টার্গেট-২২! মমতার বাংলায় যে কেন্দ্রগুলিকে নিশানা করেছে বিজেপি, দেখে নিন একনজরে
রাজ্যে কটি আসন জিতবে বিজেপি, কোন কোন আসনকে টার্গেট করছে বিজেপির বাংলা ব্রিগেড, তা জানতে চেয়েছিলেন অমিত শাহ। প্রাথমিক একটা রিপোর্টও জমা দিয়েছিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
রাজ্যে কটি আসন জিতবে বিজেপি, কোন কোন আসনকে টার্গেট করছে বিজেপির বাংলা ব্রিগেড, তা জানতে চেয়েছিলেন অমিত শাহ। প্রাথমিক একটা রিপোর্টও জমা দিয়েছিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এবার সেই বিষয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট চান সর্বভারতীয় সভাপতি। জুনের শেষ সপ্তাহে অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে সেই রিপোর্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা চান।
বঙ্গ বিজেপির তরফে যে ২২টি আসনকে টার্গেট করা হয়েছে তার নাম পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় সভাপতিকে। রাজ্য সভাপতি কোন কোন আসনকে টার্গেট করে রিপোর্ট পাঠিয়ে ছিলেন অমিত শাহের কাছে, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেইসব কেন্দ্রের কী হাল-হকিকৎ ছিল গত নির্বাচনের নিরিখে।
টার্গেট ১ : কোচবিহার
কোচবিহার উপনির্বাচনে ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ভোট পেয়ে তাক লাগিয়ে দেয় বিজেপি। যদিও তৃণমূলের কাছে পরাজিত হন বিজেপি প্রার্থী।
টার্গেট ২ : আলিপুরদুয়ার
আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রেও বিজেপি ২০১৪ সালে তিন লক্ষের উপর ভোট পায়। এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮৫৭। বিজেপি তৃতীয় স্থান লাভ করে এই কেন্দ্রে। জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস।
টার্গেট ৩ : জলপাইগুড়ি
জলপাইগুড়ি কেন্দ্রেও তৃণমূল জয়ী হলেও বিজেপির ভোট প্রাপ্তি ছিল উল্লেখযোগ্য। এই কেন্দ্রেও দু-লাখের উপর ভোট পেয়েছিল বিজেপি। বিজেপির ভোট প্রাপ্তি ২ লক্ষ ২১ হাজার ৫৯৩। এই কেন্দ্রেও সিপিএম দ্বিতীয় স্থান পায়। তৃণমূল ও সিপিএম উভয়েই চার লক্ষেরও বেশি ভোট পেয়েছিল।
টার্গেট ৪ : দার্জিলিং
দার্জিলিং বিজেপির জেতা আসন। মোর্চাকে সঙ্গী করে এই আসনটি তারা দখলে রেখেছিল ২০১৪ সালেও। এবারও মোর্চার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ছেদ হলেও, বিজেপি কেন্দ্রটি দখলে রাখতে সম্ভবপর হবে বলে মনে করছে। বিজেপি মনে করে, তৃণমূল পাহাড়ে থাবা বসালেও, পাহাড়বাসীর মন পাবে বিজেপিই।
টার্গেট ৫ : রায়গঞ্জ
২০১৪ সালে এই কেন্দ্রে চতুর্থ হলেও ২ লক্ষ ৩ হাজার ভোটপ্রাপ্তি তাঁদের আশাবাদী করে তুলেছে এই কেন্দ্রে। তারপর বাংলার ভোট বিন্যাস এই মুহূর্তে অনেকটাই বদলেছে। এই কেন্দ্রে মূল লড়াই হয়েছিল কংগ্রেস ও সিপিএমের। বিজয়ী হয়েছিল সিপিএম। বিজেপি মনে করছে এবার কেন্দ্রটি তাদের দখলে আসবে।
টার্গেট ৬ : বালুরঘাট
এই কেন্দ্রেও জয়ী হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ২ লক্ষ ২৩ হাজার ১৪ শতাংশ। এই কেন্দ্রে তৃতীয় হয়েছিল বিজেপি। তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আরএসপি প্রার্থী।
টার্গেট ৭ : মালদহ উত্তর
