জোর ঝটকা বিজেপির, নিজের বুথেই গোহারা হেরে লড়াই থেকে ছিটকে গেলেন নিশীথ
জোর ঝটকা বিজেপির, নিজের বুথেই গোহারা হেরে লড়াই থেকে ছিটকে গেলেন নিশীথ
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে যে কেন্দ্রে সবথেকে কম ভোটের মার্জিনে জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়েছিল, ছ-মাসের মধ্যে উপনির্বাচনে সেই কেন্দ্রেই রেকর্ড মার্জিনে জয় পেয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহের জয়ের ব্যবধান ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫ ভোট। যা নজিরবিহীন। এর এই জয়ের পথে উদয়ন জোর ঝটকা দিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী কেন্দ্রীয়মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে।
হিসেব উল্টে গিয়েছে নিশীথের বুথে
সাংসদ তথা কেন্দ্রীয়মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বুথেই গোহারা হেরেছে বিজেপি। নিশীথ প্রামাণিকের বুথে বিজেপি ভোট পেয়েছে মাত্র ৯৫টি। আর তৃণমূল কংগ্রেস সেখানে ভোট পেয়েছে ৩৬০টি। অর্থাৎ ২৬৫ ভোটের ব্যবধানে নিশীথ প্রামাণিকের বুথে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল এই বুথে চার গুণ ভোট বাড়াতে সমর্থ হয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল এই কেন্দ্রে মাত্র ৯০টি ভোট পেয়েছিল। এবার সেই হিসেব উল্টে গিয়েছে।
বিজেপি প্রার্থী হারলেন নিজের বুথেও
শুধু নিশীথ প্রামাণিকের বুথেই নয়, দিনহাটায় বিজেপি প্রার্থী অশোক মণ্ডলের বুথেও মুখ থুবড়ে পড়েছে গেরুয়া পার্টি। নিজের বুথেই ১৫৬ ভোটে হেরেছেন অশোক মণ্ডল। ফলে বিজেপি প্রার্থী লড়াই ছিটকে গিয়েছেন নিজের বুথ থেকেই। তার ফলশ্রুতিতে অন্য বুথেও দেখা গিয়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে ব্যবধান বাড়তে। তৃণমূল প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান তাই আকাশ ছুঁয়েছে। পৌঁছে গিয়েছে ১ লক্ষ ৬৩ হাজারে।
ফিফটি-ফিফটি লড়াই উধাও
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি আর তৃণমূল নেক টু নেক ফাইট করেছিল। দিনহাটায় ফিফটি-ফিফটি লড়াই হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে। উদয়ন গুহ বনাম নিশীথ প্রামাণিক। একবার নিশীথ এগিয়ে যান তো একবার উদয়ন। শেষপর্যন্ত টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ভোটের লড়াই শেষ হয়েছে নিশীথের জয়ে। নিশীথ জয়ী হয়েছিলেন ৫৭ ভোটে। উদয়ন গুহ বলেন, সেই হারের পর থেকেই তিনি লড়াই শুরু করেছিলেন। দিদি বলেছিলেন উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে জিততে হবে। সেই কথা রাখতে পেরেছি।
বিজেপির কফিনে শেষ পেরেক
নিশীথ প্রামাণিক সাংসদ হয়েও তিনি বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন বিজেপির টিকিটে। শেষে সাংসদ পদ রেখে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন। তাই উপনির্বাচনের অবতারণা। আর সেই উপনির্বাচনে বিজেপি রেখে গেল একরাশ লজ্জা। বিজেপি শুধু ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ভোটে হারল না। হারল সাংসদ তথা কেন্দ্রীয়মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের নিজের বুথে, হারল বিজেপি প্রার্থীর নিজের বুথে। এই হার বিজেপির কফিনে শেষ পেরেক বলে বর্ণনা করলেন সদ্য নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ।
বিজেপি এজেন্টও খুঁজে পাবে না
দিনহাটা উপনির্বাচনে ভোটের ফল বেরনোর পর উদয়ন গুহ বলেন, এদিনের ভোটের ফল প্রমাণ করে দিয়েছে, দিনহাটায় বিজেপি শেষ। নিশীথ প্রামাণিক যে কিছুই নয়, তিনি যে জিরো তাও প্রমাণিত। তিনি নিজেকে সুপার পাওয়ার বলে মনে করছিলেন। কিন্তু তিনি কিছুই নয়। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় সঙ্গে দিনহাটাতেও বিজেপির সংগঠনে ক্ষয় ধরেছে। অনেক নেতা-কর্মী দলবদল করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এবার তবু এজেন্ট দিতে পেরেছে বিজেপি, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এজেন্টও খুঁজে পাবে না।
বিজেপির অস্তিত্ব বিপন্ন দিনহাটায়
দিনহাটায় ভোটের দিন কুড়ি আগে দলের প্রার্থী পছন্দ না হওয়ার অভিযোগে দল ছেড়েছিলেন বিজেপির কোচবিহারের জেলা সম্পাদক সুদেব কর্মকার। দল ছেড়েছিলেন দিনহাটা একনম্বর ব্লকের অনেক নেতা। ২ নম্বর ব্লকেও অনেকেই দলবদল করেছিলেন। এর আগে দিনহাটা কেন্দ্রের বিজেপির সংযোজক কল্যাণ সরকারও তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। দলের সাংসদ এবং জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন তৎকালীন বিজেপির জেলা সম্পাদক। এই ভাঙনের পর বিজেপির অস্তিত্ব বিপন্ন হতে শুরু করেছে।
সর্বাধিক মার্জিনে জয়ের রেকর্ড
উদয়ন গুহ বলেন, বিধানসভা নির্বাচনে কম ব্যবধানে হারতে হয়েছিল। তারপর বিজেপির বিধায়ক হিসেবে নিশীথ প্রামণিক পদত্যাগ করার পরই যখন উপনির্বাচন আসন্ন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, এবার কিন্তু বড় ব্যবধানে জিততে হবে। সেটাকেই পাখির চোখ করে দিনহাটায় সংগঠনে জোর দিয়েছিলেন তিনি। জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লক্ষ। তাও ছাড়িয়ে যে সর্বকালীন রেকর্ড হয়ে যাবে ভাবিনি। এখন খুব ভালো লাগছে যে যে কেন্দ্রে সবথেকে কম ব্যবধান জয়-পরাজয় হয়েছিল, সেই কেন্দ্রেই সর্বাধিক মার্জিনে জয়ের রেকর্ড থাকল বাংলার নির্বাচনী ইতিহাসে।