বিজেপির ৮ ওয়ার্ডে ৮০ নেতা, তৃণমূলের নজর ৭০ ও ৭৪-এ! প্রচার শেষে ভোট অঙ্কে কে এগিয়ে
বিজেপির ৮ ওয়ার্ডে ৮০ নেতা, তৃণমূলের নজর ৭০ ও ৭৪-এ! প্রচার শেষে ভোট অঙ্কে কে এগিয়ে
ভবানীপুর উপনির্বাচনে প্রচারের শেষ লগ্নে ঝড় তুলেছে তৃণমূল-বিজেপি উভয়েই। বিজেপি ৮ ওয়ার্ডে ৮০ নেতাকে এনে প্রচার চালিয়েছে। আর তৃণমূল পৌঁছতে চেয়েছে ভবানীপুরের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে। তৃণমূল সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে কলকাতা পুরসভার ৭০ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডকে। এই পরিস্থিতিতে প্রচার শেষে কে এগিয়ে, তা নিয়েই পর্যালোচনা শুরু করেছে রাজনৈতিক মহল।
৮টি ওয়ার্ডে ৮০ জন নেতা বিজেপির প্রচারে
ভবানীপুর উপনির্বাচনে প্রচারের শেষদিন ছিল সোমবার। শেষ বেলায় উভয় পক্ষই ঝোড়ো ইনিংস খেলতে চায়। সেইমতো এদিন সকাল থেকে কোমর বেঁধে নামে বিজেপি ও তৃণমূল। বিজেপি ৮টি ওয়ার্ডে ৮০ জন নেতাকে নামান। প্রতি ওয়ার্ডে ১০ জন করে নেতা প্রচারে ঝড় তুলতে নামেন। উত্তেজনাও তৈরি হয় প্রচারকে কেন্দ্র করে।
ভবানীপুরের প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছচ্ছে তৃণমূল
আর বিজেপি যখন আট ওয়ার্ডে ৮০ জনকে এনে প্রচার চালাচ্ছে, তৃণমূলের তখন চেষ্টা ভবানীপুরের প্রতিটি বাড়িকে ছুঁয়ে যাওয়া। আর এই অভিযানে নেমে তৃণমূল সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে ৭০ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডকে। এই দুই ওয়ার্ডেই পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ভবানীপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী, তখন এই কেন্দ্রে পিছিয়ে থাকতে চায় না তৃণমূল।
ভবানীপুর মিনি ইন্ডিয়া, ২৪-এর লক্ষ্যে মমতা
ভবানীপুরকে মিনি ইন্ডিয়া বলে ডাকা হয়। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই ভবানীপুরে থাকেন। বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষের বাস ভবানীপুরে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, এই মিনি ইন্ডিয়া থেকেই ২০২৪-এর লক্ষ্যে মানুষের মন বুঝতে চান। সেদিক দিয়ে এই নির্বাচনের গুরুত্ব আসলাদা জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। শুধু মমতার এগিয়ে থাকাই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ২৪-এর স্বার্থ।
প্রচারে পুরো ভবানীপুর কভার করেছে তৃণমূল
তৃণমূল চাইছে এই উপনির্বাচনে মানুষের মন বুঝতে। আট ওয়ার্ডে ৫ নেতাকে নামিয়ে তৃণমূল পুরো ভবানীপুর কভার করতে চেয়েছে। পাঁচ নেতার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে সুব্রত বক্সি ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। তাঁরা বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে মানুষের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা পৌঁছে দেন। ভোট দেওয়ার আহ্বানের পাশাপাশি ২৪-এর লক্ষ্যে মানুষের মনও তাঁরা বুঝতে চান।
অতীত রেকর্ডে মমতা এগিয়ে, নাছোড় বিজেপি
ভবানীপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচনে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরেছেন। নন্দীগ্রামে পরাজয়ের পর তিনি এবার ভবানীপুরে ফিরেছেন জয়ের খোঁজে। এর আগে ঘরের মেয়ের বরাবর সাফল্য পেয়ে এসেছেন ভবানীপুরে। ভবানীপুর কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফেরায়নি। অতীত রেকর্ড ঘেঁটে দেখলেই তা বোঝা যাবে। রাজনৈতিক মহলও মনে করছে ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু বিজেপি বিনা যুদ্ধে সূচাগ্র মেদিনী ছাড়তে নারাজ। লড়াইয়ের ময়দানে শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত রয়েছে বিজেপি।
