মুকুলেই ভরসা বিজেপির! কৈলাশের দায়িত্ববৃদ্ধিতে একুশের আগে চাপা ক্ষোভ দিলীপ শিবিরে
মুকুল রায়ের উপরই ভরসা রাখতে চাইছে বিজেপি। ২০১৯-এর ধারা বজায় রেখে ২০২১-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলকে হারাতে মুকুল রায়কে দরকার বিজেপির। কৈলাশ বিজয়বর্গীয়কে পর্যবেক্ষকের পদে পুনর্বহাল করে তা বুঝিয়ে দিল বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। বিজেপির এই সিদ্ধান্তে দিলীপ ঘোষ শিবির বেশ খানিকটা চাপে।

প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছে মুকুলের গুরুত্বের বিষয়টি
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা শুক্রবার ঘোষণা করেন, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ই বাংলার পর্যবেক্ষক থাকছেন। তাঁকে এই পদে পুনর্বহা করা হল। একইসঙ্গে তাঁর সহকারি পদে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে বিজেপি। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যকে সহ-পর্যবেক্ষক করা হয়েছে। কিন্ত সেই চর্চা ছাপিয়ে প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছে মুকুলের গুরুত্বের বিষয়টি।

কৈলাশের গুরুত্বে দিলীপ ঘোষ শিবিরে চাপা ক্ষোভ!
মুকুল রায় বিজেপিতে ছ-মাসেরও বেশি নিস্ক্রিয় ছিলেন। তখন অমিত শাহের দূত হয়ে এসে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ই মুকুল রায়কে ফের ফ্রন্টফুটে এনেছিলেন। তারপর দিল্লির বৈঠকে গিয়ে মুকুল রায়ের জুটেছিল সর্বভারতীয় সহ সভাপতির পদ। তারপর থেকেই মুকুল রায় শিবিরের উন্মাদনা তুঙ্গে উঠেছে। পক্ষান্তরে দিলীপ ঘোষ শিবিরে চাপা ক্ষোভ ছিল।

কেন ফের ১৫ দিনের মধ্যে উলটপুরান ঘটল?
বিহারের বিধানসভা নির্বাচন ও ১১ রাজ্যে উপনির্বাচনের পর কৈলাশ বিজয়বর্গীয়কে পর্যবেক্ষক পদে বহা রাখা হল। অথচ ভোটের ঠিক আগে তাঁর ডানা ছেঁটে দেওয়া হয়েছিল। বিজেপির থিঙ্কট্যাঙ্ক কৈলাশকে বাংলা ছেড়ে মধ্যপ্রদেশে বেশি সময় দিতে বলেছিল। তাতেই ধন্দ তৈরি হয়, তারপর কেন ফের ১৫ দিনের মধ্যে উলটপুরান ঘটল? কেন ফিরিয়ে আনা হল কৈলাশকে?

একুশে পরিবর্তনের লক্ষ্যে ছাই চাপা থাকছে আগুন
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মুকুল-কৈলাশ জুটিকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। তাই কৈলাশের গুরু্ত্ব দিয়ে ফিরিয়ে আনা হল বাংলায়। এতে প্রমাণ হল বাংলায় মুকুল-কৈলাশ জুটির ম্যাজিক ফের একবার দেখতে উৎসুক বিজেপি। তাতে কিন্তু গোঁসা হওয়া স্বাভাবিক দিলীপ ঘোষ শিবিরের। আপাতত একুশে পরিবর্তনের লক্ষ্যে ছাই চাপা থাকছে আগুন।

বিজয়বর্গীয়কে পর্যবেক্ষক পদে রেখে সহকারী মালব্য
শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা জানান, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়কে পর্যবেক্ষক পদে রেখে সহ পর্যবেক্ষক হিসেবে আনা হচ্ছে অমিত মালব্যকে। অমিত মালব্য বিজেপির আইটি সেলের দায়িত্বে রয়েছেন। অরবিন্দ মেনন বাংলার সহ পর্যবেক্ষক থাকছেন। তার পাশাপাশি অমিত মালব্যকে আনা হচ্ছে বিশেষ দায়িত্বে। তবে শিবপ্রকাশকে বাংলার সহ পর্যবেক্ষক না রাখা হলেও তাঁকে গাইড হিসেবে ব্যবহার করবে বিজেপি।

প্রকারান্তরে মুকুল রায়ের উপরই ব্যাটন একুশে বিজেপির
বিজেপির হাইকম্যান্ড চাইছে কৈলাশকে বাংলায় ফিরিয়ে এনে প্রকারান্তরে মুকুল রায়ের উপরই ব্যাটনটা রেখে দেওয়া। কৈলাশ থাকলে মুকুল রায়কে নিয়ে বিজেপি অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকবে। তাতে দিলীপ ঘোষ বা তাঁর শিবিরের হয়তো একটু ক্ষোভ থাকতে পারে, কিন্তু একুশকে পাখির চোখ করে বিজেপি সেই অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।

মুকুল রায়কে কাজে লাগাতে যে কৈলাশকে দরকার
কৈলাশের ডানা ছাঁটা তারপর ফের কৈলাশকে পুরনো দায়িত্বে আনার পিছনে কী কারণ তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছিল রাজনৈতিক মহল। কেনই বা তাঁর ডানা ছাঁটা হল, কেনই বা ফের তাঁকেই দায়িত্বে বহাল রাখা হল, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যায় বঙ্গ রাজনীতিতে। সেই চর্চাতেই বিজেপির কৌশল স্পষ্ট হয়ে যায়। মুকুল রায়কে কাজে লাগাতে যে কৈলাশকে দরকার বিজেপির।

মুকুল-কৈলাশ জুটিকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা তুলতে চায় বিজেপি
কৈলাশের পর্যবেক্ষক পদে পুনর্বহালের খবর মুকুল শিবিরের পক্ষে বড়ই খুশির, ঠিক ততটাই অস্বস্তির দিলীপ ঘোষ শিবিরের কাছে। কিন্তু সর্বভারতীয় বিজেপি চাইছে বঙ্গে মুকুল-কৈলাশ জুটিকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা তুলতে। মুকুলকে ফ্রন্টফুটে না রাখলে তৃণমূলের ভাঙন প্রবণতাকে ফলপ্রসূ করা যাবে না। দিলীপ ঘোষ তাঁর মতো করো চলবেন, এটাই প্ল্যান বিজেপির।