১৯৮৯ থেকে ২০১৯-এ বিজেপি ২ থেকে বেড়ে ৪০! তৃণমূলের চ্যালেঞ্জার হয়ে ওঠার নেপথ্য কারণ
১৯৮০-র দশক অবধি বিজেপি লোকসভা ও বিধানসভা উভয় নির্বাচনে মাত্র ২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ১৯৮৯ সালে ২ শতাংশ থেকে ২০১৯ সালে ৪০ শতাংশ ভোটে পৌঁছে গিয়েছে বিজেপি।
১৯৮০-র দশক অবধি বিজেপি লোকসভা ও বিধানসভা উভয় নির্বাচনে মাত্র ২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ১৯৮৯ সালে ২ শতাংশ থেকে ২০১৯ সালে ৪০ শতাংশ ভোটে পৌঁছে গিয়েছে বিজেপি। বাংলা থেকে লোকসভায় ১৮টি আসনে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার পর বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে মস্তবড় চ্যালেঞ্জার এই একুশের নির্বাচনে।
বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষতা যেখানে মূল মন্ত্র
বিজেপি এখন টার্গেট করেছে বাংলাকে। আসন্ন নির্বাচনী লড়াইয়ে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলকে পরাস্ত করাই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে এবার। প্রশ্ন উঠেছে, শুধু ধর্মীয় তাস খেলে এবং ডানপন্থী মতাদর্শের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কীভাবে একটি দল বাংলার মতো রাজ্যে এত বেশি ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে পারে। এই বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষতা যেখানে মূল মন্ত্র।
কংগ্রেস বিরোধী মানসিকতা থেকে বামপন্থীদের সমর্থন
ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে তীব্রভাবে বিভক্ত সমাজে অভিজাত বাঙালিরা কখনও কম্যুনিস্টদের সঙ্গে ছিলেন না প্রথমে। রাজ্য বিভক্ত হওয়ার পর থেকেই তাঁরা নিজেদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক বলে বিবেচনা করেছিল এবং বাংলার বিভাজনের জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করতে শুরু করেছিল। কংগ্রেস বিরোধী এই মানসিকতা থেকেই বামপন্থীদের সমর্থন বেড়েছিল বাংলায়।
অভিজাত শ্রেণির কাছে উপহাসের কারণ মমতা
তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের পথচলার ইতিহাস ছিল সংক্ষিপ্তই। মমতার দেহাতি আচরণ, বক্তব্য অভিজাত শ্রেণির কাছে উপহাসের কারণ হয়ে ওঠে। তাঁর কলকাতাকে লন্ডনে পরিণত করা এবং দার্জিলিংকে সুইজারল্যান্ডে পরিণত করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও কটাক্ষ করা হয়েছিল।
শিল্পে বিনিয়োগ নেই রাজ্যে, চাকরির সুযোগ তৈরি হয়নি
মমতার সরকার যখন নিখরচায় রেশন, নিখরচায় স্বাস্থ্যসেবা, নারীশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের কন্যাশ্রীর মতো বেশ কয়েকটি দরিদ্রপন্থী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল, তখনও মধ্যবিত্ত বাঙালি সম্প্রদায় বঞ্চিত থেকেছে, কারণ শিল্পে বিনিয়োগ নেই রাজ্যে, চাকরির সুযোগ তৈরি হয়নি।
ধর্মের বিষয়ে মমতার অবস্থানও ভালো চোখে নেয়নি একাংশ
ধর্মের বিষয়ে মমতার অবস্থানও মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি অংশ ভালো চোখে নেয়নি। হিন্দু ভোটের জন্য বিজেপির সাথে লড়াইয়ে মমতা দাবি করেছিলেন তিনি একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু। জনসভায় হিন্দু ধর্মগ্রন্থ থেকে 'শ্লোক' পাঠ করতে শুরু করেছিলেন। বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণি তার মধ্যে এমন এক ব্যক্তিকে দেখেছিল যিনি হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের কঠোর উপাদানকে সন্তুষ্ট করতে মরিয়া ছিলেন।
মমতার কিছু দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েছে বিজেপি
তারপর তৃমমূলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ, কাটমানির সংস্কৃতি মধ্যবিত্ত শ্রেণির পছন্দ হয়নি এবং তাঁরা দেখতে পাচ্ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের নেতা-নেত্রীরা অনেকেই এইসহ কাণ্ডকারখানায় জড়িত। সেই কারণেই মধ্যবিত্ত শ্রেণি অনেকটাই বিজেপির দিকে সরতে শুরু করেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই বিজেপি জমি তৈরি করতে শুরু করেছিল বাংলায়। তা ধর্মীয়ভাবে হোক বা সামাজিকভাবে।