মোহভঙ্গ বিজেপিতে! পুরভোটের আগে ‘শীর্ষ নেতা’দের যোগদানে জোয়ার তৃণমূল কংগ্রেসে
রাজ্য পুরসভা নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে। এই অবস্থায় পুরুলিয়ার মতো প্রান্তিক জেলায় তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধি অন্যরকম ইঙ্গিত দিচ্ছে রাজ্য-রাজনীতিতে।
বিগত লোকসভা নির্বাচন থেকেই জঙ্গলমহলের লালমাটিতে বেশ জাঁকিয়ে বসেছিল গেরুয়া শিবির। সেই গেরুয়া রঙ হঠাৎ ফিকে হতে শুরু করেছে পুরভোটের প্রাক্কালে। জঙ্গলমহলে দলবদলের হিড়িকে পড়েছে। শুধু যে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া নেতারা ফিরে আসছেন, তা নয়। বিজেপির আদি নেতারাও ফিরছেন তৃণমূলে। তৃণমূলে আসছেন বামফ্রন্ট ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া পোড় খাওয়া নেতা-নেত্রীরাও।
পুরুলিয়ায় তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধি
রাজ্য পুরসভা নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে। এই অবস্থায় পুরুলিয়ার মতো প্রান্তিক জেলায় তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধি অন্যরকম ইঙ্গিত দিচ্ছে রাজ্য-রাজনীতিতে। বিশেষ করে বিজেপির সংগঠনে তৃণমূল থাবা বসানোয় চিন্তায় পড়েছে গেরুয়া শিবির। পুরুলিয়ায় সম্প্রতি শক্ত ঘাঁটি গেড়েছিল বিজেপি। সেই ঘাঁটিতেই মোক্ষম আঘাত হানল তৃণমূল কংগ্রেস।
বিজেপিতে বড়সড় ধস নামল
রবিবার পুরুলিয়া বিজেপিতে বড়সড় ধস নামিয়ে দিল তৃণমূল। শাসক শিবিরে যোগ দিলেন বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি-সহ এক ঝাঁক নেতা-নেত্রী। দলের অনেক পুরনো কর্মীও এদিন ফিরে আসেন তৃণমূলে। পুরভোটের আগে স্বভাবতই খুশির হাওয়া বিজেপি শিবিরে। শাসকদল মনে করছে, তাঁদের সংগঠনের শক্তবৃদ্ধি হল।
বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তৃণমূলে!
এদিন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিকাশ মাহাতো। তাঁর তৃণমূলে যোগদান বিজেপি শিবিরের কাছে মোক্ষম আঘাত বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ। এছাড়াও তৃণমূলে যোগদানের তালিকায় নাম রয়েছে বিন্দেশ্বর মাহাতো। তিনি বামফ্রন্ট ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন।
দল ছাড়লেন যেসব হেভিওয়েট
শুধু তিনবারের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক বিন্দেশ্বর মাহাতোই নন গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হওয়া নগেন্দ্র ওঝা, বিজেপির প্রাক্তন যুব মোর্চা ও তফশিলি মোর্চার জেলা সভাপতি পরেশ রজক, লোকসভা ভোটে শিবসেনা প্রার্থী রাজীব মাহাতো, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের জয়পুরের সম্পাদক টিঙ্কু সিংও এদিন গেরুয়া শিবির ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন।
তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা উচ্ছ্বসিত
এই যোগদানে অনুষ্ঠানে হয় পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক। জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো, বরিষ্ঠ নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁরা যোগদানকারীদের হাতে তৃণমূলের তেরঙ্গা পতাকা তুলে দেন। এই যোগদানে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা উচ্ছ্বসিত। পুরসভা ভোটের আগে শক্তিবৃদ্ধি উৎফুল্ল তৃণমূল শিবির।
তৃণমূল জেলা সভাপতির ভাষ্য
জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তৃণমূলের হাত শক্ত করা দরকার বলে মনে করেন ওঁরা। তাই ওঁরা যোগাযোগ করেছিলেন তৃণমূলের সঙ্গে। তৃণমূল ওঁদের সাদরে গ্রহণ করেছেন। আগামী দিনে আরও অনেকে বিজেপি ছেড়ে আসবে তৃণমূলে। সেই ক্ষেত্র তৈরিই রয়েছে। এই জেলায় বিজেপির সংগঠন বলে আর কিছুই থাকবে না।
বিজেপিতে যোগ দিয়ে সম্মান পাইনি
পুরনো দলে ফিরে বিকাশ মাহাতো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই দলটা করে এসেছি। কিছু সমস্যা তৈরি হওয়াতে দল ছেড়েছিলাম। বিজেপিতে যোগ দিয়ে সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারিনি। তাই তৃণমূলেই ফিরে এলাম। কারণ এটাকে এখন নিজের দল বলেই মনে করি। তাই নিজের পুরনো সঙ্গীদের পাশে পেয়ে বেশ স্বস্তি বোধ করছি।
বিজেপিতে ভাঙন বালুরঘাটেও
এদিনই দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে আরএসপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করে ৩৭টি পরিবার। পুরভোটের আগেই শহরের ছয় নম্বর ওয়ার্ডে আরএসপিতে ভাঙন দেখা দিল। তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানকারীদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন তৃণমূলের টাউন সভাপতি সুভাষ চাকি। কিছু দিন আগে এই ওয়ার্ডেই ৩০টি পরিবার আরএসপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছে।