তিন নেতার ‘অন্তর্কলহ’-এ ধন্দে বিজেপি, প্রাথমিক লক্ষ্যপূরণ হওয়াই দায় পঞ্চায়েত-যুদ্ধে
রাজ্যে পঞ্চায়েতের সমস্ত বুথে প্রার্থী দেওয়াই প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ ও রাহুল সিনহা-রা। কিন্তু কোন পথে হবে উদ্দেশ্যপূরণ, তা নিয়েই ধন্দ।
লোকসভার আগে পঞ্চায়েতকে সেমিফাইনাল ম্যাচ হিসেবেই দেখছে বিজেপি। সেই লক্ষ্যে রাজ্যে পঞ্চায়েতের সমস্ত বুথে প্রার্থী দেওয়াই প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ ও রাহুল সিনহা-রা। কিন্তু কোন পথে হবে উদ্দেশ্যপূরণ। তা নিয়েই ধন্দে বিজেপির নিচুতলার নেতা-কর্মীরা। কেননা এই লক্ষ্যপূরণের পন্থায় তিন নেতার তিন মত।
এই মুহূর্তে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার আগে বঙ্গ বিজেপির প্রধান তিন মুখের সমন্বয় সাধনই সর্বাগ্রে দরকার। কিন্তু তিনজনের ভিন্নমতে দলের কর্মীরা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছেন না। তাঁরা কোন পথে হাঁটবেন, তা স্থির করতেই সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। দোরগোড়ায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে পঞ্চায়েত।
প্রথমে স্থির হয়েছিল প্রতি বুথে তিনজন করে প্রার্থীর নামের তালিকা তৈরি করতে হবে। এবং তা ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ করে ফেলার নির্দেশ জারি করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে। সেই কাজ বিশবাঁও জলে। তার প্রধান কারণই হল ৭৭ হাজার বুথে প্রার্থী মিলবে কোথা থেকে? সেখানেই লুকিয়ে বিজেপির ভোট লড়াইয়ের চাবিকাঠি।
পঞ্চায়েত নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছেন তৃণমূলত্যাগী মুকুল রায়। তাঁর উপর গুরু দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। ৭৭ হাজার আসনেই প্রার্থী দিতে মুকুল রায় বড় ভরসা বিজেপির। তিনি দায়িত্ব পেয়েই কাজে নেমে পড়েছেন ঠিকই, কিন্তু সাফল্যের রূপরেখা দেখাতে পারছেন না। কেননা মুকুলবাবু চাইছেন তৃণমূল থেকে ভাঙিয়ে আনা নেতা-কর্মীদের প্রার্থী করতে। আর সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েই তৃণমূল থেকে ভাঙানো হচ্ছে নেতা-কর্মীদের।
কিন্তু বাধ সেধেছেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি চাইছেন না তৃণমূল থেকে আসা নেতা-কর্মীরা প্রার্থী হন। দলের দীর্ঘদিনের নেতা-কর্মীদেরই প্রার্থী করতে হবে। কেননা বিজেপির লড়াইয়ে তাঁদের আত্মত্যাগ রয়েছে। আর তৃণমূল থেকে আসা নেতা-কর্মীদের প্রার্থী করলে, ভোটে জেতার পর ফের তাঁদের তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে সিংহভাগ। তা হোক চাইছেন না বিজেপি রাজ্য সভাপতি।
আর বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি বর্তমানে কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক রাহুল সিনহা আবেদন করেছেন, তৃণমূলকে পরাস্ত করতে দলমত নির্বিশেষ প্রার্থী বেছে নিতে। প্রয়োজনে তৃণমূল বিরোধী শক্তি হিসেবে যে যেখানে শক্তিশালী, তাঁকে সমর্থন করাই শ্রেয় হবে বলে তাঁর অভিমত। অর্থাৎ তাঁর মতামত অনুযায়ী প্রতি বুথে অর্থাৎ৭৭ হাজার বুথে প্রার্থী দেওয়ার প্রাথমিক লক্ষ্যই বাধাপ্রাপ্ত হতে চায়।
আর এই তিন মতের জাঁতাকলে পড়ে হাঁসফাঁস করে চলেছে বিজেপি। বিজেপির জেলা নেতৃত্ব, ব্লক নেতৃত্ব স্থির করতে পারছে না, তাঁদের পক্ষে কোন পন্থা সবথেকে কার্যকরী হতে পারে। এই অবস্থা থেকে তাঁদের উদ্ধারের লোকও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেননা মুকুল রায় পঞ্চায়েতের মুখ হলেও দলের রাশ তাঁর হাতে নেই। মোট কথা পঞ্চায়েতের আগে প্রার্থী লাইন ঠিক করতেই বিজেপির কালঘাম ছুটে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে।