দিলীপ আর সুকান্ত চলছেন দুই ভিন্নমুখী পথে, মমতার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে কী অবস্থান বিজেপির
একজন বলছেন বাংলার মানুষ ভিখারি হয়ে গিয়েছে। কেননা তাঁরা রাজ্যের দেওয়া ৫০০ টাকা অনুদান পেতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। আর একজন বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৫০০ টাকা দিয়েছেন। ওই টাকায় কিছু হয় নাকি, আমরা ক্ষমতায় এলে ২০০০ টাকা দেব।
একজন বলছেন বাংলার মানুষ ভিখারি হয়ে গিয়েছে। কেননা তাঁরা রাজ্যের দেওয়া ৫০০ টাকা অনুদান পেতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। আর একজন বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৫০০ টাকা দিয়েছেন। ওই টাকায় কিছু হয় নাকি, আমরা ক্ষমতায় এলে ২০০০ টাকা দেব। দুজনেই বিজেপির নেতা।
দুজনেই বঙ্গ বিজেপির মুখ। এখন কার কথা শুনবেন আপনি। বিজেপির নেতা-কর্মীরা পঞ্চায়েত ভোটের মুখে পড়েছেন চরম বিপাকে। পার্টির কোনটা লাইন তা-ই ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে তাঁরা সমর্থ করবেন, নাকি লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বিরোধিতা করবেন, তা স্পষ্ট করতে পারছেন না তাঁরা।
বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বর্তমানে সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি আবারও বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের উল্টো পথে হেঁটে বললেন বাংলার মানুষকে ভিখারি বানিয়ে দিয়েছেন রাজ্য সরকার। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে ৫০০ টাকা দিতে লাইনে দাঁড় করিয়েছে বালার মানুষকে।
দিলীপ ঘোষ আগেও বলেছিলেন একথা। আবারও বললেন। রাজ্য সরকারের দুয়ারে সরকার ও লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সমালোচনা আগেও করেছিলেন দিলীপ ঘোষ ও বিজেপির নেতারা। দুয়ারে সরকারকে যমের দুয়ারে সরকার বলে কটাক্ষ করেছিলেন। কিন্তু প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে তাঁরা ভুল ছিলেন। কারণ দুয়ারে সরকারকে সেরা প্রকল্পের স্বীকৃতি দিয়েছে কেন্দ্র।
এখন আবার প্রকাশ্য সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাংলার মানুষকে ভিখারি করে দিয়েছেন। ৫০০ টাকার জন্য তাঁদের লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। বাংলার মানুষ কিছু পায়নি বলেই ভিখারি হয়ে গিয়েছেন বলে তাঁর ব্যাখ্যা। তারপর তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তুলনা করে বলেন, দেশের মানুষকে বাড়ি, খাদ্য, গ্যাস সব কিছু দিয়েছেন। কাউকে তো লাইনে দাঁড়াতে হয়নি। তিনি সুশাসন কাকে বলে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে ভিখারি বনেছেন বাংলার মানুষ।
অথছ কিছুদিন আগে প্রকাশ্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস ৫০০ টাকা করে মানুষকে দিচ্ছেন। ৫০০ টাকায় কি সংসার চলে। আমরা ক্ষমতায় এলে ২০০০ টাকা করে মানুষকে দেব। একপ্রকার ভোট প্রতিশ্রুতির কথা শোনা যায় বিজেপির রাজ্য সভাপতির কণ্ঠে। তিনি আদতে তৃণমূল সরকারে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পকে স্বীকৃতি দিয়েই অনুদানের পরিমাণ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
এই পরস্পর বিরোধী মত নিয়ে এখন বিজেপিতেই শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব। কোন লাইন নিয়ে পার্টির নেতাকর্মীরা চলবেন, তা স্থির করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দিলীপ ঘোষের অনুগামীরা চলছেন তাঁদের নেতার কথায়, আর সুকান্ত মজুমদারের অনুগামীরা ভিন্ন পথ নিচ্ছেন। তবে বিজেপির মুখপাত্র উভয় নেতার কথার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ছেন।
বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, দিলীপ ঘোষ বা সুকান্ত মজুমদার যা বলেছেন দুটোই পার্টির লাইন। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ২০০০ টাকা করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সে কথা বিজেপি আগেই বলেছিল। আর দিলীপ ঘোষও যেটা বলেছেন, একেবারে ঠিক কথা। ৫০০ টাকা করে দিয়ে ভিক্ষাই দিচ্ছেন সরকার। ৫০০ টাকায় এখন কিছুই হয় না। তাই আমরা ২০০০ টাকা করে দেওয়ার কথা বলেছিলাম।