মুকুল ভিন্ন বাংলায় ইতিহাস নৈব নৈব চ! তৃণমূল দিয়ে তৃণমূল বধের কৌশল বঙ্গ বিজেপির
মুকুল রায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি পদে উন্নীত হয়েছেন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের দিকে চেয়েই যে মুকুল রায়ের এই উত্থান, তা স্পষ্ট ইতিমধ্যেই। মুকুল রায়কে ছাড়া বাংলায় পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়, তা বুঝেই তাঁর গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। মুকুল রায় এর ফলে তৃণমূল কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ জানানোর পাশাপাশি প্রার্থী বাছতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারবেন।

তৃণমূলে গভীর শিকড় রয়েছে মুকুল রায়ের
শাসক শিবিরে অর্থাৎ তৃণমূলে গভীর শিকড় রয়েছে মুকুল রায়ের। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড। দলসের সংগঠন তিনিই নিজে হাতে সাজিয়েছিলেন। এই যোগাযোগটাই বিজেপি আরও ভালো করে কাজে লাগাতে চায় ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে।

তৃণমূলকে মুকুলের মতো কেউ ভালো চেনে না
বিজেপি মনে করে, তৃণমূলের বুথ-স্তরের সুবিধা-অসুবিধাগুলি সুবিধাগুলি সম্পর্কে মুকুল রায়ের থেকে ভালো আর কেউ জানেন না। আর বিজেপি চায় এবার যেকোনও মূল্যে বাংলার নির্বাচন জিততে। তাই মুকুল রায়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সর্বভারতীয় সহসভাপতির মর্যাদা দেওয়া হল। মমতাকে হারাতে বিজেপি তাঁর উপরই নির্ভর করছে।

মুকুলকে গুরুত্ব দিতে রাহুল পর্যন্ত ছাঁটাই
সেই কারণেই শুধু মুকুল রায়কেই গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়নি বিজেপি, মুকুল-ঘনিষ্ঠ অনুপম হাজরাকেও বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক করেছে। তার থেকেও বড় কথা বিজেপির এই সাংগঠনিক রদবদলে রাহুল সিনহার মতো নেতাকে ছেঁটে ফেলা হয়েছেছে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে। তাঁকে কেন্দ্রীয় সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মুকুল ভিন্ন যুদ্ধ জেতা যাবে না, জানে বিজেপি
বিজেপি মনে করছে, এই মুহূর্তে তাঁদের সবথেকে বড় দরকার মুকুল রায়কে। তা যদি কারও বিনিময়েও হয় হোক। কিন্তু মুকুল ভিন্ন যুদ্ধ জেতা যাবে না। ফলে রাহুল সিনহার অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও মুকুল ঘনিষ্ঠ আর এক তৃণমূল থেকে আসা নেতাকে বিজেপিতে বড় পদ দেওয়া হয়েছে। অনুপম স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন রাহুল সিনহার।

কঠিন সময়ে কাটিয়ে মুকুলের উত্থান বিজেপিতে
রাহুল সিনহা ও দিলীপ ঘোষ বিজেপির আদি নেতা। তাঁদের দাপটে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে বেশ কয়েক মাস ধরে মুকুল রায় রাজ্য বিজেপিতে কঠিন সময় কাটিয়েছেন। কিন্তু বিজেপি আর উপেক্ষা করতে পারল না। মুকুলকে জায়গা দিতেই হল। এবং তিনি এমন এক জায়গা তৈরি করলেন, যেখানে দিলীপ-রাহুলরা গৌণ হয়ে গেলেন অনেকটাই।

ভারতীয় রাজনীতির ‘গ্যারি সোবার্স’ মুকুল
মুকুল রায় নিজেকে ভারতীয় রাজনীতির ‘গ্যারি সোবার্স' বলে অভিহিত করেছিলেন। গ্যারি সোবার্স যেমন বলেছিলেন, এই পৃথিবীতে যতদিন ক্রিকেট থাকবে, মানুষ সর্বদা গ্যারি সোবার্সকে স্মরণ করবে। একইভাবে যতদিন রাজনীতি থাকবে, মুকুল রায়কে কেউ উপেক্ষা করতে পারবে না।

মুকুল রায়কে শংসাপত্র দেওয়ার কেউ নন দিলীপ
আবার বিজেপির রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, "আমাদের মধ্যে কোনও মতপার্থক্য নেই। মুকুল রায়কে শংসাপত্র দেওয়ার জন্য আমি কেউ নই। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে তিনি বিজেপিতে রয়েছেন এবং বিজেপিতেই থাকবেন। আমি শুধু বলতে চাই যে আমি ফ্রন্টফুট খেলোয়াড়।"

কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বাংলায় আসার পরই চাকা ঘুরল
সম্প্রতি কৈলাশ বিজয়বর্গীয় অমিত শাহের দূত হয়ে বাংলায় আসার পরই চাকা ঘুরতে থাকে। মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দেন তিনি। এবং পরবর্তী সময়ে মুকুল রায়কে বাংলার চাণক্যের মর্যাদা দিয়ে পরিবর্তনের বার্তা দিয়ে রাখেন। বলেন, মুকুল রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার কুর্সিতে বসিয়েছিলেন, আবার মুকুল রায় বাংলায় তৃণমূলের বিনাশ ঘটিয়ে পরিবর্তন আনবেন।

তৃণমূল দিয়েই তৃণমূল বধের কৌশল করেছে বিজেপি
২০২১ সালে তৃণমূলকে পরাস্ত করার কৌশল নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি রাজ্য নেতৃত্বের যে কোনও ফাটল এড়াতে তাঁকেই ভারসাম্য বজায় রাখার কাজ করতে হবে। তাই মুকুল রায়কে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিষিক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০২১-এর আগে গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মুকুল রায়কে। তৃণমূল দিয়েই তৃণমূল বধের কৌশল করেছে বিজেপি।

২০২১-এ বাংলায় ইতিহাস তৈরি করবে বিজেপি
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে রাহুল সিনহার প্রকাশ্য অসন্তোষ এখন মুকুল রায়ের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এই অসন্তোষ দূর করা দিয়েই তাঁর নতুন ভূমিকায় কাজ করতে হবে। তা সামলেই মুকুল রায় জোর দিয়ে বলেছেন, আাগামী ২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ইতিহাস তৈরি করবে বিজেপি। জনগণ এই রাজ্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সম্ভবপর হবে।
সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য বাংলায় কি নৈরাজ্য চলছে না! মমতাকে প্রশ্নবাণ ছুড়লেন রাজ্যপাল