মোদের গরব বাংলা, ভারত-বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকার এক দেশেরও সরকারি ভাষা
বাংলা হল সেই মাতৃভাষা, যার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঝরেছিল। শহিদের রক্তে রেঙেছিল ২১ ফেব্রুয়ারি। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার সেই আন্দোলন তাই আজও অমর অক্ষরে লেখা হয়েছে। বাংলা হয়ে উঠেছে প্রাণের ভাষা।
বাংলা হল সেই মাতৃভাষা, যার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঝরেছিল। শহিদের রক্তে রেঙেছিল ২১ ফেব্রুয়ারি। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার সেই আন্দোলন তাই আজও অমর অক্ষরে লেখা হয়েছে। বাংলা হয়ে উঠেছে প্রাণের ভাষা। ১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন দামাল ছেলেরা। তাঁদের আন্দোলন বৃথা যায়নি, আজ বাংলা বিশ্বের তিনটি দেশের সরকারি ভাষা।
১৯৫২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশে রাজপথে বাংলা বাষাকে রক্ষা করার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। দেশভাগের পর সেই বাংলা হয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা। এছাড়া বাংলাদেশের বাইরে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায় ভারতে। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ ছাড়াও আরও এক দেশে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেয়েছে। তা হল আফ্রিকার সিয়েরা লিওন।
এই ভাষা-আন্দোলনই মুক্তিযুদ্ধের পথ দেখিয়েছিল বাংলাদেশকে। এই পথেই এসেছিল স্বাধীনতা। বাংলাদেশ হয়েছিল মুক্ত। পূর্ব পাকিস্তানের তকমা ঝেড়ে পেলে আদ্যান্ত বাংলাদেশে পরিণত হয়েছিল পূর্ববঙ্গ। ধর্ম নয়, বর্ণ নয়, কোনও আঞ্চলিকতা নয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল ভাষা-সংগ্রামকে পাথেয় করে। জন্ম নিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। যার সরকারি ভাষা হল বাংলা।
আর তার বেশ কিছুদিন পর ২০০২ সালে ভাষা আন্দোলনের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দিয়েছিল সুদূর আফ্রিকার এক দেশ, সিয়েরা লিওন। বাংলাকে গর্বিত করেছিল সেই দেশ। বাংলাদেশ, ভারতের সঙ্গে সিয়েরা লিওনেও বাংলা স্বীকৃতি পায় সরকারি ভাষার। বাংলার বিশ্বায়ন হয়। প্রথম ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দিয়ে সেই দেশ এপার বাংলা-ওপার বাংলা, দুই বাংলাকেই গৌরবান্বিত করে।
১০৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের আত্মসমর্পণের ফলে বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নতুন রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে বাংলাও মর্যাদা পায়। সেই বাংলা ভারতে স্বীকৃত ২৩টি দাফতরিক ভাষার অন্যতম। এ দেশে বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনসংখ্যা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। হিন্দির পরেই বাংলার স্থান ভারতে।
এ দেশে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরায় দাফতরিক ভাষা বাংলা। তার পাশাপাশি অসম, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেও দ্বিতীয় দাফতরিক ভাষা হিসেবে বাংলা স্থান পেয়েছে। বাঙালি অধ্যুষিত ঝাড়খণ্ডও দ্বিতীয় দাফতরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে বেছে নিয়েচে। কারণ এখানে বহুসংখ্যক বাঙালি রয়েছেন। ওড়িশাতেও বাংলাভাষী প্রচু মানুষ পয়েছে। সেখানেও হিন্দি-ওড়িয়ার পাশাপাশি বাংলা প্রচলিত ভাষা।
এছাড়া উল্লেখযোগ্য, পাকিস্তানেপ সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী করাচিতে ২০ লক্ষেরও বেশি বাঙালি রয়েছে। সে কারণে করাচি সিটি কর্পোরেশনের অন্যতম স্বীকৃত দ্বিতীয় ভাষা হল বাংলা। আর বাংলা রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা পেয়েছে আফ্রিকান দেশ সিয়েরা লিওনে। ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ না থাকলেও সিয়েরা লিওনে পাঁ হাজারের বেশি বাংলাদেশি সেনা মোতায়েন ছিল। তারা শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল ওদেশে। সেই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ভাষা আন্দোলনের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করে সিয়েরা লিওন।
এতদিন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে হিন্দি ও বাংলা ছিল সমান সমান অবস্থানে। ভারত ছাড়াও ফিজির রাষ্ট্রভাষা হিন্দি। আর ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা ছিল বাংলা। তার বাইরে এখন সিয়েরা লিওনেও বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পাচ্ছে। ফলে হিন্দির থেকে এগিয়ে গেল বাংলা। এছাড়া বহু দেশে বাংলা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলা ভাষা পৃথিবীর সমস্ত ভাষাগুলোর মধ্যে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে। বর্তমানে পৃথিবীর ২২৮ মিলিয়নের মানুষের প্রথম ভাষা বাংলা এবং ৩৭ মিলিয়ন লোকের দ্বিতীয় ভাষা বাংলা।