'তুমি আসবে বলে তাই, আমি স্বপ্ন দেখে যাই'-মহাসপ্তমীর ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরে এখন শুধুই মিলনের তিতিক্ষা
হালকা একটা সুর। মনের মধ্যে বয়ে যাওয়া আবোল-তাবোল সব স্বপ্ন। আচমকাই কিছু শব্দের 'ক্র্য়াকোফোনি'। ঘুমটা যতই পাতলা হচ্ছে ততই যেন হালকা হয়ে আসছে এসব।
হালকা একটা সুর। মনের মধ্যে বয়ে যাওয়া আবোল-তাবোল সব স্বপ্ন। আচমকাই কিছু শব্দের 'ক্র্যাকাফোনি'। ঘুমটা যতই পাতলা হচ্ছে ততই যেন হালকা হয়ে আসছে এসব। কানে আরও বেশি করে গোচর হচ্ছে পাড়ার মাইকে ক্রমাগত ভেসে আসা পুরোহিত-এর সপ্তমী পুজোর মন্ত্র। জয় নব নৃত্যং....
তিথি বলছে আজ মহাসপ্তমী। মা দুর্গার পিতৃগৃহের অন্দরে প্রবেশের দিন। শাস্ত্র ও নক্ষত্র এবং বিধির আচারের সময়কাল মেনে হয়েও গিয়েছে নবপত্রিকা স্নান। এগুলি-তো মা উমার পিতৃগৃহের অন্দরে প্রবেশের আগে শুদ্ধিকরণ। আসলে মা উমার শুদ্ধিকরণে নবপত্রিকা স্নান হলে শুরু হয়ে যায় সপ্তমীর পুজো। তারই মন্ত্রোচ্চারণ এখন মাইকে-মাইকে ভাসমান। এর মানে, যে পুজো মহাষষ্ঠীর রাতেও ছিল প্রি-সেলিব্রেশন, তাতে এখন পুজো শুরুর সিলমোহরটা লেগে গিয়েছে।
মহাসপ্তমীর মানে- পুজো এখন মূল সেলিব্রেশনে প্রবেশ করে গেছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত মা-এর বিসর্জন হয়ে প্যান্ডেলের বাতিগুলি নিবে একটা ছোট্ট পিদিমের শিখা জ্বলে না ওঠে, ততক্ষণ তো পুজো জমজমাট। সকালে বাড়়ির জম্পেশ ব্রেকফ্রাস্ট। হোয়াটসঅ্যাপ-এ স্টেটাস আপডেট। ফেসবুকে ছোট্ট করে চোখ বুলিয়ে নেওয়া। হোয়াটসঅ্য়াপ-এর ক্রমাগত টুং-টাং আওয়াজে বাড়ির সকলের বিরক্তি। বড়দের কারোর কারোর চোখটা গোল-গোল করে চেয়ে থাকা, যেন গর্হিত অপরাধ। সেকেলেদের নিয়ে একেলেদের বড্ড ঝামেলা। এরা কি আর বুঝবে হোয়াটসঅ্যাপ আর ফেসবুকের মর্ম! আরে বাবা! ওটা আছে বলেই না সমানে একে অপরের সঙ্গে চব্বিশ ঘণ্টা সেঁটে থাকা যাচ্ছে। আর পুজোর আড্ডার সোশ্যাল-মেজাজ তো ইতিমধ্যে এই দুই সোশ্যাল মিডিয়াতেও জমে উঠেছে।
দিন কয়েক আগেও যে শহরটার কয়েক কিলোমিটার যেতেও আলিস্যি লাগতো, সেই শহরটাকে আজ যেন মুঠোবন্দি মনে হচ্ছে। কত না প্ল্যান! ঘূর্ণিপাক থেকে ঘূর্ণিচক্কর। আড্ডা-আর বেদম করে দেওয়া নিজেকে। এই কটা দিন যেন আগলহীন এক দৌড়। ধরার কেউ নেই। নীল আকাশ আর মণ্ডপটা মিলে-মিশে একাকার। ব্যাকড্রপে মা-এর বিশালাকার মূর্তি, আর সমানে বেজে চলা ঢাক-এর বাদ্যি। যেন মনের মধ্যে কিসের একটা আগমনীর প্রিল্যুড।
পুজোর মজাটা ছোটবেলায় ছিল অন্যরকম। সকাল হলেই বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাপ ফাটানো, হইচই। কিন্তু, কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে পুজোর মানেটাই কেমন যেন বদলে যায়। কেমন যেন একটা পাগলামো ভর করে। এখান যেন মনে হয় না জীবনের কোনও বাঁধন আছে। নিজেকে কেমন যেন এক স্বাধীন বলে মনে হয়। আসলে বাঙালির এই পাগালামোটাই আছে বলে না কত কী আছে! দুর্গাপুজো এই পাগালামোর একদম মহাক্ষেত্র।
[আরও পড়ুন:ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে বেচাল করলেই কপালে নাচছে দুর্ভোগ, কী ব্যবস্থা পুলিশের জানেন কি]
আচ্ছা পুজোয় কি কবিতা হয়? আড্ডার মাঝপথে এমন জানতে চাওয়ায় যেন নিউক্লিয়ার বোমা ফাটার মতো পরিস্থিতি। খিস্তি থেকে খিল্লি বা সিরিয়াস উত্তরের তখন এক ককটেল। কিন্তু, মনের কোনায় ভাবনা তো আসবেই -কারণ যেখানে আশ্বিন শারদ প্রাতের মতো ভাব রয়েছে, যেখানে শিউলি ফুলের গন্ধ রয়েছে সেখানে কবিতা আসবে না তা কি করে হয় ! দুর্গাপুজোর এমন আবহ, মহাসপ্তমীর গুঞ্জন- সেখানে তো বলতেই হয় 'তুমি আসবে বলে তাই, আমি স্বপ্ন দেখে যাই, এর একটা করে দিন চলে যায়...'। আর অঞ্জন দত্তের গানের এই কয়েক ছত্রে ভিড় করে আসে কতকিছু, এবারের পুজোটা সত্যি তো স্পেশাল, কোনও না কোনও সুজয়দা, কোথাও কোনও না কোনও পুচকি রয়েছে প্রতীক্ষায়-- আশ্বিন শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকও মঞ্জরী....
[আরও পড়ুন:২০১৮ সালে দাঁড়িয়ে যেতে চান ২২১৮-য়! চলে আসুন জগত মুখার্জি পার্কে]