'বাংলায় আছি মানে যেন পাকিস্তানে আছি', বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক বিজেপি নেত্রী লকেট
একটা সময় তাঁর পরিচিতি ছিল অভিনেত্রী হিসাবে। আজ তিনি নেত্রী। বহু অধ্যায় পেরিয়ে আজ তিনি বাংলার রাজনীতির অন্যতম নাম.. তিনি লকেট চট্টোপাধ্যায়।
একটা সময় তাঁর পরিচিতি ছিল অভিনেত্রী হিসাবে। আজ তিনি নেত্রী। বহু অধ্যায় পেরিয়ে আজ তিনি বাংলার রাজনীতির অন্যতম নাম.. তিনি লকেট চট্টোপাধ্যায়। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হয়েছিল 'ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা।' এই বিশেষ সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বে আমরা তুলে ধরেছিলাম হুগলি লোকসভা কেন্দ্র নিয়ে বিজেপির এই প্রার্থীর বক্তব্য। আজ দ্বিতীয় পর্বে, রাজ্য রাজনীতি থেকে বিরোধী শিবির নিয়ে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সোজাসাপ্টা মতামত।
হুগলিতে আপনি প্রার্থী হিসাবে মনোনীত হওয়ার পরই বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের খবর প্রকাশ্যে আসে। রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতির নাম উঠে আসে...
এটা একটু বাড়িয়ে মিডিয়ায় দেখানো হয়। এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়। যাঁকে নিয়ে ঘটনা ঘটেছিল ,তিনি আমার বড় দাদার মতো। তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনিও আমার প্রচারে আসবেন। দেখুন,.. একটু আধটু এক্সপেকটেশন তো থাকতেই পারে। সব মানুষেরই কিছু না কিছু আশা থাকে। তবে দিনের শেষে আমরা একটা পরিবার। নরেন্দ্র মোদীজি আর অমিত শাহ আমাকে প্রয়োজন মনে করেছেন বলেই হুগলিতে পাঠিয়েছেন। এটা আমাদের দলের একটা আদর্শ যে, যাঁকে যেখানে পাঠানো হবে,তাঁকে সেই কাজটাই করতে হবে।
মিমি, নুসরত এমনকি আপনাকে নিয়েও রাজনৈতিক ট্রোল পাল্টা ট্রোলে সোশ্যাল মিডিয়া ভরে উঠেছে। এই বিষয়ে আপনার কী বার্তা?
এটা তো উচিত নয়। আমি কোনও মতেই সমর্থন করি না মহিলাদের নিয়ে এমন কুরুচিকর পোস্ট। রাজনীতিটা রাজনীতির মতোই হওয়া ভালো। আমার দেবীকে পুজো করছি আর নারীদের নিয়ে এই সমস্ত চলছে!
মহিলা প্রার্থীদের প্রসঙ্গ যখন উঠছে, একটা প্রশ্ন না করে পারছি না....বিজেপির ইস্তেহারে ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণের কথা বলা হচ্ছে, অথচ লোকসভা ভোটে মহিলা প্রার্থীর নিরিখে কিন্তু এগিয়ে তৃণমূল। এক্ষেত্রে তৃণমূল ৪১ শতাংশ মহিলা প্রার্থী দিয়েছে এবারের ভোটে..কী বলবেন?
তৃণমূল সেরকমই মহিলা প্রার্থী দিয়ছে, বেশিরভাগই ফিল্মস্টার..
আপনি নিজেও তো শিল্পী..
হ্যাঁ, অবশ্য়ই আমি নিজেও শিল্পী। কিন্তু যে শিল্পীকে তৃণমূল যেভাবে কাজে লাগিয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়ানোর জন্য এঁদের দাঁড় করানো হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা.. যেমন বসিরহাট ও যাদবপুর, এখানে মানুষের মনকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এমনটা করা হয়েছে। বসিরহাটে কত ঘটনা ঘটেছে আমার জানি..। সেখানের মানুষকে ভোলাতে সেখানে এরকম প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।
শিল্পী হিসাবে তৃণমূলে যাঁরা এসেছেন তাঁদের নিয়ে কী বলবেন?