২০১৪ সালে কংগ্রেস গড় মালদহের এই কেন্দ্রে চতুর্থ স্থান লাভ করলেও বিপুল ভোট পায় বিজেপি। ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ভোট পেয়েছিল সেবার। এখন মালদহে তারাই দ্বিতীয় শক্তি হয়ে উঠেছে। সেই কারণে এই কেন্দ্রটি এবার বিজেপির টার্গেট।
টার্গেট ৮ : কৃষ্ণনগর
নদিয়ার কৃষ্ণনগর কেন্দ্র বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৩ লক্ষ ২৯ হাজার ৮৭৩। এই কেন্দ্রে ২০১৪ সালে বিজেপি তৃতীয় স্থান লাভ করে। যথারীতি কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে জয়ী হয় তৃণমূল। এই কেন্দ্রের সাংসদ তাপস পাল। বিজেপি এবার এই কেন্দ্রটিকেও টার্গেট করেছে।
টার্গেট ৯ : বনগাঁ
বনগাঁ কেন্দ্রটিতেও ২০১৪ সালে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। বিজেপি এই কেন্দ্রে তৃতীয় স্থান লাভ করে।এই কেন্দ্রেও বিজেপি ২ লাখের ওপর ভোট পেয়েছিল সেবার। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ২ লক্ষ ৪৪ হাজার ৭৮৩।
টার্গেট ১০ : বারাসত
বারাসত কেন্দ্র তৃতীয় হলেও বিজেপি প্রায় তিন লক্ষ ভোট পেয়েছিল। ২০১৪ সালে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ২ লক্ষ ৯৬ হাজার ৬০৮। তবে বিজেপি স্থান এই কেন্দ্রেও ছিল তৃতীয়। এই কেন্দ্রেও জয়ী হল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির টার্গেট উত্তর ২৪ পরগনায় এই কেন্দ্রটিও।
টার্গেট ১১ : ব্যারাকপুর
উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর মুকুলের হোমগ্রাউন্ড। বিজেপি এবার এই কেন্দ্রটিকেও টার্গেট করেছে। ২০১৪ সালে এক লাফে অনেকটা ভোট বাড়িয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি। ভোট পেয়েছিল ২ লক্ষ ৩০ হাজার ৪০১। সেই কারণে এই কেন্দ্রটিও টার্গেটে।
টার্গেট ১২ : দমদম
দমদম কেন্দ্রেও ২০১৪ সালে তৃতীয় স্থান পেয়েছিল বিজেপি। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ২ লক্ষ ৫৪ হাজার ৮১৯। তৃণমূলের জেতা এই আসনটিও বিজেপির টার্গেটে রয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বের বিশ্বাস ভোট বাড়িয়ে এই কেন্দ্রটিও তাঁদের দখলে আনা সম্ভব।
টার্গেট ১৩ : কলকাতা উত্তর
এই আসনটি বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। এই কেন্দ্রের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন ২ লক্ষ ৪৭ হাজার। ২০১৪ সালে এই কেন্দ্রে বিজেপি দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছিল। বিজেপির প্রার্থী ছিলেন রাহুল সিনহা। তিনি বর্তমানে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক। তখন ছিল রাজ্য সভাপতি।
টার্গেট ১৪ : কলকাতা দক্ষিণ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র ছিল এটি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই কেন্দ্রের সাংসদ তৃমমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি। ২০১৪ সালে এই কেন্দ্রে বিজেপি দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছিল। তাদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ৩৭৬। বিজেপির প্রার্থী ছিলেন তথাগত রায়। তিনি বর্তমান ত্রিপুরার রাজ্যপাল।
টার্গেট ১৫ : হাওড়া
