
মমতাকে শুভেন্দুর ‘প্রণাম’-এর পাল্টা দিতে ‘ছবি’ খুঁজছে বিজেপি, বুমেরাংয়ের আশঙ্কা পঞ্চায়েতে
মমতা-শুভেন্দু সৌজন্যের পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকদিন। তারপরও প্রণাম-তরজা থামেনি রাজ্য রাজনীতিতে। পঞ্চায়েতের আগে সৌজন্যের রাজনীতিতে বিজেপির মুখ পুড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে রাজনৈতিক মহল। রাজনৈতিকভাবে পাল্টা দিতে না পারলে তৃণমূলই এর ফায়দা তুলবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বিজেপি তাই হন্যে হয়ে এখন একটা ছবি খুঁজে বেড়াচ্ছে।

মমতা বন্যোএকপাধ্যায় বিধানসভায় সৌজন্যের রাজনীতিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিজের ঘরে ডেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন। বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ যখন আওয়াজ তুলছিল ডিসেম্বরের পর রাজ্য সরকারকে চলতে দেব না, তারপর সৌজন্যের রাজনীতিতে মতার ডাকে সাড়া দিয়ে বিপাকে পড়লেন শুভেন্দু।
শুভেন্দু অধিকারী তাই কালবিলম্ব না করে সৌজন্যের রাজনীতির ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই পাল্টা দিয়ে বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করে ছাড়ব। কিন্তু শুধু মুখের কথায় হবে না। বিজেপি সার ভেবেছে, রাজনৈতিকভাবে তৃণমূলকে পাল্টা দিতে হবে। সে জন্য মমতার মোদী-প্রণামের ছবি সামনে আনতে মরিয়া। কিন্তু সেখানেও বেধেছে গোল।
শুভেন্দু অধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাতে তাঁকে সৌজন্যমূলক প্রণাম করেচেন বলে বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়েছে। কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সৌজন্য দেখাতে নমস্কার প্রতি নমস্কার করেই থাকে। তা নিয়ে কেন এত বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে, সে প্রশ্ন উঠে পড়েছে। কিন্তু সেই প্রশ্নের থেকেও বড় হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার বিষয়টি। তৃণমূল বেশি ফায়দা লুটতে পারে ভেবে তাই বিজেপি এর পাল্টা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে প্রধানমন্ত্রীকে ঢাল করা ঠিক হবে না বলেই একাংশ মনে করছে।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতের দরবার করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সৌজন্যমূলক প্রণাম করেন, তা জেনেছে বিজেপি। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর সেই ছবি সামনে আনতে বদ্ধপরিকর হয় বিজেপি। রাজ্য বিজেপি এই মর্মে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী অফিসেও যোগাযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদীকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্যোও পাধ্যায়ের প্রণামের ছবি প্রকাশ্যে এনে তৃণমূলের হাতিয়ারকে ভোঁতা করতে চাইছে।
মমতা-শুভেন্দু সাক্ষাতের পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। সেই সাক্ষাতের রাজনৈতিক তাৎপর্য ব্যাখ্যায় নেমেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই ঘটনার পর বিজেপিকে খানিক অস্বস্তি পড়তে হচ্ছে। তার কারণ এই সৌজন্যকে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ অপব্যাখ্যা করেছেন। যেমন, দিলীপ ঘোষ বলে বসেন, কেউ কালীঘাটে গিয়ে প্রণাম করেন, কেউ বিধানসভায়। তাঁর কথায় সৌজন্যের রাজনীতি অন্য মাত্রা পায়। তারপর সুকান্ত মজুমদার অবশ্য জানান, মুখ্যমন্ত্রী লিডার অব দ্য হাউস, উনি ডাকলে যেতেই পারেন। আর সৌজন্যের নমস্কার প্রতি নমস্কার তো হয়েই থাকে। এর মধ্যে অন্য অর্থ খোঁজার কোনও মানে হয় না। আবার বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, এটা সম্পূর্ণ শুভেন্দু অধিকারীর নিজস্ব ব্যাপার। উনিই বলতে পারবেন।
কিন্তু বিজেপির অন্দরে এই ঘটনায় ঝড় ওঠে। প্রশ্ন ওঠে, একুশের নির্বাচনের পর শসাক দলের সন্ত্রাসে যেখানে দলের হাজারো কর্মী ঘরছাড়া, প্রাণ হারিয়েছেন ৫৬ জন কর্মী। তারপর তৃণমূল নেত্রীকে প্রণাম করে কোন সৌজন্য দেখালেন বিরোধী দলনেতা বিজেপির অন্যতম মুখ শুভেন্দু অধিকারী? তারপর কালবিলম্ব না করে বিরোধী দলনেতা মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণের রাস্তা নেন। তাঁকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করে ছাড়ার হুমকি দেন। প্রমাণ হয়ে যায়, ২৫ নভেম্বরের সৌজন্যের রাজনীতির পর বিজেপি ও শুভেন্দু উভয়েই অস্বস্তিতে পড়েন। অস্বস্তি এড়াতে তিন বিধায়ককে নিয়ে গিয়েও কাজ হয়নি বিশেষ।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে মমতার প্রণাম জানানোর ছবি বা ভিডিও সামনে এনে বিজেপি এর পাল্টা দিতে চাইলেও, তা বুমেরাং হবে বলে মনে করছে একাংশ। প্রথমত প্রধানমন্ত্রী অফিস তা মানবে কি না সংশয় থেকেই যায়। তারপর প্রধানমন্ত্রীকে এই রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ির মধ্যে টেনে আনা ঠিক হবে না। সেক্ষেত্রে বুমেরাংয়ের আশঙ্কা থেকে যাবে। দল বা প্রধানমন্ত্রী কারও সম্মানই তাতে বাড়বে না। বরং অস্বস্তি আরও প্রকট হবে। তাই বিজেপি পড়ছে মহা ফ্যাসাদে।
একধাক্কায় কলকাতার তাপমাত্রা বাড়ল ২ ডিগ্রির বেশি! একনজরে বাংলার জেলাগুলির আবহাওয়ার পূর্বাভাস