'বাপ কে গিয়ে বল...', অভিষেককে 'সংস্কৃতি' মনে করালেন শুভেন্দু
বর্তমান রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারী বনাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই জমে উঠেছে। এরইমধ্যে আজ শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে কাঁথির দইসাই মাঠে জনসভা করেন রাজ্য যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে নানা ইস্যুতে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্যত শুভেন্দুর গড়ে দাঁড়িয়ে বেনজির আক্রমণ অভিষেকের।
'বাপকে গিয়ে বল বাড়ির পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে দাঁড়িয়ে'
এদিন বক্তব্যের শুরু থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণের নিশানায় ছিলেন শুভেন্দু। অধিকারী গড়ে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুকেই যে টার্গেট করবেন অভিষেক তা স্বাভাবিকই ছিল। বক্তব্যের মধ্যে হঠাৎ করেই আক্রমণাত্বক হয়ে ওঠেন তৃণমূলের এই সেকেন্ড ইন কমান্ড। অধিকারীকে কটাক্ষ করে তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, "আমাকে বলছে এলে দেখে নেব। যদি না শোধরাও এই করবো, তাই করবো। এরপরই কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিষেক বলেন, তোর বাপকে গিয়ে বল বাড়ির পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি যা করবার কর।" শুধু তাই নয়, হিম্মত আছে কিনা সে বিষয়ে সুর চড়ান অভিষেক।
একেবারে তুই তুকারী করে যেভাবে এদিন অভিষেক বর্ষীয়ান সাংসদ তথা শিশির অধিকারীকে আক্রমণ করেছেন তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিজেপির দাবি, এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। এর থেকে বেশি অভিষেক কেন, তৃণমূলের কোনও নেতার কাছে বেশি আসা করা যায় না বলে মত বিজেপি নেতৃত্বের।বাংলার সংস্কৃতি! কটাক্ষ শুভেন্দুর
শনিবার কাঁথির মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা 'বাপ' মন্তব্যে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অভিষেকের মন্তব্যকে অনেকেই বলছেন ভাষা বিপর্যয়! যদিও অভিষেকের এহেন মন্তব্যের কয়েক ঘন্টার মধ্যে ফেসবুকে জবাব দিয়েছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি তার ফেসবুকে অভিষেকের করা মন্তব্য উল্লেখ করে লিখেছেন, "কাঁথির জনসভা থেকে বাংলার সংস্কৃতি!!" খুব ছোট জবাব কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
রাজনৈতিকমহলের মত, বারবার বিজেপি নেতাদের মন্তব্যে বাংলার সংস্কৃতি নাকি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে দাবি করে তৃণমূল। এমনকি, এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়, ওটা সংস্কৃতি নয় এভাবে বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের পালটা কটাক্ষ ছোঁড়েন তৃণমূল নেতারা। কিন্তু আজ যেভাবে মঞ্চ থেকে বাপ বলে শালীনতার মাত্রা ছাড়ালেন অভিষেক সেটা কি সংস্কৃতি? ফেসবুকের মাধ্যমে সেই বার্তাই কি এদিন তুলে ধরার চেষ্টা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিকমহল।
শুধু তাই নয়, মেদিনীপুরের মাটির সঙ্গে ঈশরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে একাধিক বিপ্লবী, মনীষীদের নাম জড়িয়ে। আজ অভিষেকের ভাষণেও একাধিক বিপ্লবী, মনিষিদের কথা উঠে এসেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে যেভাবে বাপ বলে শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়েছেন অভিষেক, তাতে এভাবেই কটাক্ষ করলেন শুভেন্দু। এমনটাও মনে করা হচ্ছে।
কোন ধরনের রাজনীতি এটা? প্রশ্ন বিজেপির
শুধু শুভেন্দু অধিকারী নয়, দলের তরফেও এহেন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। দলের মুখপাত্র তথা বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, তুই তুকারী করে শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়েছেন অভিষেক। বাংলার ভাষা, রাজনীতিকে অসম্মান করা হচ্ছে। মেদিনীপুরের মাটিকে অসম্মান করেছেন অভিষেক বলেও মনে করেন এই বিজেপি নেতা। শুধু তাই নয়, জয় প্রকাশ মজুমদারের মতে, বয়সে বড়দের তুইতুকারি করছেন এটা কোন ধরনের রাজনীতি? বড়দের দেখে কিছু এদের শেখা উচিত বলেও মনে করেন তিনি। আর দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে তা কি ঠিক? অভিষেকের এদিনের মন্তব্য বিরোধী দলের মতো। উনি ভুলে গিয়েছেন যে, এখনও শাসকদলে তাঁরা আছেন? কটাক্ষ বিজেপি সহ-সভাপতির।
ভাষা বিপর্যয়!
অনেকেই মনে করেন রাজনীতিতে ভাষা বিপর্যয় এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে কোথায়, কখন, কাকে বলা হচ্ছে তা ভুলে যাচ্ছে। তবে এই সংস্কৃতির বাংলার নয় বলেই মনে করেন বুদ্ধিজীবীদের একাংশ। আর ভোট আসলেই রাজনৈতিক নেতারা যেভাবে আক্রমণাত্বক হয়ে কু ভাষা ব্যবহার করছে তা সমাজে বিরুপ হতে পারে বলে একাধিকবার এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন নাগরিক সমাজের একাংশ।