পরিবর্তনের জমানায় তৃণমূলের জেতা আসন। অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন গতবার। বিজেপি এই কেন্দ্রটি তৃণমূলের থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে বলে মনে করছে। এই কেন্দ্রে বিজেপি পেয়েছিল ২ লক্ষ ৪৮ হাজার ১২০ ভোট। বিজেপির স্থান ছিল তৃতীয়।
টার্গেট ১৬ : শ্রীরামপুর
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রটিও এবার টার্গেট করেছে বিজেপি। ২০১৪ সালে এই কেন্দ্রে বিজেপি তৃতীয় স্থান দখল করলেও ভোট পেয়েছিল ২ লক্ষ ৮৭ হাজার ৭১২। উল্লেখ্য এই কেন্দ্রটি বরাবরই তৃণমূলের পক্ষে। ২০১৪ সালেও এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হল কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
টার্গেট ১৭ : মেদিনীপুর
২০১৪ সালে এই কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হন বিশিষ্ট অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। সিপিআইয়ের দখলে থাকা এই কেন্দ্রটি তৃণমূল ছিনিয়ে নিয়েছিল প্রবোধ পাণ্ডার মতো হেভিওয়েটকে হারিয়ে। তবে বিজেপি এবার এই কেন্দ্রটিকে টার্গেট করছে। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৭১।
টার্গেট ১৮ : ঝাড়গ্রাম
২০১৪ সালের ভোটে এই কেন্দ্রে বিজেপি পেয়েছিল তৃতীয় স্থান। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ১ লক্ষ ২২ হাজার ৪৫৯। তৃণমূল জয়ী হলেও বিজেপি টার্গেট করেছে এই আসনটিতে তাঁরা জয়লাভ করতে সক্ষম হবে। পঞ্চায়েত ভোটে সেই আভাস দিয়েছে বিজেপি।
টার্গেট ১৯ : পুরুলিয়া
পুরুলিয়া কেন্দ্র বিজেপি চতুর্থ হয়েছিল। ভোট পেয়েছিল মাত্র সাত শতাংশ। ২০১৪ লোকসভায় এই কেন্দ্র ৮৬ হাজার ২৩৬ ভোট পেলেও জঙ্গলমহলে পালাবদলের সূচনা হয়েছে বলে বিশ্বাস বিজেপির। পঞ্চায়েত ভোটের সাফল্যকে পাথেয় করেই এই কেন্দ্রে জিততে পারবে বলে মনে করছে বিজেপি।
টার্গেট ২০ : বাঁকুড়া
বাঁকুড়া কেন্দ্রে বিজেপি তৃতীয় স্থান পেয়েছিল। এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন জয়ী হয়েছিলেন। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ২ লক্ষ ৫১ হাজার ১৮৩। এবার এই কেন্দ্রটি বিজেপি টার্গেট করেছে। পঞ্চায়েতেও আশাতীত সাফল্য পেয়েছে বাঁকুড়ার একটা অংশে।
টার্গেট ২১ : আসানসোল
প্রবল মোদি হাওয়ায় এই কেন্দ্রটি দখল করে বিজেপি। বিজেপির বাবুল সুপ্রিয় এই কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হন। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪ লক্ষ ১৯ হাজার ৯৮৩। ৩৬.৭৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এই কেন্দ্রে এক নম্বর স্থান পায় বিজেপি। এবারও এই কেন্দ্রটি ধরে রাখার ব্যাপারে আশাবাদী।
টার্গেট ২২ : বোলপুর
পঞ্চায়েতে সে অর্থে লড়াইয়ের জায়গা না পেলেও বীরভূমের এই আসনটি বিজেপি টার্গেট করেছে। ২০১৪ সালে ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ৪৭৪ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। তবে ২০১৬ সালের পর থেকে এই কেন্দ্রে বিজেপি সংগঠবন অনেক বেড়েছে বলেই এই কেন্দ্রটিতে পদ্ম ফোটানো সম্ভব বলে মনে করছে বিজেপি নেতৃত্ব।
উল্লেখ্য বিজেপির টার্গেটে তিন জেলার কোনও আসন নেই। মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে তাঁরা এবার কোনও আসন টার্গেট করছে না। অন্তত বিজেপির প্রাথমিক রিপোর্টে তেমন কোনও উল্লেখ নেই।