প্রশাসনিক উদাসীনতায় পরিযায়ী পাখিরা আজ বিপন্ন একাধিক জেলায়
একদিকে চোরা শিকারিদের দাপট, অন্যদিকে বনদফরের উদাসীনতায় আজ বিপন্ন বাস্তু তন্ত্রের রক্ষাকারী পরিযায়ী পাখির দল।
একদিকে চোরা শিকারিদের দাপট, অন্যদিকে বনদফরের উদাসীনতায় আজ বিপন্ন বাস্তু তন্ত্রের রক্ষাকারী পরিযায়ী পাখির দল। অবৈধ পাখি শিকার ও চোরাকারবারির স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে কলকাতা লাগোয়া সীমান্তবর্তী জেলার একাধিক এলাকা।
শীতের শুরু থেকেই কলকাতা ও শহরতলি লাগোয়া রাজারহাট, বাদু, ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রাম, বারাসাত, খড়িবাড়ি, শাসন, দেগঙ্গা, নীলগঞ্জ, বনগাঁ ও বসিরহাটের একাধিক খাল-বিল-পাখিরালয়ে ভিড় করে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। যাকে কেন্দ্র করে মূলত বেড়ে যায় পাখি শিকারিদের দাপট। পাখি মেরে মাংস খাওয়া এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিক্রির লোভে সক্রিয় থাকে চোরা শিকারিরা। অনেকে আবার নিছকই শখ করে পাখি শিকার করতে বেরোয়। গুলি করে মারার পাশাপাশি ফাঁদ পেতেও ধরা হয় জীবন্ত পাখি। প্রকাশ্য দিবালোকে পার্শ্ববর্তী বাজারগুলোতে সেই নানা ধরনের পরিযায়ী ও বিলুপ্তপ্রায় পাখির কেনাবেচা চলে দেদার। এককথায় এলাকাগুলো হয়ে ওঠে চোরা শিকারিদের স্বর্গরাজ্য।
অভিযোগ,
এ
সবটাই
ঘটছে
প্রশাসনের
চোখের
সামনেই।
কিন্তু
প্রশাসন
চুপ।
বাজার
ফেরত
ভারত-বাংলাদেশ
সীমান্তবর্তী
স্বরূপনগরের
এক
পাখি
কারবারির
কথায়,
'সব
কিছু
পেটের
দায়ে
করতে
হচ্ছে।'
পাখি
কারবারের
বিষয়ে
স্থানীয়
এক
বাসিন্দা
জানান,
মূলত
নভেম্বরের
প্রথম
সপ্তাহ
থেকে
এই
পরিযায়ী
পাখিগুলো
আসতে
শুরু
করে।
সীমান্তের
বসিরহাট
মহকুমার
স্বরূপনগরে
এক
বিশাল
অশ্বখুরাকৃতির
বিল
বা
জলাশয়,
যা
বিল
বল্লি
নামে
পরিচিত।
দিনের
পর
দিন
স্বরূপনগরের
এই
বল্লির
বিল
থেকে
পাখি
ধরা
হয়।
সেই
সময়ই
বেড়ে
যায়
পাখি
শিকারিদের
বাড়বাড়ন্ত
।
তারা
সারা
রাত্রি
জাল
এবং
বিভিন্ন
কৌশলে
পাখি
ধরে।
আরও
জানান,
গুড়গুড়ি,
কাদাখোঁচা,
হাঁস
প্রজাতির
বিভিন্ন
পাখি
ও
অন্যান্য
জাতির
পাখি
শিকার
করে
স্বরূপনগরের
বিভিন্ন
বাজারে
বিক্রি
হয়।
ভারত-
বাংলাদেশ
সীমান্তের
দত্তপাড়া,
বাজার
ঘাটা,
বিথারি,
গোয়ালপোতা
এইসব
বাজারগুলোতে
প্রতিদিন
সকালবেলা
রীতিমত
বাজার
বসে
পাখিদের।'
বিষয়টি যে উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছেছে, তা স্বীকার করে নিয়েছে বন দফতরও।যদিও বসিরহাট মহকুমা ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার অঞ্জন বিশ্বাস মুখ খুলতে নারাজ। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে জেলা বনদপ্তর আধিকারিক বলবেন। তবে দফতরের কর্তারা এ সব এলাকার পুলিশ, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠকও করেছেন বলে অঞ্জন বাবুর দাবি।
পক্ষী বিশারদরা জানাচ্ছেন, নীল শির, লাল শির হাঁস, লেজ্জা হাঁস, ক্ষুদে গাঙচিল, রাজহাঁস, কালেম ডাহুক, ছোট সারালি এই ধরনের পাখিকে পরিযায়ী পাখি বলা হয়ে থাকে। মূলত নভেম্বর থেকে মার্চ এপ্রিল পর্যন্ত পাখিগুলি থাকে। এসময় শীতপ্রধান দেশে খাবার-দাবারের সংকট দেখা দেওয়ায় খাদ্যের সন্ধানে এবং শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে এরা হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করে শীতল অঞ্চল থেকে আপেক্ষাকৃত উষ্ণ দেশগুলিতে চলে যায়। এদেরকে অনেকে অতিথি পাখিও বলে।
পাখি বিশারদরা আরও জানান, পরিযায়ী পাখিদের একটা বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে শিকারি পাখিরা। এদের মধ্যে একটি শ্রেণি জলাশয় নির্ভর। তাই এসময় রবীন্দ্র সরোবর, সুভাষ সরোবর, কুলিক, বর্ধমানের ছাড়িগঙ্গার পাড়ে চুপি, উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক এলাকা, সাঁতরাগাছি বিল, মুকুটমণিপুরের মতো রাজ্যের একাধিক জলাশয়ে এদের প্রাচুর্য দেখা যায়। আরেকটি শ্রেণির পরিযায়ী পাখিরা লোকালয়ের আশেপাশে ভিড় করেন। বাগানে, খেতের আশেপাশে শীতে এদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়।