপির, যা খানিকটা তুলনীয় দিল্লির সঙ্গে। ফলে বিজেপির পক্ষে তা অন্তরায় হয়ে যাবে। উত্তরপ্রদেশে যে সুবিধা পেয়েছিল বিজেপি, সেটা বাংলায় পাবে না। অবশ্যই তার একটা কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতার ভাবমূর্তির সঙ্গে লড়াই বিজেপির।
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের পরে মমতা নিজস্ব একটা উন্নয়নমূলক ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন। বহু উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালু করেছেন। কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে সাইকেল বিতরণ, স্বল্প মূল্যে চাল বিতরণ, রাস্তাঘাট উন্নয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাকে উন্নীত করার পরিকল্পনা করে গিয়েছেন। মমতার ভাবমূর্তি আর কাজ করার মানসিকতা অনেক ইনকাম্বেসি ফ্য্যাক্টরকে দূরে সরিয়ে দেবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক
দিল্লিতে যে সমস্যা বিজেপির, বাংলাতেও তাই
সেটা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সবচেয়ে বড় সমস্যা নয়। বাংলায় বিজেপির সমস্যা খানিকটা দিল্লির মতো। ফায়ারব্র্যান্ড স্ট্রিটফাইটার এবং সক্ষম প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এ রাজ্যে বিশ্বাসযোগ্য মুখের অভাব রয়েছে। এই সংকটের পাশাপাশি, বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ লড়াই বিজেপির কাছে অশনি সংকেত হয়ে উঠেছে।
উত্তরপ্রদেশের সুবিধা বিজেপির নেই বাংলায়
রাজ্য বিজেপি ইউনিট বুঝতে পেরে গিয়েছে, তারা পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে কেবল হিন্দুত্ববাদ ও বিরোধী-কর্মসূচির অ্যাজেন্ডায় নির্বাচন জিততে পারবে না। সেইসঙ্গে বিজেপি এ কথাও জানে যে, প্রধানমন্ত্রী মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বা উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের মতো মুখ বাংলায় পাবে না।
বাংলায় হিন্দুত্ববাদ বা মুসলিম তোষণের অভিযোগ
তারপর বঙ্গ সংস্কৃতিতে বেমানান বিজেপির ভাষাগত ব্যবধান ভোট-ব্যাঙ্কে বাধা হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, হিন্দুত্ববাদ বা মেরুকরণের রাজনীতি এবং মমতার মুসলিম তোষণকে পাথেয় করে বিজেপি ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে পারবে না। ৩৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে বামদের অধীনে ছিল বাংলা এবং বাংলার ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের ইতিহাস ছিল।
মেরুকরণের বিরুদ্ধে, ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের পক্ষে
বাংলার ভোটাররা দিনের শেষে ফের একটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকারকে ক্ষমতায় আনতে বেশি আগ্রহী হতে পারে। উন্নয়নমূলক ধারণা নিয়ে চলা সমান্তরাল কোনও সরকারে তাদের যতটা আগ্রহ, ততটা আগ্রহ ভোট-মেরুকরণের রাজনীতির সঙ্গে নেই। বরং বেশিরভাগ মেরুকরণের বিরুদ্ধে।
বাংলায় ফ্যাক্টর দিলীপ ঘোষ বনাম মুকুল রায়
বঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বনাম মুকুল রায়ের দ্বন্দ্ব কী ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। মুকুল রায় তৃণমূলকে ভাঙার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং বিজেপিকে রাজ্যে ক্ষমতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে তৃণমূল শিবির ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে, এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও সাংঘাতিক ভাঙন দেখা যায়নি। বড় কোনও নেতৃবৃন্দ তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেননি।
বিজেপি বনাম বিজেপির লড়াই বাংলায়
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া শিবির বা বিজেপির মূল শত্রু কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস নয়। বাংলায় বিজেপির মূল শত্রু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নন। বাংলায় বিজেপিকে এবার সবথেকে বেশি লড়তে হবে বিজেপির সঙ্গেই। ২০২১-কে টার্গেট করে বাংলার ভোট ময়দানে নেমেছে বিজেপি। সেখানে নিজেদের সঙ্গে নিজেদের লড়াই-ই মুখ্য হয়ে উঠেছে।
বাংলায় বিজেপির সবথেকে বড় শত্রু কি মমতাই! আপনি তাহলে জানেনই না