২০১১ সালের নির্বাচন ও উপনির্বাচনের ফল
২০১১ সাল থেকে বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুরে প্রার্থী হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে তিনি দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র থেকে ছ-বার জয়ী হয়েছেন। ভবানীপুর তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ছিল। ২০১১ সালে ভবানীপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন সুব্রত বক্সি। তিনি সিপিএমের নায়ারণ প্রসাদ জৈনকে হারিয়েছিলেন ৪৯ হাজার ৯৩৬ ভোটে। আর তারপর ২০১১-র উপনির্বাচনে ভবানীপুরে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়কে ৫৪ হাজার ২১৩ ভোটে পরাজিত করেন।
২০১৬-য় ফের মমতা, বিজেপি বাড়ার ইঙ্গিত
এরপর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও ভবানীপুর থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তাঁর বিপক্ষে ছিলেন বামসমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি। এবার বাম-কংগ্রেসের জোটের কঠিন লড়াইয়ের মুখে তৃণমূল সুপ্রিমোর জয়ের ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ২৫৩০১। বিজেপির চন্দ্রকুমার বসু ২৬২৯৯টি ভোট পেয়েছিলেন সেবার। বিজেপির বাড়বাড়ন্ত শুরু হয় তারপর থেকে। বিরোধী সিপিএম-কংগ্রেসের জায়গা নিতে শুরু করে তারা।
২০১৯-এ চমক বিজেপির, একুশে উলটপুরান
তারপর ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তাক লাগিয়ে দেয় ভবানীপুর কেন্দ্রে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় মাত্র ৩ হাজার লিড পান। ৬টি ওয়ার্জে এগিয়ে থাকে বিজেপি। তৃণমূল মাত্র দুটি ওয়ার্ডে। এই অবস্থায় ২০২১-এর নির্বাচনে ভবানীপুরে প্রার্থী না হয়ে মমতা চলে গিয়েছিলেন নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জ নিতে। ২০২১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বিজেপির রুদ্রনীল ঘোষের বিরুদ্ধে তিনি ২৮ হাজার ৭১৯ ভোটে জয়ী হন। এবার ৬টি ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়ে ছিল, বিজেপি এগিয়ে ছলি দুটি ওয়ার্ডে।
২০২১-এর উপনির্বাচনে রেকর্ড জয় পেতে মরিয়া মমতা
২০২১-এর উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের ভবানীপুর থেকে প্রার্থী। তিনি এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ২১৩টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন। কিন্তু নন্দীগ্রামে শুভেন্দু কাছে তাঁকে চ্যালেঞ্জ হারতে হয়েছে স্বল্প ব্যবধানে। তাই ভবানীপুর এবার মমতার রেকর্ড জয় ছিনিয়ে আনতে মরিয়া তৃণমূল। তৃণমূল তাই পিছিয়ে থাকা ৭০ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বিজেপি বিনা যুদ্ধে সূচাগ্র মেদিনী দেবে না মমতাকে
তৃণমূলের বিশ্বাস, ২০২১ সালের উপনির্বাচনে ভবানীপুর ফেরাবে না মমতাকে। মমতাকে বিপুল জয় এনে দেবে ভবানীপুর। কিন্তু বিজেপিও কম যাচ্ছে না প্রচারে। তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় আটকাতে তাদের প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের সমর্থনে ৮০ জন নেতাকে ময়দানে নামিয়ে দিয়েছেন। যে কোনও প্রকারে মমতাকে হারিয়ে তাঁরা নৈতিক জয় তুলে নিতে চাইছে বাংলা থেকে।