শুভেন্দুর নাকি বৈরাগ্য তৃণমূলে! বড়শিতে গাঁথতে ‘মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী’র টোপ বিজেপির
সবং-যুদ্ধ মিটতেই অবধারিত সেই প্রশ্নটা উঠেই পড়ল। গুরুত্ব না পেয়ে শুভেন্দুরও নাকি বৈরাগ্য তৈরি হয়েছে দলের উপর! চোরাস্রোতে তাঁকে বড়শিতে গাঁথতে চাইছে বিজেপি।
মুকুলের গেরুয়া নামাবলি গায়ে জড়়ানোর আগে থেকেই উঠেছিল প্রশ্নটা। আবারও জল্পনা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে। সবং-যুদ্ধ মিটতেই অবধারিত সেই প্রশ্নটা উঠেই পড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। খবর চাউড় হয়েছে যে শুভেন্দুরও নাকি বৈরাগ্য তৈরি হয়েছে দলের উপর! ঘনিষ্ঠমহলে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলেও দাবি করা হচ্ছে বিভিন্ন সূত্রে। এই সব সূত্রের দাবি শুভেন্দুর যোগ্যতাকে নাকি কাজে লাগাচ্ছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
[আরও পড়ুন:আমন্ত্রণ সত্ত্বেও এলেন না তৃণমূল বিধায়করা, ভারি গোঁসা হয়েছে বিজেপির বাবুলের]
অসমর্থিত এইসব সূত্রে আরও দাবি করা হচ্ছে যে, শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠমহল নাকি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়াবাড়ির রাজনীতি-তেও প্রশ্ন তুলেছে। এই মহলের নাকি অভিযোগ, অভিষেক যে মানের নেতা, তার তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন। এই কারণে নাকি দলের অন্দরে তৈরি হচ্ছে চোরাস্রোত। এই চোরাস্রোতকে কাজে লাগিয়েই মুকুল রায়কে বড়শিতে গেঁথেছে বিজেপি। এবার বড়শিতে শুভেন্দুকে গাঁথতে তৎপর হয়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। আর এই কাজে মুকুল রায়কেও ব্যবহার করছেন তাঁরা।
আর টোপ হিসেবে এবার লোভনীয় এক 'অফার' দিতে চলেছে বিজেপি। একেবারে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার টোপ দিয়ে শুভেন্দুকে বাজিয়ে দেখতে চাইছেন দিলীপ ঘোষ-রা। মুকুল রায় যখন বিজেপিতে পা বাড়িয়েছিলেন, তখন শুভেন্দুর প্রশস্তি গেয়েছিলেন। দিলীপ ঘোষ তো আবার শুভেন্দুকে তৃণমূলের মমতার পরে একমাত্র জননেতা বলে অভিহিত করেছিলেন।
এবার গোপনে শুভেন্দুকে দলে টানার একটা প্রয়াস কাজ করছে। তার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে- বিজেপিতে এমন একজনও নেতা নেই বাংলায়, যাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা যেতে পারে। এমনকী মুকুল রায় আসার পরেও বিজেপিতে সেই লোকের বড় অভাব। মুকুল রায় দক্ষ সংগঠক হতে পারেন। কিন্তু দলের মুখ হতে পারেন না। সেই মুখের খোঁজেই এখন বিজেপি হন্যে হয়ে ভাঙনের খেলায় মেতে উঠেছে।
আর শুভেন্দু এই দলবদলের জল্পনাকে নিছকই রটনা বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, 'আমি তৃণমূলে ছিলাম, তৃণমূলে আছি, তৃণমূলেই থাকব। যাঁদের রটনা করা স্বভাব, যাঁরা কাদা ঘাঁটতে ভালোবাসে, তাঁরা কাদা ঘাঁটুক। বিজেপি বুঝতে পেরে গিয়েছে, ওঁদের যে ক্ষমতা, তা দিয়ে কিস্যু হবে না। তাই এইসব আজগুবি ঘটনা বাজারে ছাড়ছে। সবংয়ে গোহারা হয়েছে। আসন্ন উপনির্বাচনগুলিতেও কী পরিণতি হবে, তা বুঝতে পেরে গিয়েছে, আর পঞ্চায়েতেও হালে পানি পাবে না বিজেপি।'
তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিমত, শুভেন্দু মুখে যাই বলুন, দলের অন্দরে অভিষেককে নিয়ে মাতামাতিতে খুব একটা খুশি নন তিনি নিজেও। খুশি নন, তাঁর অনুগামীরাও। মুকুল রায়ের সঙ্গেও দলের বিবাদের সূত্রপাত ওই অভিষেক। অভিষেককে হাতে ধরে রাজনীতির পাঠ দিলেও, পরে তাঁকেই সরিয়ে ব্যাটন তুলে দেওয়া হয়েছে অভিষেকের হাতে। ২১শে জুলাই মঞ্চে সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হতেই মুকুল রায় দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
আর শুভেন্দুর সঙ্গে এই জিনিস করা হয়েছে অনেক আগেই। তারপরও শুভেন্দুকে অন্যভাবে গুরুত্ব বাড়িয়ে দলে ধরে রাখার প্রয়াস ছিল। পরিবহণমন্ত্রী থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ, মালদহের মতো জেলার গুরুদায়িত্ব, দুই মেদিনীপুরের দায়িত্বও একপ্রকার ছিল তাঁর চওড়া কাঁধে। সেই দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন যোগ্য নেতার মতো। আর একথাও সত্যি যে শুভেন্দু অধিকারীর মতো জননেতা মমতা ছাড়া তৃণমূলে দুটো নেই, তাই শুভেন্দুকে এত সহজে ছাড়বে না তৃণমূল। বিজেপি তাই টোপ দিলেও, সেই টোপ শুভেন্দু গিলবেন কি না, বা তৃণমূল গিলতে দেবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়।
[আরও পড়ুন:টার্গেট জঙ্গলমহলে কে তৃণমূলের 'পাহারাদার'! মুকুলকে ফাঁকা জমি দেবেন না মমতা]