মিশন একুশে টার্গেট ফিক্সড বঙ্গ বিজেপির! আরএসএসের বীজে ফসল তুলতে মরিয়া প্রচেষ্টা
মিশন একুশে বিজেপির টার্গেট যাঁরা, আরএসএস-রোপিত বীজে তৈরি বাজিমাতের কৌশল
বিজেপি তথাকথিত বাঙালি 'ভদ্রলোক' সমাজকে বাইপাস করে এবার পিছিয়ে পড়া ও উপজাতি সম্প্রদায়ের ভোট পেতে ঝাঁপাবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে। বাংলায় বিজেপির মুখোমুখি হওয়ার জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল বাঙালি ভদ্রলোক শ্রেণির ভোট। শহরের হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং উচ্চবর্ণের বাঙালিরা যাঁরা সাধারণত বামেদের দিকে ঝুঁকে থাকেন, তাঁরা এবার অনেকেই বিজেপিমুখো।
বাঙালি ভদ্রলোক শ্রেণিতে এখনও প্রভাব বেশি তৃণমূলের
বাঙালি ভদ্রলোক শ্রেণিকে ‘বাম-উদারপন্থী' গোষ্ঠীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এতদিন। কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের শহরগুলির ভদ্রলোক শ্রেণি বাম এবং তৃণমূলের পকেটে ভোট ছিল। যদিও বিজেপি এই শ্রেণির মধ্যে নিশ্চিতভাবেই প্রবেশ করে গিয়েছে। তবুও তৃণমূল এখনও এই শ্রেণির মধ্যে বেশি প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে।
বিজেপির নজর পিছিয়ে পড়া শ্রেণি এবং আদিবাসী ভোটে
ফলে দক্ষিণবঙ্গে এখনও তৃণমূলের দুর্গ। যেখানে বিজেপিকে ঝড় তুলতে অসুবিধা পরতে হতে পারে। আর নয় মাসের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ফলে এই ভোটে বিজেপি আর বিশেষ কিছু করতে পারবে না। তবে বিজেপি খুব বেশি চিন্তিত নয়। কারণ বিজেপি ইতিমধ্যেই পিছিয়ে পড়া এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভোটে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে সম্ভবপর হয়েছে।
বিজেপির মূল ইস্যু আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায়
বিজেপি নির্বাচনী প্রচারে এবারও মূল ইস্যু করতে চলেছে বাংলায় দীর্ঘ-অবহেলিত এবং শোষিত আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায়কে। ২০১৯-এর বছরের লোকসভা নির্বাচনে এই পথে হেঁটেই ১৮ আসনে জয়লাভ করেছিল বিজেপি। সেই থেকে শিক্ষা নিয়েই বিজেপি আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও বিস্তারলাভ করতে সচেষ্ট হয়েছে।
২০২১-এ বিজেপির টার্গেট যে সমস্ত প্রান্তিক গোষ্ঠী
উত্তরবঙ্গে রাজবংশী সম্প্রদায়, পাহাড়ে গোর্খা, জঙ্গলমহলে আদিবাসী-উপজাতি সম্প্রদায় উত্তর ২৪ পরগনা-নদিয়ায় মতুয়া গোষ্ঠী, এছাড়া তপশিলি জাতি-উপজাতি এবং ওবিসি সম্প্রদায়কে টার্গেট করেছে। তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে সুবিধা পান না, পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন। এইসব দাবি তুলেই তাঁদের পাশে দাঁড়ানোপ লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে বিজেপি।
আদিবাসী ও উপজাতি ভোটে থাবা বসাতে চাইছে বিজেপি
আরএসএস এক দশকের বেশি সময় ধরে আদিবাসী ও উপজাতি মহলে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে। মানুষকে তাঁরা বোঝাচ্ছে বাম এবং তৃণমূল আমলে তাঁরা অনেকাংশে অবহেলিত ছিল। তাঁদেরকে সামাজিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে। বিজেপি চাইছে আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে শক্তিশালী ভিত তৈরি করতে।
কংগ্রেস-বাম-তৃণমূল একই পথ অনুসরণ করে চলছে
বিজেপি বোঝাচ্ছে, প্রথমে কংগ্রেস, তারপরে বাম এবং এখন তৃণমূল একই পথ অনুসরণ করে চলছে। তাঁরা সর্বদা উচ্চবর্ণের ভদ্রলোকদের নিয়ে কাজ করছে। বাংলায় সিপিএমের প্রায় সমস্ত শীর্ষ নেতৃত্ব উচ্চবর্ণের বাঙালিদের নিয়ে গঠিত ছিল। এসসি, এসটি, ওবিসি এবং এমনকী বাম দলগুলির মহিলাদের প্রতিনিধিত্বও খুব কম ছিল।
তৃণমূলের পক্ষপাতদুষ্ট, আর বিজেপির ভাবনায় পরিপুষ্ট
তৃণমূলও আদিবাসী ও উপজাতিদের বিরুদ্ধে একই পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে এসেছে। তৃণমূলের প্রায় সমস্ত শীর্ষ নেতৃত্ব ব্রাহ্মণ, কায়স্থ এবং বৈশ্য নিয়ে গঠিত। সেখানে এসসি, ওবিসি, এসটি এবং প্রান্তিকদের জন্য জায়গা সীমিত। অন্যদিকে, বিজেপি আদিবাসী এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে এবং এই সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে অনেককে সিনিয়র পদ দিয়েছে।
আরএসএস বীজ রোপণ করেছিল, বিজেপি ফল পাচ্ছে
বিজেপি উদাহারণস্বরূপ জানিয়েছে, রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজে ওবিসি এবং উচ্চ পদে থাকা আরও অনেকেই সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির লোক। আরএসএস কয়েক দশক ধরে বাংলায় নিঃশব্দে এবং আশ্বাসের সঙ্গে কাজ করে চলেছে। উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল এবং রাজ্যের অন্যান্য অনগ্রসর অঞ্চলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি মনোনিবেশ করেছিল। তার ফল পাচ্ছে বিজেপি।
কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ মুকুলের! নাম না করে দিলীপ ঘোষের উদ্দেশে দিলেন বার্তা