মমতাকে ধরাশায়ী করতে ভোট অঙ্ক তৈরি বঙ্গ বিজেপির! জয়ের ‘কড়ি’ মজুত একুশে
মমতাকে ধরাশায়ী করতে ভোট অঙ্ক তৈরি বিজেপির! জয়ের ‘কড়ি’ মজুত একুশে
বিজেপি বাংলা-বিজয়ের লক্ষ্য নিয়ে এবার মিশন একুশে নামছে। এই বিরাট লক্ষ্যে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নামকে হারাতে বিজেপির অস্ত্র কারা। কাদের নিয়ে বিজেপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিরাট নামকে হারিয়ে বাংলায় পরিবর্তনের ধ্বজা ওড়াতে সক্ষম হবে, ২০২১-এর ভোট যুদ্ধে আট মাস আগেই তা স্পষ্ট।
তৃণমূলকে ধরাশায়ী করতে কৌশল বিজেপির
বিজেপি এবার জয়ের লক্ষ্যে বাংলায় জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণের খেলা শুরু করতে চলেছে। ভোট মেরুকরণের লক্ষ্যে বর্ণবাদী রাজনীতি থেকে এতদিন মুক্ত ছিল বাংলা। ২০১৯-এ সাফল্যেপ সোপান ধরে ২০২১-এ পুরোপুরি মেরুকরণের রাজনীতিতে নামছে বিজেপি। বর্ণবাদী রাজনীতি দিয়েই তৃণমূলকে ধরাশায়ী করতে কৌশল রচনা করেছে পদ্মশিবির।
বিজেপি অঙ্ক কষে ফেলেছে একুশের জয়ের লক্ষ্যে
২০২১ সালের বিধানসভায় ভোট-মেরুকরণের রাজনীতিতে ফায়দা লুটতে বিজেপি অঙ্ক কষে ফেলেছে। বিজেপির অঙ্ক বলছে, বাংলায়, ব্রাহ্মণ, বৈদ্য এবং কায়স্থ- এই অগ্রণী জাতিগোষ্ঠী বড় শহরগুলিতে আধিপত্য বিস্তার করে আছে ঠিকই, কিন্তু তাঁরা হিন্দু জনসংখ্যার ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ। এবং মোট ভোটারদের ১২ থেকে ১৩ শতাংশ মাত্র।
বাংলায় উচ্চবর্ণের আধিপত্যকে নিশানা
বাংলায় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উচ্চবর্ণের পুরোপুরি আধিপত্য রয়েছে। বাংলার সমস্ত মুখ্যমন্ত্রী কেবল এই দল থেকেই উঠে এসেছেন। এখন পর্যন্ত প্রতিটি ক্যাবিনেটের মূল পদগুলি উচ্চবর্ণের নেতা-নেত্রীরাই আঁকড়ে থেকেছেন। সুতরাং, একথা বলা যায় যে, নীরবে উচ্চবর্ণের আধিপত্য থেকেছে বাংলায়।
বঞ্চনার বীজ বপন অনগ্রসর জাতিদের মধ্যে
গত কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস এবং বিজেপি সম্মিলিতভাবে অনগ্রসর জাতির মধ্যে এই বঞ্চনার বিষয়ে অবিচ্ছিন্নভাবে প্রচার চালিয়ে আসছে। বিজেপি এই জাতিগত বিভেদের বিষয়টি দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ফায়দা তুলতে চেষ্টা করছে। এই ব্যাপারে অন্য সমস্ত দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম বিজেপি।
ওবিসি সম্প্রদায়ের ভোট-ব্যাঙ্ককে হাতিয়ার
ওবিসি সম্প্রদায় বাংলায় হিন্দুদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যক। ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণ রয়েছে ১৭ শতাংশ। এই তালিকায় কয়েকটি মুসলিম সম্প্রদায়ও রয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজে ওবিসি গোষ্ঠী থেকে এসেছেন এবং গ্রামবাংলায় তাঁকে দলের মুখ হিসাবে ইতিমধ্যেই তুলে ধরা হয়েছে। উচ্চবর্ণের আধিপত্যকে ধ্বংস করতেই বিজেপি এই পরিকল্পনা নিয়েছে।
তফশিলি জাতি-উপজাতি আর মতুয়ারা টার্গেট
বাংলায় তফসিলি জাতিদের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে বেশি। জনসংখ্যার ২৩ শতাংশ (হিন্দুদের প্রায় ৩০ শতাংশ) এসসি এবং ৫.৫ শতাংশ তফসিলি উপজাতি বা এসটি। এসসি-র মধ্যে একটি বড় ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী হলেন মতুয়ারা। বামফ্রন্টকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ২০১১ সালের রাজ্য নির্বাচনে সফলভাবে মতুয়া কার্ড খেলেন।
মতুয়াদের ঘায়েল করতে সিএএ পরিকল্পনা
কয়েক বছর ধরে বিজেপি এই সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। মূলত ভারতীয় নাগরিকত্বের কার্ড খেলে বিজেপি এখানে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। বহুল আলোচিত সিএএ বা নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের মাধ্যমে বিজেপি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে এখানে।
বিজেপি লক্ষ্যে 'পিছিয়ে পড়া মুসলমানরা'ও
বাংলার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ৭০-৭৫টি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি উচ্চবর্ণবিরোধী প্রচার চালাতে পারবে না। এই প্রতিবন্ধকতার কারণে দলটি তার মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করতে পারবে না। বিজেপি অতীতে উত্তরপ্রদেশে যেমন চেষ্টা করেছিল, তেমনই 'পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের' উপরও প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করবে। তৃণমূল কংগ্রেস, বাম, কংগ্রেস এবং আসাদউদ্দিন ওওয়াইসির অল ইন্ডিয়া মজিল-ই-মুসালিমেনের মধ্যে মুসলিম ভোট বিভক্ত হবে। এই বিভাজন থেকেও ফায়দা তুলবে বিজেপি।
বাংলায় বর্ণবাদী রাজনীতি শুরু! ২০২১-এ তৃণমূলকে হারাতে মাস্টারস্ট্রোক বিজেপির