যাঁরা শিল্পী হিসাবে এসেছেন তাঁরা হয়তো বুঝতে পারেছেন না যে তাঁদেরকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। সন্ধ্যা রায় বলুন বা তাপস পাল , যাঁদের নিয়ে আসা হয়েছিল তাঁদের কিন্তু তৃণমূল পরে ভুলেই গেছে। ভোট বার করে নেওয়ার পর.. তারপর আর কিন্তু কিছুই এঁদের জানানো হয়না না। এঁদের ব্যবহার করে কোনও মতে ভোট তুলে নিয়ে আবার এঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এঁদের মানুষের সেবা করার জন্য সাংসদ তহবিলের টাকাও ব্যবহার করতে দেওয়া হয়না। পুরোটা তৃণমূল নিজেরাই চালায়।
মুনমুন সেন বা অর্পিতা ঘোষকেও যে প্রার্থী করা হয়েছে ,তাহলে আপনি বলতে চাইছেন সেটাও চমক?
ওঁরা কিছু জানেনা। ওঁদের জানানো হয়না। ওঁদের কাছে মানুষের দুঃখ ,কষ্ট দেখানো হয় না। এটায় ওঁদের দোষ নেই। তাঁরা সেসব জানলে ওই পার্টিটায় ওঁরা থাকতেন না। ভোট হওয়ার পর তৃণমূল নিজের মতো আখের গুছিয়ে নেয়, এঁদের চিনতেও চায় না।
বিজেপি শাসিত রাজ্যে ইতিমধ্যেই গোরক্ষা ও গোমাংস ইস্যুতে একাধিক বিতর্কিত অধ্যায় উঠে এসেছে। বিরোধীদের দাবি আপনারা বাংলায় এলে বাঙালির খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতিতে প্রভাব পড়বে। আপনার কী মত?
কোনও দিনই তা হবে না। উনি নিজে হিটলারের মতো শাসন করে গিয়েছেন। উনি এসব বলে বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক তকমা লাগাবার চেষ্টা করছেন। অন্যান্য রাজ্যে যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভাবে বিজেপির সরকার চলছে বাংলাতেও সেরকমই হবে একদিন। সারা দেশে কিন্তু বাংলার রাজনীতি নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়। কেউ যখন শোনেন বাংলা থেকে আসছি ,বলেন ওরেব্বাবা..বাংলায় আছি মানে.. যেন পাকিস্তানে আছি...। সবার মধ্যে এরকম একটা ধারণা চলে এসেছে যে, বাংলায় নয় আমরা পাকিস্তানে থাকি। এই ধারণা বাইরের মানুষের মনেও আছে। কার জন্য এটা হয়েছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য হয়েছে।
জঙ্গি মৃত্যু নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্রশ্ন তুলে ছিলেন সেটাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
এটা খুবই অন্য়ায়। যেদেশে বড় হয়েছি সেদেশের সেনাকে বিশ্বাস করব না , পাকিস্তানকে বিশ্বাস করব , এটা ভাবা যায় না।
[আরও পড়ুন:সিঙ্গুর থেকে ডানলপ জট, হুগলি নিয়ে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে একাধিক ইস্যুতে অকপট লকেট]
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিরোধীদের অভিযোগ আপনারা সেনাদের নিয়ে রাজনীতি করছেন। সেই প্রেক্ষাপটে আপনি কী বলবেন?
সেনা মৃত্যু নিয়ে উনি বলছেন এটা ইচ্ছাকৃত। এটা উনি কেন বলছেন? .. উনিই প্রথম থেকে রাজনীতি টেনে এনেছেন এটার মধ্যে। ভোটের জন্য পুলওয়ামা নিয়েও উনি রাজনীতি করতে ছাড়ছেন না। ওনার প্রশ্ন.. পুলওয়ামায় যে জওয়ান হত্যার জন্য বিস্ফোরক নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ,তা কেন আগে জানা যায়নি? তাহলে টালা ব্রিজের কাছে যে বিস্ফোরক উদ্ধার হল উনি তা ধরতে পারেননি কেন? সেনার কথা উনি বিশ্বাস না করে পাকিস্তানের কথা বিশ্বাস করছেন। যখন পুলওয়ামার পর শহিদদের মরদেহ বিমানবন্দরে এসেছিল , তখন উনি কেন আসেননি? সেখানে তো আমরা গিয়েছিলাম। সেনা তো সারা দেশের.. বিজেপির সেনা বা তৃণমূলের সেনা বলে তো কিছু নেই!...
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।
ধন্যবাদ।
[আরও পড়ুন: গ্লাভস বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলে ওয়ানইন্ডিয়া-র বিশেষ সাক্ষাৎকারে কী জানালেন মিমি? ]
ছবি সৌজন্য: লকেট চট্টোপাধ্যায়ের ফেসবুক পেজ