বিজেপি ব্যাক-ফায়ারের বলি এনআরসি ফ্যাক্টরে! উপনির্বাচনের ফলে চমক তৃণমূলের
তবে কি এনআরসি ফ্যাক্টরই কি ব্যাক-ফায়ার করল বিজেপিকে! লোকসভায় বিপুল ভোটে পিছিয়ে থেকেও উপনির্বাচনে অসাধারণ কামব্যাক করল তৃণমূল কংগ্রেস।
তবে কি এনআরসি ফ্যাক্টরই কি ব্যাক-ফায়ার করল বিজেপিকে! লোকসভায় বিপুল ভোটে পিছিয়ে থেকেও উপনির্বাচনে অসাধারণ কামব্যাক করল তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা-ঝড়ে ম্লান হয়ে গেল গেরুয়া শিবির। করিমপুর কেন্দ্রটি ধরে রাখার পাশাপাশি কালিয়াগঞ্জ ও খড়্গপুরও বাম-কংগ্রেস জোট এবং বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিল তৃণমূল কংগ্রেস।
কোন জাদুবলে সম্ভব হল
কিন্তু কোন জাদুবলে সম্ভব হল এই অসাধ্যসাধন? এর পিছনে যেমন ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের অবদান রয়েছে, তেমনই রয়েছে এনআরসি-ইস্যু। এনআরসি ইস্যুই ব্যাক ফায়ার হয়েছে বিজেপির। আর এনআরসির বিরোধিতা করে তৃণমূল ফায়দা লুটে নিয়েছে কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুরে।
মূল ইস্যু ছিল এনআরসি
কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুর দুটিই সীমান্তবর্তী এলাকা। এই এলাকায় এবার বিধানসভা কেন্দ্রের উফনির্বাচনে মূল ইস্যু হয়ে উঠেছিল এনআরসি। বিজেপিও যেমন এনআরসি নিয়ে প্রচার চালিয়েছিল, তেমন তৃণমূলও এনআরসির বিরোধিতা করে প্রচার চালিয়েছিল। দেখার ছিল, মানুষ কার প্রচারকে নেয়। ভোটের ফলাফলেই স্পষ্ট বাংলার সমীন্তবর্তী এলাকার মানুষ এনআরসি-প্রশ্নে বিজেপির দাবিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।
এনআরসি আর নাগরিকত্ব বিল
তৃণমূল বোঝাতে সম্ভবপর হয়েছে মানুষকে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেবে বিজেপির এই এনআরসি। এনআরসি আর নাগরিকত্ব বিল দুটিই বিজেপির মস্তবড় ভাঁওতা। অসমের উদাহরণ দিয়ে তৃণমূল বাংলার মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছে এনআরসির কোনও ভালো দিক নেই। বরং এতদিন যে ঘর বেঁধেছিলেন, তা তছনছ করে দিতেই বিজেপি এই এনআরসি তাস খেলেছে।
এনআরসি ইস্যুকে ঢাল করেই
এক এনআরসি ইস্যুকে ঢাল করেই তৃণমূল তিন থেকে একে উঠে এসেছে কালিয়াগঞ্জে। আবার করিমপুরেও বিজেপি জোর ধাক্কা খেয়েছে। করিমপুরে এনআরসিকে ইস্যু করেই বিজেপি এবার মাত দিতে চেয়েছিল তৃণমূলকে। তৃণমূলের জেতা আসন ছিনিয়ে নিতে প্রার্থী করা হয়েছিল বঙ্গ বিজেপির হেভিওয়েট জয়প্রকাশ মজুমদারকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এখানে জয়ের ব্যাবধান বাড়িয়ে নিয়ে আসন ধরে রেখেছে তৃণমূল
দিলীপ-গড়েও তৃণমূলের উত্থান
আর খড়গপুরে সে অর্থে এনআরসিকে প্রধান ইস্যু করেনি কোনওদলই। তবু দিলীপ-গড়ে তৃণমূলের উত্থান এবার বঙ্গ রাজনীতির অঙ্ককে ফের বদলে দেওয়ার পরিচায়ক হয়ে উঠেছে। এখানে ফের প্রবলতর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার আভাস দিয়েছে বাম-কংগ্রেস। একটা সময় এই কেন্দ্রে এগিয়েও ছিল বাম-কংগ্রেস প্রার্থী।
এনআরসির কারণেই হার হয়েছে
অন্য দুই কেন্দ্র অর্থাৎ করিমপুর ও কালিয়াগঞ্জে এনআরসি ছিল মূল ইস্যু। কালিয়াগঞ্জের বিজেপি প্রার্থী কমলচন্দ্র সরকার তো নিজে মুখেই স্বীকার করে নিয়েছেন, এনআরসির কারণেই হার হয়েছে বিজেপির। তিনি বলেন, আমরা মানুষকে বোঝাতে পারিনি। মানুষ বুঝেছে এনআরসি কেন্দ্র করেছে, তাই ভোটটা বিপক্ষে গিয়েছে বিজেপির। সেই কারণে ৫৭ হাজার ভোটে এগিয়ে থেকেও ব্যবধান মুছে দিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল।
উন্নয়নকেও জয়ের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা
তৃণমূল প্রার্থী তপন দেব সিং আবার এনআরসি ইস্যুর পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকেও জয়ের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। আর সবথেকে বড় কারণ, বিজেপির কাছে লোকসভা ভোটে ধাক্কা খেয়ে তৃণমূল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কামব্যাকের লক্ষ্যে। তাই সফল হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই জয় প্রমাণ করেছে মানুষ তৃণমূলের উপর বীতশ্রদ্ধ।
করিমপুরেও বুমেরাং এনআরসি
একই কথা প্রযোজ্য করিমপুরের জন্য। সীমান্তবর্তী কেন্দ্র করিমপুরে বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার প্রথম থেকেই এনআরসিকে মূল ইস্যু করেছিলেন। তা-ই বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে বিজেপির। বিজেপি লড়াইয়েই আসতে পারেনি। এমনকী একটা সময়ে তৃতীয় স্থানেও নেমে গিয়েছিল বিজেপি। তৃণমূল ক্লিন সুইপ করে বেরিয়ে গিয়েছে এই কেন্দ্রে।
বাংলার উপনির্বাচনে দিলীপগড় দখল করে কাদের কৃতজ্ঞতা জানালেন খড়গপুরের তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার
অন্য একটা ভোট একসাইডে হয়ে গিয়েছে! কালিয়াগঞ্জে হারের কারণ খুঁজে পেলেন বিজেপি প্রার্থী