অনশন করে নিজের বিয়ে আটকাল মুর্শিদাবাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শামিমা
১৭ বছরের শামিমা পড়তে চায়। অনেক বড় হতে চায়। তাই বাবা-মা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে ঠিক করায় প্রতিবাদ জানিয়েছে সে। মালোপাড়ার কিশোরী শামিমা ভেস্তে দিতে চেয়েছে পরিবারের পরিকল্পনা।
মুর্শিদাবাদ, ১১ ফেব্রুয়ারি : সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা মুর্শিদাবাদ উন্নয়ন তো বটেই, সাক্ষরতা সহ অনেক দিকেই পিছিয়ে রয়েছে। সেই মুর্শিদাবাদের অখ্যাত মালোপাড়া গ্রামের এক অসীম সাহসী মেয়ে শামিমা সুলতানা। সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার এক কঠিন লড়াই চালাচ্ছ সে, প্রচারে আসার জন্য নয়। শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছেমতো বাঁচার তাগিদে।[প্রথমবার বিয়ের পিঁড়িতে বসা বউ ঘর করেছেন তিন স্বামীর]
১৭ বছরের শামিমা পড়তে চায়। অনেক বড় হতে চায়। তাই বাবা-মা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে ঠিক করায় প্রতিবাদ জানিয়েছে সে। মালোপাড়ার কিশোরী শামিমা ভেস্তে দিতে চেয়েছে পরিবারের পরিকল্পনা।[(ছবি) জলের তলায় আংটি বদল, বিয়ের প্রতিজ্ঞা দম্পতির, ভারতে এই প্রথম!]
কিছুতেই সে এই বয়সে খাতা-কলম ছেড়ে হাতা-খুন্তি হাতে তুলবে না। এই জেদ থেকেই অনশন শুরু করে সে। ঘটনায় তাই সাড়া দিতে বাধ্য হয় শামিমার স্কুলের শিক্ষক ও স্থানীয় প্রশাসন।[বিয়ের প্রস্তাব পেলেন বাবা রামদেব?]
বৃহস্পতিবার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল শামিমার। কিন্তু প্রতিবাদের চোটে তা ভেস্তে গিয়েছে। স্কুলে শিক্ষক ও স্থানীয় প্রশাসনের লোকেদের হস্তক্ষেপেই বিয়ে আটকেছে। এরপরে অসুস্থা শামিমাকে হরিহরপারা ব্লক প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে।[রোবটের সঙ্গে তরুণীর 'লিভ-ইন', এবার বিয়ের পালা!]
তবে শামিমার পরিবার কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারেনি। জোর করে বিয়ে দিতেই গিয়েছিল। তবে শেষপর্যন্ত পুলিশ গিয়ে গ্রেফতারের হুমকি দিতে হার মানে তারা। এই ঘটনায় মালোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র বিশ্বাস জানান, শামিমা জানিয়েছিল সে বিয়ে করতে রাজি নয়। বাবা-মা যদিও রাজি হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের সাহায্য নিতে হয়েছে।
জানা গিয়েছে, শামিমার পরিবার পেশায় রাজমিস্ত্রি নাসিম শেখের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছিল। এদিকে তার বোর্ডের পরীক্ষা ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে। দিনমজুরি করা বাবা আবেসুদ্দিন শেখ কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে।
এই ঘটনার পরে অসুস্থ শামিমা দাঁড়াতে পারছে না। হাসপাতালে যাওয়ার সময় জানিয়েছে, আমি খুশি। কতটা খুশি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির হাজার হাজার মেয়ে বিবাহযোগ্য হওয়ার আগেই তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। মুর্ষিদাবাদ, মালদহ, নদিয়ায় এরকম ভুড়ি ভুড়ি উদাহরণ রয়েছে। বিয়ের পরে এরাজ্যের পাশাপাশি মেয়েদের চলে যেতে হয় পাশের ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান ও অ্য রাজ্যগুলিতে। আর এভাবেই প্রতিবাদ না করা শামিমা সুলতানারা হারিয়ে যান নিজের জীবনের মাঝেই।