বিজেপি পড়েছে শাঁখের করাতে! মতুয়াদের সিএএ-প্রশ্ন এখন গলার কাঁটা সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের
বিজেপি পড়েছে শাঁখের করাতে! মতুয়াদের সিএএ-প্রশ্ন এখন গলার কাঁটা সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের
২০১৯ থেকে ২০২২- তো কম সময় নয়। ২০১৯-এ লোকসভা ভোটের আগে ফলাও করে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলে হয়েছিল। ভোটব্যাঙ্কে ফায়দা লুটে মতুয়া মহলের আসন আদায় করতেও সফল হয়েছিল বিজেপি। কিন্তু তারপর সিএএ হয়েছে অর্থাৎ নাগরিকত্ব আইন হয়েছে, কিন্ত তা লাগু করতে পারেনি বিজেপি। তা নিয়েই বিজেপি পড়েছে শাঁখের করাতে। যা পরিস্থিতি তাতে না পারছে আইন লাগু করতে না পারছে ফেলতে।
মতুয়াদের নাগরিকত্ব! কিন্তু কোথায় কী
মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৯-এ মতুয়া মহল থেকে সাংসদ পেয়েছে বিজেপি। ঠাকুরবাড়ির শান্তনু ঠাকুর বিজেপির সাংসদ থেকে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী মতুয়াদের নাগরিকত্ব দিতে পারেননি। সে কারণে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই চাপ বাড়তে থাকে ঘরে-বাইরে। তখনও তিনি বেঁকে বসেছিলেন। বিজেপির তরফে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ভোট মিটলেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু কোথায় কী! আরও এক বছর পার করতে চলল।
ঠেকা দিয়ে রাখলেন শান্তনু ঠাকুর
মতুয়ারা তবু আশায় বুক বেঁধে বসে আছেন। তারই মাধে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি উদযাপন হয়ে গেল ঠাকুরনগরে। এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখলেন মতুয়া-সভায়। এবারও মতুয়াদের প্রতিশ্রুতি পূরণ হল না। প্রধানমন্ত্রী মোদী সিএএ নিয়ে কোনও কথাই বললেন না। শেষমেশ ঠেলা সামলাচতে হল শান্তনু ঠাকুরকে। তিনি কোনওরকমে ঠেকা দিয়ে বললেন, সিএএ হবেই। তিনি মোদী-শাহের সঙ্গে কথা বলেছেন।
সিএএ নিয়ে শাঁখের করাত বিজেপির
মতুয়াদের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির যে টোপ দেওয়া হয়েছিল, তা অধরাই থেকেছে। বিজেপি নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ লাগু করতে ব্যর্থ। কারণ সিএএ নিয়ে মিশ্র প্রভাব রয়েছে। তা বেশ জানে বিজেপি। মতুয়ারা সিএএ কার্যকরের দাবিতে সরব। সিএএ লাগু হলে মতুয়াদের লাভ। আর সিএএ-তে বেশিরভাগ অংশের আপত্তি। পাশের রাজ্য অসমে সিএএ নিয়ে জ্ঞানশিক্ষা হয়েছে বিজেপি। সেখানে বেশিরভাগ লোক সিএএ-র বিরুদ্ধে।
সিএএ নিয়ে মতুয়া ঠাকুরবাড়িই দু-ভাগ
তাই বিজেপি সিএএ নিয়ে না পারছে গিলতে, না পারছে ফেলতে। শুধু অসমে কেন, পশ্চিমবঙ্গে তা বিজেপির পক্ষে বুমেরাং হতে পারে, সম্যক জানে বিজেপি। মতুয়া মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে সিএএ নিয়ে। মতুয়া ঠাকুরবাড়িই দু-ভাগ। বড় তরফের মমতা বালা ঠাকুর তো সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা সবাই নাগরিক। নাগরিকদের আবার নাগরিকত্ব দেবে কী করে! সব বিজেপির ভাঁওতা।
বিজেপি সিএএ তাস আর কতদিন!
আবার ছোট তরফের শান্তনু বলছেন, সিএএ হবেই। প্রধানমন্ত্রী মোদীজি এদিন সিএএ প্রসঙ্গ উত্থাপন না করলেও তাঁর সঙ্গে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আজ নয় কলা সিএএ হবেই। কেউ রুখতে পারবেন না। এভাবেই মতুয়াদের ঠেকা দিয়ে রাখলেন তিনি। কিন্তু কতদিন বিজেপি এভাবে সিএএ তাস খেলে যেতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
বিজেপির প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রাখতে পারবে মতুয়ারা?
শান্তনু আবার বলেন, দু-বছর ধরে করোনা ও লকডাউন ছিল। এবার তার প্রভবা খানিকটা স্তিমিত হয়েছে। এবার সিএএ হবে। আর একটু ধৈর্য ধরুন, আশা করছি ২০২৪-এর মধ্যেই সিএএ লাগু হবে এবং মতুয়ারা নাগরিকত্ব পাবেন। বেজার মুখে মতুয়ারা ঘর ফিরেছে সঙ্ঘাধিপতির কথা শুনে। কিন্তু তারা কতদিন বিজেপির এই প্রতিশ্রুতির প্রতি ভরসা রাখতে পারবে, সেটাই দেখার।
বাংলায় মতুয়াদের নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতিই সার
২০১৯-এর ৯ ডিসেম্ব লোকসভায় নাগরিকত্ত সংশোধনী বিল পাস হয়। তারপর রাজ্যসভায় ১১ ডিসেম্বর পাস হওয়ার পর পরদিনদিন বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। ২০২০-র জানুয়ারিতে তা আইনে পরিণত হয়। কিন্তু এখন রুলিং জারিও হয়নি আর নিয়ম নীতিও লাগু হয়নি। এই অবস্থায় বাংলায় মতুয়াদের প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সংসদে সিএএ প্রসঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে প্রথম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। লোকসভা ভোট জিতে এলেই নাগরিকত্ব এক বছরের মধ্যে। তা হয়নি। এরপর ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি। খোদ অমিত শাহ জানিয়েছিলেন করোনা ভ্যাকসিনেশন শেষ হলেই নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। তারপর কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ সংসদে সিএএ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন।
কবে মতুয়াদের স্বপ্নপূরণ, অন্যদের দুঃস্বপ্ন তাড়া
তিনি জানতে চেয়েছিলেন সিএএ কতদূর এগিয়েছে? কবে রুলিং হবে। তার জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানায় সিএএ-র নিয়ম নীতি ঠিক করতে আরও ৬ মাস সময় লাগবে। সংসদে ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়ে নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তাও অতিক্রান্ত এখন দেখার কবে মতুয়াদের স্বপ্নপূরণ হয়। আর বেশিরভাগ অংশকে দুঃস্বপ্ন তাড়া করে।
ইংরেজির প্রশ্নপত্র ফাঁস, ২৪টি জেলায় বাতিল হয়ে গেল দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা